মেসি-শঙ্কায় কাঁপছে বার্সা, বসেছে প্রার্থনায়

শনিবার রাতে নিজেদের ঘরের মাঠ ন্যু-ক্যাম্পে ২ গোলে পিছিয়ে পড়েও শেষ পর্যন্ত ভ্যালেন্সিয়ার সঙ্গে ড্র নিয়ে মাঠে ছেড়েছে বার্সেলোনা। দলকে হার থেকে রক্ষা করেছেন অধিনায়ক লিওনেল মেসি।

দলের পক্ষে ২টি গোলই করে এনে দিয়েছেন মূল্যবান একটি পয়েন্ট। কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানো ২-২ গোলের ড্র স্বস্তি ছাপিয়ে বার্সেলোনা কাঁপছে শঙ্কায়। আর বার্সার এই শঙ্কাটাও জোড়া গোলদাতা মেসিকে নিয়েই।

মেসিকে নিয়ে বার্সার এই শঙ্কার কারণ চোট। ম্যাচের ৭০ মিনিটে ডান ঊরুতে চোট পেয়েছেন মেসি। সাইড লাইনে বসে অনেকটা সময় ধরে চিকিৎসা নিতে হয়েছে তাকে। তাকে যখন সাইড লাইনে চিকিৎসা দেওয়া হয়, পুরো ন্যু-ক্যাম্প তখন শোক-শঙ্কায় স্তব্ধ। ক্লাব বার্সেলোনার নিজস্ব চিকিৎসকদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর অবশ্য ম্যাচের বাকি সময়টুকুও খেলেছেন মেসি। কিন্তু আগের মতো দৌড়াতে পারেননি।

চোট পাওয়ার আগের মেসি আর পরের মেসির মধ্যে ছিল আকাশ পাতাল পার্থক্য। আগের মেসি ছিলেন দুরন্ত, দুর্বার। পায়ের অবিশ্বাস্য মোহনীয়তায় ভ্যালেন্সিয়াকে বোকা বানিয়েছেন। দু-দুটো গোল করে গুড়িয়ে দিয়েছেন ভ্যালেন্সিয়ার জয়স্বপ্ন। আর পরের মেসি ছিলেন নিষ্প্রভ, ছন্নছাড়া। দৌড়েছেন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।

চোট কতটা গুরুতর, সেটি এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি বার্সেলোনা। পুরো ন্যু-ক্যাম্প এখন শঙ্কার মেঘে ঢাকা। কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দে থেকে শুরু ক্লাব কর্তা, সমর্থক, খেলায়াড়—সবাই মিলে বসেছে প্রার্থনায়। সবারই প্রার্থনা, মেসির চোটটা যেন গুরুতর না হয়।

মেসি চোটে এর আগেও অনেক অনেকবার পড়েছেন। পড়েছেন এই মৌসুমেও। গত অক্টোবর-নভেম্বরেই যেমন চোটের কারণে প্রায় তিন সপ্তাহ মাঠের বাইরে কাটাতে হয়েছে আর্জেন্টাইন তারকাকে। তবে তার চেয়েও এবারের শঙ্কাটা হাজার গুণ বেশি। সামনে যে ব্যস্ত সূচি বার্সেলোনার। আর সবগুলো ম্যাচই মহাগুরুত্বপূর্ণ।

আগামী বুধবারই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে কোপা ডেল রের সেমি ফাইনালের প্রথম লেগ। এরপর ১০ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি অ্যাথলেটিক বিলবাও ও রিয়াল ভাল্লাদোলিদের বিপক্ষে দুটি লিগ ম্যাচ। ১৯ ফেব্রুয়ারি ফরাসি ক্লাব অলিম্পিক লিঁও’র বিপক্ষে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোল’র প্রথম লেগ।

এরপর ২৪ ফেব্রুয়ারি শক্তিশালী সেভিয়ার বিপক্ষে লিগ ম্যাচ। তার ৩ দিন পর মানে ২৭ ফেব্রুয়ারিই আবার রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে কোপা ডেল রের সেমি ফাইনালের দ্বিতীয় লেগ। বার্নাব্যুর সেই কোপা যুদ্ধের ৪ দিন পর আবারও মুখোমুখি হবে রিয়াল-বার্সা। ২ মার্চের সেই লিগ দ্বৈরথটাও হবে রিয়ালের মাঠ বার্নাব্যুতে। ৮ দিন বিরতির পর ১০ মার্চ রায়ো ভায়েকানোর বিপক্ষে লিগ ম্যাচ। ওই ম্যাচের ঘাম শুকানোর আগেই আবার বার্সাকে নামতে হবে মাঠে। ১৩ মার্চই যে অলিম্পিক লিঁও’র বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলর দ্বিতীয় লেগ।

ফেব্রুয়ারির বাকি ক’টা দিনেই ৬টি ম্যাচ বার্সেলোনার। যার বেশির ভাগই বড় বড় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে। মৌসুমের গুরুত্বপূর্ণ এই সময়টাতেই কিনা চোট পেলেন দলের প্রাণভোমরা মেসি। বার্সার শঙ্কার, অস্বস্তির কারণটা স্পষ্টই। কাল ম্যাচ শেষে বার্সা কোচ ভালভার্দে শঙ্কাটা গোপনও করতে পারেননি।

কাতর কণ্ঠে তিনি বলেছেন, ‘আমরা এখনো নিশ্চিত করে জানি না, আসলে কী হয়েছে। চোট কতটা গুরুতর। আশা করি চোটটা কম অস্বস্তিরই হবে। দেখি চিকিৎসকরা কী বলেন। রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই পরিকল্পনা করা হবে। আসলে মেসির চোটটা বাজে, এমনটা আমি কল্পনাও করতে পারছি না।’

শুধু কোচ ভালভার্দে নন, বার্সেলোনা শিবিরের সকলের কামনা, চোট যেন হালকা হয়।