মেয়র আনিসুল হকের অনুপস্থিতির সুযোগে আবারও ফুটপাত দখল

চলতি বছর রমজানের আগেও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একাধিক জায়গায় অবৈধভাবে বসা ফুটপাতের দোকানগুলো দেখা যায়নি। উত্তরের মেয়র আনিসুল হকের চেষ্টায় নগরবাসী তখন কিছুটা হলেও শান্তিপূর্ণভাবে ফুটপাতে চলাফেরা করেছেন। তবে মেয়র আনিসুল হকের অসুস্থতার কারণে অনুপস্থিতির সুযোগে মাত্র কয়েকমাসের ব্যবধানে বেশ কয়েকটি রাস্তার ফুটপাতে আবারও দেখা উচ্ছেদ করা সেই অবৈধ দোকান। কেউ কুরবানি ঈদের পর, আবার কেউ ১৫-২০ দিন অাগে ফুটপাত দখল করে এসব দোকান বসিয়েছে।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ের দক্ষিণ বেগুনবাড়ি এলাকায় কয়েকমাস আগেও ফুটপাতমুক্ত ছিল। এ কারণে এলাকার মানুষ খুব সহজে ফুটপাত দিয়ে চলাফেরা করত। কিন্তু এখন আবার ফুটপাত দিয়ে চলাফেরা করতে আগের মতো কষ্ট হয়। ফুটপাত দখল করে চায়ের দোকান দেওয়া ইব্রাহিম বলেন: কুরবানি ঈদের পর আবার বসেছি দোকান নিয়ে। এখন তেমন কোন ঝামেলা হয় না, পুলিশও কিছু বলে না। শান্তিতে দোকান করতে পারছি।

একই সুরে কথা বলেন ফুটপাত দখল করা আরেক দোকানদার মাকসুদুর। তিনি বলেন, ১০দিন আগে ভয়ে ভয়ে ফুটপাতে বসেছি। তবে এখনও কেউ উচ্ছেদ করেনি। প্রতিদিন রাত পর্যন্ত দোকান করছি কোনো ঝামেলা হয় না।

তবে ফুটপাত দখল করে যারা ব্যবসা করছেন তাদের কোনো ঝামেলা না থাকলেও এখন সব ঝামেলা রাস্তার পথচারীদের। কেননা পথচারীদের আগের মতোই কষ্ট করে রাস্তায় চলাফেরা করতে হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে পথচারী আবদুল্লাহ বলেন, কিছুদিন আগেও ফুটপাত দিয়ে খুব নির্বিঘ্নে চলাচল করেছি, আর এখন আগের মতোই কষ্ট করতে হচ্ছে। কেন এমন হচ্ছে, জানতে চাইলে চাকুরীজীবী আবদুল্লাহ বলেন, মেয়রের অনুপস্থিতিতে অনেকেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে। কেউ কোন নিয়ম মানছে না। যে যার মত করে ফুটপাত দখল করছে। পুলিশও এক্ষেত্রে কিছুই বলে না।

কলেজ শিক্ষার্থী তানিয়া বলেন, মেয়র অসুস্থ হয়ে দেশের বাইরে রয়েছেন তার কাজগুলো এলাকার কাউন্সিলররা করতে পারেন তারা এ বিষয়গুলোতে নজর রাখলে এই সমস্যাগুলো হতো না।

দক্ষিণ বেগুনবাড়ির মত একই অবস্থা এফডিসির পাশের রাস্তার। মাছের বিক্রেতারা ফুটপাতের প্রায় সব জায়গা দখল করে মাছ বিক্রি করছেন। রাস্তার উপর অস্থায়ী খাবারের হোটেল বসিয়ে ব্যবসা করছেন। পথচারীরা রাস্তায় এবং ফুটপাতে কোনরকম ঠেলাঠেলি করে হাটছেন।

পথচারী রাশেদ বলেন, কয়েকমাস আগেও এই ফুটপাত মুক্ত ছিল। হঠাৎ করেই কিছুদিন আগ থেকে দেখেছি মাছ নিয়ে একদল মাছ বিক্রেতারা বসেছেন। রাস্তার গাড়ি আর ফুটপাত দখল কোনোরকম ভোগান্তি নিয়ে হাটতে হয়।

তবে ফুটপাত দখল নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহুল ইসলাম বলেন, মেয়র আনিসুল হকের ঢাকা উত্তরে কর্মপরিকল্পনার মধ্যে প্রধান একটি পরিকল্পনা অবৈধ ফুটপাত মুক্ত করা। যেটা তিনি খুব সুন্দরভাবে করেছেন। অনেক জায়গার ফুটপাত মুক্ত হয়েছে, অনেক জায়গায় কাজ শুরু হয়েছে।

‘মেয়রের অনুপস্থিতিতে কোন কাজের গতি থেমে নেই। তিনি থাকাকালীন যেসব কাজ চলমান ছিল সেগুলো এখনও চলমান আছে। কিছুদিন আগেও মিরপুর ১০ নম্বরের একটি খাল উচ্ছেদ করা হয়েছে। বিহারি পট্টি উচ্ছেদ করা হয়েছে। এছাড়া এলাকার নর্দমা, বর্জ্য অপসারণ করাসহ উত্তরা ও গুলশানের কাজগুলো কাউন্সিলররা দায়িত্ব নিয়ে করছেন।’

তিনি আরও বলেন, রাস্তার মেরামতের কাজ অনেকটা শেষ পর্যায়ে। বর্ষার সময় কাজ বন্ধ ছিল এখন আবার পুরো দমে চলছে। কাজের ব্যাপারে উত্তর সিটি করপোরেশন জিরো টলারেন্স। মেয়র না থাকায় উত্তরের জনগণের প্রত্যাশা কোন ব্যাঘাত ঘটিনি। মেয়র থাকাকালে ওনি নিজেই সমন্বয় কমিটি করে দিয়েছেলেন। সেই সমন্বয় কমিটিই সবকাজগুলো করে যাচ্ছে। ‘তবে কিছু সুযোগ সন্ধানী মানুষ থাকেন যারা সুযোগের আশায় বসে থাকেন সেই কাজটিই তারা করে যাচ্ছেন। ’এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা একান্ত দরকার বলে মনে করেন মেজবাহুল ইসলাম।প্রতিবেদন চ্যানেল আই অনলাইনের সৌজন্যে প্রকাশিত।