মেয়েদের ব্ল্যাকমেল করে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতো আরিফ

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জের ছাত্রলীগ নেতা আরিফ হোসেন হাওলাদার নারীদের ব্ল্যাকমেইল করে তাদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতো বলে জানিয়েছে পুলিশ। ব্ল্যাকমেল এর মাধ্যমে নারীদের সঙ্গে কাটানো অন্তরঙ্গ মুহূর্ত সে মোবাইল ক্যামেরায় ধারণ করে রাখতো। এরপর সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে বারবার অন্তরঙ্গ হতো। এভাবে দিনের পর দিন নারীদের ধর্ষণ করতো আরিফ। এতদিন বিষয়টি ধামাচাপা থাকলেও শনিবার এক ভুক্তভোগী মামলা দায়ের করেন থানায়।

আরিফের এ অপকর্মের প্রক্রিয়াটা ছিলো অভিনব। এক্ষেত্রে সে বেছে নিতো তার পরিচিত ও স্বল্প পরিচিত নারীদের, যাদের বাড়িতে সে সহজেই যাতায়াত করতে পারতো। আরিফের বাবা মিন্টু হাওলাদার গণমাধ্যমের সামনে বিষয়টি অস্বীকার করলেও এলাকার চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন তালুকদারের কাছে ছেলের অপরাধের স্বীকারোক্তি দিয়ে চেয়েছেন সমাধান।

জানা যায়, পরিচিত কোন নারীকে একা পেলেই নিজের মুঠোফোনের ক্যামেরা অন করে তার ঘরে ঢুকে পড়তো আরিফ। কথার ছলে কিছুটা অন্তরঙ্গ হলেই শুরু করতো অশ্লীল আচরণ। সেসময় ভুক্তভোগী নারী প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে শুরু হতো ধস্তাধস্তি। এক পর্যায়ে সেই ধস্তাধস্তির ভিডিও দেখিয়েই ব্ল্যাকমেল করে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতো ভুক্তভোগী নারীদের সঙ্গে।

তার এ অপকর্মের শিকার হয়েছেন গ্রামের কলেজ পড়ুয়া দুই শিক্ষার্থী, নিজের চাচাতো বোন ও প্রবাসীর গৃহবধূ। তবে লোকলজ্জার ভয়ে মুখ খুলছে না কেউ। পুলিশ বলছে, তার নামে ধর্ষণ, নারী নির্যাতন সহ আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারা ও পর্নোগ্রাফি অ্যাক্টে মামলা হবে।

বিষয়টি নিয়ে আরিফ অনেকটা নিজেই নিজের ফাঁদে পড়েছে বলে মনে করছেন পুলিশ। শরীয়তপুরের বোসাইরপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার থান্দার খায়রুল হাসান জানান: কিছুদিন আগে অাসামি আরিফ হোসেন হাওলাদার থানায় আসে একটি জিডি করতে। যেখানে সে অভিযোগ করে, কিছু লোক হিংসাপরায়ণ হয়ে তার ব্যক্তিগত তথ্য ও ভিডিও ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে।

‘এরপরই বিষয়টি অনুসন্ধানে মাঠে নামে পুলিশ। তখনই বেরিয়ে আসতে থাকে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। পুলিশের হাতে সেসময় এসে পৌঁছে ছাত্রলীগের এই নেতার ৬ জন নারীর সাথে ধারণকৃত খোলামেলা ভিডিও চিত্র। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।’

পুলিশ কর্মকর্তা খায়রুল হাসান জানান: আমাদের ধারণা, শুধু এ ৬ নারীই নয়, বরং আরও অনেকের সাথেই আরিফ এমনটা করেছে। আরিফের পাশাপাশি যে মোবাইল বা ডেস্কটপ থেকে ভিডিওগুলো ছড়ানো হয়েছে সে বিষয়েও অনুসন্ধান চালাচ্ছে পুলিশ।

‘এক্ষেত্রে সমস্যা হলো- লোকলজ্জা ও সামাজিকতার ভয়ে বিষযটি নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হচ্ছে না ভুক্তভোগী নারীদের কেউ। পুলিশ তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও বিষয়টি অস্বীকার করছেন তারা।’

তবে পুলিশের চেষ্টার ফলস্বরুপ শনিবার এ বিষয়ে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন এক ভুক্তভোগী। নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার ৯(১) ধারায় মামলা করা হয়েছে। মামলার এজাহার পড়ে স্পষ্ট বোঝা যায় আসামী আরিফের টার্গেট ছিলো পরিচিত ও স্বল্পপরিচিত নারীরা। যেসব বাড়িতে তার যাতায়াত ছিলো সেসব বাড়ির মেয়েদেরই টার্গেট করে সে। এমনই এক ভুক্তভোগীর বাড়ির গোসলখানায় ক্যামেরা রেখে দেয় সে। কৌশলে পাতার আড়ালে লুকিয়ে রাখে ক্যামেরাটি যাতে করে কারও চোখে না পড়ে। পরবর্তীতে সেই ভিডিওর জের ধরেই দিনের পর দিন সে ধর্ষণ করেছে মেয়েটিকে।

আরিফের এ ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর সংসার ভেঙ্গে যেতে বসেছে দু’ নারীর। লোকলজ্জার ভয়ে বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ করেছেন অনেকে। কেউবা আবার হয়েছেন এলাকাছাড়া।

এ বিষয়ে নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন তালুকদার বলেন: ভিডিওগুলো আমার হাতেও এসে পৌঁছেছে। এতে একাধিক নারীর সাথে আরিফের যে অনৈতিক সম্পর্ক দেখা যাচ্ছে তা খুবই ন্যাক্কারজনক। ভিডিওগুলো দেখার পর আমি ব্যক্তিগতভাবে এক ভুক্তভোগীর বাড়ি গেলে সে পুরোপুরি তা অস্বীকার করে এবং সব মিথ্যা ও অপপ্রচার বলে জানায়।

‘কিন্তু এর কয়েক ঘণ্টা পরই যখন এলাকার মানুষের হাতে ভিডিওগুলো ছড়িয়ে পড়ে তখন ওই নারীর স্বামী আমাকে বিদেশ থেকে ফোন করে এবং সব সত্য বলে স্বীকার করে। এমনকি এঘটনার পরদিনই আরিফের বাবা মিন্টু হাওলাদার আমার সঙ্গে অরিফকে নিয়ে মাজারে দেখা করেন। আরিফের দোষ স্বীকার করে এ ঘটনার মিমাংসা চান।’

এ ধরণের বিকৃতপূর্ণ আচরণের কোন ক্ষমা নেই উল্লেখ করে চেয়ারম্যান বলেন: এরকম কোন দুষ্কৃতিকারীর ঠাঁই আমার এলাকায় কখনোই হবে না। ছাত্রলীগের এই নেতাকে তিনি এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন বলেও জানান।

এলাকায় ঘটনা জানাজানির পরই দল থেকে বহিষ্কার করা হয় আরিফ হোসেনকে। সে নারায়ণপুর ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলো।

আওয়ামী লীগের থানা সেক্রেটারি মান্নান বেপারি বলেন: আরিফের বিষয়ে আমাদের কাছে এখনও কোন অভিযোগ আসেনি। তবে ফেসবুকে আরিফের কিছু অশ্লীল ভিডিও ও ছবি দেখার পরপরই চারিত্রিক স্খলনের দায়ে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর থেকেই সে এলাকা থেকে পলাতক।বিষয়টি নিয়ে আরিফ ও তার পরিবারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাদের নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।-চ্যানেল অাই অনলাইনের সৌজন্যে