যুবরাজ সালমানের বদলে সৌদির রাজা হবেন তার চাচা!

সৌদি আরবের ক্ষমতাসীন রাজপরিবারের সদস্যরা যুবরাজ সালমানের রাজা হওয়ার পথ বন্ধে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার পর আন্তর্জাতিক সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তারা এই আন্দোলন চালাচ্ছে বলে রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন সূত্র জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে।

মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্স জানায়, ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তারা সম্প্রতি সৌদি উপদেষ্টাদের জানিয়েছেন তারা কিং সালমানের উত্তরসূরি হিসেবে যুবরাজ আহমেদ বিন আব্দুলাজিজকে সমর্থন করবেন। তিনি প্রায় ৪০ বছর ধরে সৌদির উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।

আল সৌদ পরিবারের শক্তিশালী কয়েকটি শাখার কয়েক ডজন যুবরাজ এবং তাদের ভাইয়েরা রাজার উত্তরসূরির জায়গায় পরিবর্তন চায়। কিন্তু যুবরাজ সালমানের বাবা ৮২ বছর বয়সী কিং সালমান বেঁচে থাকতে তারা কোনও পদক্ষেপ নিবে না বলে জানায় সূত্রগুলি।

তবে রাজা তার প্রিয় ছেলের বিরুদ্ধেও যাবেন বলে তারা মনে করেন না, বলা হয় রয়টার্সের প্রতিবেদনে।

বরং, রাজার মৃত্যুর পর যুবরাজ সালমানের চাচা প্রিন্স আহমেদকে সিংহাসনে বসানোর বিষয়ে আলোচনা করছে পরিবারের সদস্যরা।

কিং সালমানের একমাত্র জীবিত ভাই প্রিন্স আহমেদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনী এবং পশ্চিমা শক্তিগুলোরও সমর্থন পাবেন, জানায় সৌদি সূত্রগুলো।

প্রিন্স আহমেদ বা তার মুখপাত্র রয়টার্সকে এবিষয়ে কোনও মন্তব্য দেননি।

দুই মাস বিদেশে অবস্থান করার পর প্রিন্স আহমেদ অক্টোবর মাসে রিয়াদে ফিরে যান।

সফরকালে তিনি সৌদির শাসকদের সমালোচনা করেন। লন্ডনে তার বাসভবনের বাইরে আল সৌদ পরিবারের পতন চেয়ে বিক্ষোভকারীদের শ্লোগানেরও জবাব দেন তিনি। রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের নিয়ে গঠিত অ্যালেজিয়েন্স কাউন্সিলের যে তিন জন সদস্য ২০১৭ সালে সালমানকে ক্রাউন প্রিন্স ঘোষণা করার বিরোধিতা করেছিল, তাদের একজন হচ্ছেন প্রিন্স আহমেদ।

শত শত যুবরাজ রয়েছে সৌদ রাজবংশে। ইউরোপের রাজতন্ত্রগুলোর মতো স্বাভাবিকভাবেই সেখানে বাবার বড় ছেলে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হন না। এর বদলে, প্রথা অনুযায়ী রাজা ও প্রতিটি গোষ্ঠীর পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা মিলে সবচেয়ে উপযুক্ত একজন শাসককে নির্বাচন করেন।

সৌদি সূত্রগুলো বলছে, তারা নিশ্চিত প্রিন্স আহমেদ যুবরাজ সালমানের চালু করা সংস্কার বাতিল করবেন না, বর্তমান সামরিক ক্রয় চুক্তিগুলো বহাল রাখবেন, এবং পরিবারের মধ্যে ঐক্য ফিরিয়ে আনবেন।

তবে একজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা বলছেন, যুবরাজ সালমানের নির্দেশে খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে বলে সিআইএ মন্তব্য করলেও, হোয়াইট হাউজ এখনই যুবরাজের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করতে উৎসুক নয়। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই হত্যার বিষয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেলে অবস্থা বদলে যেতে পারে।

সৌদি সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন কর্মকর্তারা শুধু খাসোগির কারণেই যুবরাজ সালমানের ওপর বেজার নন। যুবরাজ সম্প্রতি সৌদি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প হিসেবে রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কেনার কথা বিবেচনার নির্দেশ দেয়ায় মার্কিন কর্মকর্তারা তার ওপর অসন্তুষ্ট।

রয়টার্স যুবরাজের নির্দেশ সম্বলিত একটি চিঠি দেখতে পেয়েছে। যুবরাজ সালমান ১৫ মে’র ওই চিঠিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়কে রাশিয়ার শক্তিশালী এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্রসহ বিভিন্ন অস্ত্র কেনা ও সেগুলো চালানোর প্রশিক্ষণের বিষয়ে মনোযোগ দিতে অনুরোধ করেন।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও রিয়াদের কর্মকর্তারা এবিষয়ে রয়টার্সকে কোনও মন্তব্য দিতে অস্বীকার করে।

ক্ষমতায় আসার পর থেকে যুবরাজ সালমান বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার করে জনগণের মন জয় করে নেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মেয়েদের গাড়ি চালানো ও সিনেমা হল খোলার অনুমোদন।

তবে, সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিরুদ্ধ মতের দমন, দুর্নীতির অভিযোগে উচ্চপদস্থ রাজ সদস্য ও ব্যবসায়ীদের অপসারণ এবং ইয়েমেনের ব্যয়বহুল যুদ্ধও শুরু করেছেন।

যুবরাজ সালমান রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের ক্ষমতার বাইরে ঠেলে দিয়েছেন এবং সৌদির নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ওপরও একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর ফলে পুরো আল সউদ পরিবারই দুর্বল হয়ে পড়েছে।

সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র রয়টার্সকে জানায়, রাজার উত্তরসূরিতে পরিবর্তন হলে ‘সালমানের নিয়ন্ত্রণে থাকা নিরাপত্তা বাহিনী বা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কোনও বাধা দিবে না’ বলে মনে করেন জ্যেষ্ঠ অনেক যুবরাজ। কারণ, এসব সংস্থা মূলত বৃহত্তরভাবে রাজপরিবারের প্রতি অনুগত, কোনও বিশেষ ব্যক্তির প্রতি নয়।

‘তারা (নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা) পরিবারের মিলিত সম্মতি মেনে চলবে,’ জানায় সূত্রটি।

রিয়াদের কর্মকর্তারা রয়টার্সকে এ সম্পর্কে কোনও মন্তব্য দেননি।