যেভাবে ভেঙে পড়লো ইতালির পাঁচ দশকের পুরনো সেতু

ইতালির জেনোয়া শহরের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের ওপরের একটি সেতু ধসে পড়ার ঘটনায় কমপক্ষে ৩৫ জন নিহত হয়েছে। দমকল কর্মীদের বরাত দিয়ে ইতালির সংবাদমাধ্যম আনসা নিউজ এজেন্সি এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সেতুটি ধসে পড়ায় এর ওপর থাকা বেশ কিছু গাড়ি প্রায় একশো ফুট নীচে গিয়ে পড়েছে।

ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে যেসব টাওয়ারের ওপর ওই সেতুটি ছিল, ঝড়ো আবহাওয়ায় তার একটি ভেঙ্গে পড়ছে। সে কারণেই সেতুটি ধসে পড়েছে। সেতু ধসের ঘটনায় কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন এখনও নিখোঁজ রয়েছে। উদ্ধার ও তল্লাশি অভিযানে প্রায় ২শ দমকল কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। সেতু দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইতালির পরিবহনমন্ত্রী এই ঘটনাকে এক বিরাট ট্রাজেডি বলে বর্ণনা করেছেন। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে সেখানে প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। ভারী বর্ষণের সময় সেতুটি ধসে পড়ে।

পিয়েট্রো এম আলআসা নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তীব্র বজ্রপাত হচ্ছিল, তখন আমরা ব্রিজটি ধসে যেতে দেখি। সেতুটির ওপর তখন গাড়ির দীর্ঘ লাইন ছিল। অনেক ট্রাক এবং কার সেতুটির ধ্বংসস্তুপের নীচে চাপা পড়ে। সেতুর নিকটবর্তী অনেক ভবনও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানান তিনি।

শত শত উদ্ধারকর্মী ইতোমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করেছেন। মোরান্ডি নামের ওই ব্রিজটি তৈরি হয়েছিল ১৯৬০-এর দশকে। ইতালির এ-টেন মহাসড়কের ওপর এটির অবস্থান। ইতালিয়ান রিভিয়েরা এবং ফ্রান্সের দক্ষিণ উপকূলকে যুক্ত করেছে এই মহাসড়ক। ব্রিজটির যে অংশটি ধসে পড়েছে, সেটি ছিল পোলসেভেরা নদীর উপর।

যখন সেতুটি ধসে পড়ে, তখন এটির ভিত্তি মজবুত করার কাজ চলছিল। সেতুর কাঠামো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছিল।
কেন সেতুটি ধসে পড়লো তা এখনও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।

ইয়ান ফার্থ নামের এক প্রকৌশলী বিবিসিকে জানান, মোরান্ডি সেতুর ডিজাইন ছিল খুবই অভিনব। কেন এটি ধসে পড়লো তা বলা কঠিন। তবে যেহেতু রি-ইনফোর্সড কংক্রীটের ব্রিজটি ৫০ বছরের বেশি পুরনো তাই এমন হতে পারে যে এর ভেতরের কিছু জিনিস হয়তো ক্ষয়ে গিয়েছিল।

ঘটনাস্থল থেকে ইতালিয়ান সাংবাদিক ম্যাটিও পুচারেল্লি জানান, তিনি সেখানে সেতুর নীচে প্রায় বিশ-তিরিশটি গাড়ি দেখতে পাচ্ছিলেন। পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স, হেলিকপ্টার দিয়ে উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে। উদ্ধারকর্মীরা নদীতেও অনেক মানুষকে খুঁজে পেয়েছে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট এম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁ এই দুর্ঘটনায় ইতালির প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। ইতালির উপ-প্রধানমন্ত্রী ম্যাটিও স্যালভিনি বলেছেন, এই সেতু দুর্ঘটনা প্রমাণ করে যে ইতালিকে তার ব্যয় সংকোচনের চেয়ে বরং অবকাঠাামো খাতে ব্যয় বৃদ্ধিকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।