যেভাবে শুরু সাক্ষরতা দিবস | শেখ শাহাজান আলী শাহিন

সাক্ষরতা আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত মানবীয় অধিকার হিসেবে বিশ্বে গৃহীত হয়ে আসছে। এটি ব্যক্তিগত ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক ও মানবীয় উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণযোগ্য। এমনকী শিক্ষার সুযোগের বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করে সাক্ষরতার ওপর। সাক্ষরতা মৌলিক শিক্ষার ভিত্তি হিসেবেও কাজ করে। দারিদ্র্য হ্রাস, শিশু মৃত্যু রোধ, সুষম উন্নয়ন এবং শান্তি ও সমৃদ্ধি বিকশিতকরণের ক্ষেত্রেও সাক্ষরতা প্রয়োজনীয় হাতিয়ার হিসেবে গণ্য হয়। মূল কথা সবার জন্য শিক্ষা। এ স্লোগান বাস্তবায়ন করতে সাক্ষরতাকে ভিত্তি হিসেবে মনে করার পেছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে। একটি মানসম্মত মৌলিক শিক্ষা মানুষকে সাক্ষরতা ও দক্ষতার সঙ্গে তৈরি করতে সহায়তা করে। সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন মা-বাবা তাঁদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে প্রেরণে উৎসাহিত হন, অব্যাহত শিক্ষায় নিজেকে প্রবেশ করতে উৎসাহ পান এবং উন্নয়নের দিকে দেশকে ধাবিত করার ক্ষেত্রে সচেষ্ট ও সরকারকে চাপ প্রয়োগে সাহায্য করে থাকেন।

সাক্ষরতার সংজ্ঞা
দেশে দেশে সাক্ষরতার সংজ্ঞা অনেক আগে থেকে প্রচলিত থাকলেও ১৯৬৭ সালে ইউনেস্কো প্রথম সাক্ষরতার সংজ্ঞা চিহ্নিত করে এবং পরবর্তী সময়ে প্রতি দশকেই এই সংজ্ঞার রূপ পাল্টেছে। এক সময় কেউ নাম লিখতে পারলেই তাকে সাক্ষর বলা হতো, কিন্তু বর্তমানে সাক্ষর হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য অন্তত তিনটি শর্ত মানতে হয়। ব্যক্তি নিজ ভাষায় সহজ ও ছোট বাক্য পড়তে পারবে, সহজ ও ছোট বাক্য লিখতে পারবে এবং দৈনন্দিন জীবনে সাধারণ হিসাবনিকাশ করতে পারবে। এই প্রত্যেকটি কাজই হবে ব্যক্তির প্রাত্যহিক জীবনের সাথে সম্পর্কিত। সারা বিশ্বে বর্তমানে এই সংজ্ঞাকে ভিত্তি করে সাক্ষরতার হিসাব-নিকাশ করা হয়। ১৯৯৩ সালে ইউনেস্কো এই সংজ্ঞাটি নির্ধারণ করে; তবে বর্তমানে এটিও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। অনেক আন্তর্জাতিক ফোরাম বা কনফারেন্স থেকে সাক্ষরতার সংজ্ঞা নতুন ভাবে নির্ধারণের কথা বলা হচ্ছে যেখানে সাক্ষরতা সরাসরি ব্যক্তির জীবনযাত্রা পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত হবে।

কবে থেকে শুরু সাক্ষরতা দিবস
সেপ্টেম্বর ৮ ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় ১৭ নভেম্বর, ১৯৬৫ সালে। ১৯৬৬ সাল থেকে ইউনেস্কো ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। এ দিবসটি পালনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষকে তারা বলতে চায়, সাক্ষরতা একটি মানবীয় অধিকার এবং সর্বস্তরের শিক্ষার ভিত্তি। প্রতি বছর একটি বিশেষ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সে বছর সাক্ষরতা দিবস পালন করা হয়।

স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে প্রথম সাক্ষরতা দিবস উদযাপিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার সাক্ষরতা বিস্তারে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করে আসছে।

সাক্ষরতা দিবসের উদ্দেশ্য
সাক্ষরতার বহুবিধ ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। শুধু সাক্ষরতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তিই নয়; বরং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানসিক মুক্তি আনয়নের মাধ্যমে প্রাত্যহিক জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই এর লক্ষ্য। কেননা সাক্ষরতা শান্তি স্থাপনে অবদান রাখে এবং মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তা করে। শুধু তা-ই নয়, বিশ্ব সম্পর্কে ভালো ধারণা অর্জনেও সাক্ষরতা কাজ করে। যিনি লিখতে ও পড়তে পারবেন, এক মাত্র তিনিই জানবেন দেশ ও দেশের বাইরে কোথায় কী ঘটছে। এটি এমন একটি মাধ্যম, যা পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাত নিরসন এবং প্রতিরোধেও সহায়তা করে। সাক্ষরতার সঙ্গে শান্তির সম্পর্ক বা যোগাযোগ এতটাই বেশি যে অস্থিতিশীল, অগণতন্ত্রকামী এবং সংঘাতপূর্ণ দেশগুলোতে সাক্ষরতার পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত করা কিংবা বজায় রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

সাক্ষরতা দিবস ২০১৭
আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ৮ সেপ্টেম্বর। প্রতিবারের মত এ উপলক্ষে সারাদেশে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ নানা কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে।

দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘সাক্ষরতা অর্জন করি, ডিজিটাল বিশ্ব গড়ি’। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে আগামীকাল সকাল ১০টায় রাজধানীর শিল্পকাল একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন।
এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে স্মারক ডাক টিকিট অবমুক্তকরণ, ক্রোরপত্র ও স্মরণিকা প্রকাশ, পোস্টার তৈরি, শোভাযাত্রা, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে সড়কদ্বীপ সজ্জিত করণ, গোলটেবিল বৈঠিক ও টেলিভিশন টকশো আয়োজন করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক এ দিবসটি উপলক্ষে কাল সকাল সাড়ে ৯ টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শিল্পকাল একাডেমি পর্যন্ত এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। শোভাযাত্রায় শিক্ষক ও কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।