যেসব আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ

১৪ বছর আগে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের দুই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে বুধবার।

পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত অস্থায়ী ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন এ রায় ঘোষণা করবেন।

এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ঠিক করেন বিচারক।

গুরুত্বপূর্ণ এ রায়কে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারাদেশে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলটির বহু নেতা-কর্মী আহত হন।

গ্রেনেড হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকায় ৫২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ জমা দেয় পুলিশ। এর মধ্যে রাজনৈতিক ৮ জন রাজনৈতিক নেতা, ৮ জন পুলিশ কর্মকর্তা, ৫ জন সামরিক বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা এবং ৩১ জন আছেন পাঁচটি জঙ্গি সংগঠনের নেতা।

৮ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছাড়া অপর সাতজন হলেন— জামায়াত নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ (ফাঁসি কার্যকর), সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, বিএনপি নেতা হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ ও কমিশনার আরিফুল ইসলাম।

এই আট নেতার বিরুদ্ধে হত্যা এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

৮ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ

আট পুলিশ কর্মকর্তা হলেন— সাবেক আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী, সাবেক আইজিপি শহুদুল হক, সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা, সাবেক উপকমিশনার খান সাঈদ হাসান, সাবেক উপকমিশনার ওবায়দুর রহমান খান, সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সি আতিকুর রহমান ও সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার আবদুর রশীদ।

তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আওয়ামী লীগের জনসমাবেশে যথাযথ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেননি। হামলা করে জঙ্গিরা যাতে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যেতে পারে, সে ব্যাপারে তারা সহায়তা করেছেন। আর এ হামলার পর তদন্তের সময় প্রকৃত আসামিদের আড়াল করে তদন্ত ভিন্ন খাতে নিয়েছেন। নিরপরাধ ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।

কর্তব্যকাজে অবহেলার অভিযোগের সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছর।

সামরিক বাহিনীর সাবেক ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ

ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী এবং এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক আবদুর রহীমের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়।

এ অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিজিএফআইয়ের সাবেক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার এবং খালেদা জিয়ার ভাগনে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউকের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনাকারী মাওলানা তাজউদ্দীনকে বিদেশে পালিয়ে যেতে সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়।

এ অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছর।

পাঁচ জঙ্গি সংগঠনের ৩১ আসামি

পাঁচটি জঙ্গি সংগঠন হলো— হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি), লস্কর-ই-তাইয়েবা, হিযবুল মুজাহিদীন, তেহরিক-জিহাদি আল ইসলাম এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন।

পাঁচটি জঙ্গি সংগঠনের ৩১ জন নেতার বিরুদ্ধে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২২ জনকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী হুজির শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নান (অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর) এবং আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দীন।

অপর জঙ্গি হলেন— শাহদাত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, আবদুল মাজেদ ভাট, গোলাম মোহাম্মদ ওরফে জিএম, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমদ, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে ওভি, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, জাহাঙ্গীর আলম, মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহমেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, আরিফ হাসান সুমন, রফিকুল ইসলাম ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ উজ্জ্বল ওরফে রতন, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, আবু বকর ওরফে সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান, মহিবুল মোত্তাকিন, আনিসুল মোরসালিন, খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বদর, ইকবাল, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি আবদুল হাই ও রাতুল বাবু।

তদন্ত

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ১১ জুন সিআইডির এএসপি ফজলুল কবীর হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে ২২ জনকে আসামি করে আদালতে দুটি অভিযোগপত্র জমা দেন।

অধিকতর তদন্তের আসামিরা

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সিআইডি এ মামলার অধিকতর তদন্ত করে এবং ২০১১ সালের ৩ জুলাই সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়। তাতে আরও ৩০ জনকে আসামি করা হয়। তারা হলেন— তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোহাম্মদ কায়কোবাদ, খালেদা জিয়ার ভাগনে সাইফুল ইসলাম (ডিউক), এনএসআইয়ের সাবেক দুই মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুর রহিম ও মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার, ডিজিএফআইয়ের মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন ও লে. কর্নেল (বরখাস্ত) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, পুলিশের সাবেক তিন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী, সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি খান সাইদ হাসান ও মো. ওবায়দুর রহমান, জোট সরকারের আমলে মামলার তিন তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান ও এএসপি আবদুর রশিদ, হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ এবং হুজি-বির ১০ জন নেতা।

কারাগারে থাকা ৩১ আসামি

১) সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, ২) সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, ৩) ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন, ৪) মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ৫) এনএসআই মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুর রহিম, ৬) জঙ্গি শাহদাত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, ৭) মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, ৮) মো. আবদুল মাজেদ ভাট ওরফে মো. ইউসুফ ভাট, ৯) আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ ওরফে জিএম, ১০) মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আবু উমর আবু হোমাইরা ওরফে পীর সাহেব, ১১) মাওলানা সাব্বির আহমদ ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, ১২) মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, ১৩) মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে ওভি, ১৪) মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, ১৫) আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, ১৬) মো. জাহাঙ্গীর আলম, ১৭) হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, ১৮) হোসাইন আহমেদ তামিম, ১৯) মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে খাজা ওরফে আবু জানদাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ, ২০) আরিফ হাসান ওরফে সুজন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, ২১) মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে শামিম ওরফে রাশেদ, ২২) মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন, ২৩) হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া ও আবু বক ওরফে হাফে সেলিম হাওলাদার, ২৪) লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, ২৫) সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, ২৬) সাবেক আইজিপি শহুদুল হক, ২৭) সাবেক আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী, ২৮) তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, ২৯) সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, ৩০) এএসপি আবদুর রশীদ ও ৩১) সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম।

ফাঁসি কার্যকর

১) জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, ২) জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও ৩) শহিদুল আলম বিপুল।

পলাতক ১৮ আসামি

১) তারেক রহমান, ২) হারিছ চৌধুরী, ৩) মাওলানা মো. তাজউদ্দীন, ৪) মহিবুল মোত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, ৫) আনিসুল মোরসালিম ওরফে মোরসালিন, ৬) মো. খলিল, ৭) জাহাঙ্গীর আলম বদর ওরফে ওস্তাদ জাহাঙ্গীর, ৮) মো. ইকবাল, ৯) লিটন ওরফে মাওলানা লিটন ওরফে দেলোয়ার হোসেন ওরফে জোবায়ের, ১০) কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, ১১) মো. হানিফ, ১২) মুফতি আবদুল হাই, ১৩) রাতুল আহম্মেদ বাবু ওরফে বাবু ওরফে রাতুল বাবু, ১৪) লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার, ১৫) মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ১৬) ডিআইজি খান সাঈদ হাসান (সাবেক ডিসি পূর্ব) ১৭) পুলিশ সুপার মো. ওবায়দুর রহমান খান ও ১৮) মুফতি শফিকুর রহমান।