যেসব যুক্তিতে চাকরির বয়স ৩৫ না করার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর না করার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তিনটি বিসিএস পরীক্ষার ফলাফল তুলে ধরেন। সেখানে দেখা যায় ২৩ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে যারা পরীক্ষা দেয় তাদের পাসের হার ৪০-এর ওপরে আর ২৯ বছরের পরে যারা পরীক্ষা দেয় তাদের পাসের হার ৩ শতাংশের মতো।

তিনি বলেন, ৩৫ বছর হলে কি অবস্থা হবে, হয়তো পাসের জন্য কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ফলে এ ব্যাপারে তিনি নিরুৎসাহিত করেন।

সোমবার গণভবনে চীন সফরের পর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন শিক্ষার্থী ১৬ বছরে এসএসসি পাস করে। এইচএসসি ও অনার্স-মাস্টার্স করতে আরও ৭ বছর। সব মিলে ২৩ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে একজন শিক্ষার্থী মাস্টার্স পাস করে বের হয়। ২৩ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত বিসিএস পরীক্ষায় ভালো করতে পারে। এরপর যারা পরীক্ষা দেয় তারা ভালো করতে পারে না। সুতরাং চাকরির ক্ষেত্রে ৩৫ বছর করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা দেশবাসী বিচার করবে।

৩৫তম বিসিএসের ফল প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২৩ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে যারা বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে, তাদের পাসের হার হলো ৪০ দশমিক ৭ ভাগ, ২৫ থেকে ২৭ বছর যাদের বয়স, তাদের পাসের হার হলো ৩০ দশমিক ২৯ ভাগ। ২৭ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের পাসের হার হলো ১৩ দশমিক ১৭। ২৯ বছরের বেশি বয়সীদের পাসের হার ৩ দশমিক ৪৫ ভাগ।’

৩৬তম বিসিএসের ফল প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২৩ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের পাসের হার ৩৭ দশমিক ৪৫ ভাগ। ২৫ থেকে ২৭ বছর বয়সীদের পাসের হার ৩৪ দশমিক ৭৮ ভাগ। ২৭ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের পাসের হার ১৪ দশমিক ৮৯ ভাগ। ২৯ বছরের বেশি বয়সীদের পাসের হার ৩ দশমিক ২৩ ভাগ।’

৩৭তম বিএসএসের ফল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘২৩ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের পাসের হার ৪৩ দশমিক ৬৫ ভাগ। ২৫ থেকে ২৭ বছর বয়সীদের পাসের হার ২৩ দশমিক ৩৫ ভাগ। ২৭ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের পাসের হার ৭ দশমিক ২০ ভাগ। ২৯ বছরের বেশি বয়সীদের পাসের হার ০ দশমিক ৬১ ভাগ।’

বিসিএসের তিন পর্বের ফল বিশ্লেষণ করে শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেন, ‘কোনটা গ্রহণ করব এখন বলুন। আমি আর কিছু বলতে চাই না, আমি কেবল হিসাবটা দিলাম। চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ পর্যন্ত করলে অবস্থাটা কী দাঁড়াবে, আমাকে একটু বুঝিয়ে বলুন। কারণ তখন তো বিয়েশাদি হবে, ছেলে-মেয়ে হবে, ঘর সামলাতে হবে, বউ সামলাতে হবে আর বই কিনতে হবে। তখন তো আরও করুণ অবস্থা হয়ে যাবে। কাজ করার একটা সময় থাকে। একটা এনার্জি থাকে। এই যে একটা দাবি তোলা, এখন দাবি তোলার জন্য যদি দাবি তোলা হয়, আমার কিছু বলার নেই। এই দাবি তোলার জন্য কোনও না কোনও জায়গা থেকে নিশ্চয় কোনও প্রেরণা পাচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৩৫ বছর বয়সে পরীক্ষা দিলে এর রেজাল্ট, ট্রেনিং, ট্রেনিং শেষ হতে যদি আরও দুই বছর লাগে, তাহলে ৩৭ বছর গেলো। ৩৭ বছরে চাকরি হলে কী হবে? চাকরির বয়স কিন্তু ২৫ বছর না হলে ফুল পেনশন পাবে না। ঠিক আছে, পেনশন না পেলো। তাহলে একটা সরকার কাদের দিয়ে চালাবো? আমরা সবসময় বলি, যারা মেধাবী, তরুণ, কর্মক্ষম তাদের দিয়েই তো আমাদের দেশের উন্নয়ন কাজ করবো। কিন্তু বয়স বাড়লে তো কাজের গতিও কমে। এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। যাই হোক, আমি শুধু হিসাবটাই দিলাম, দেশবাসী বিচার করুক, আপনারও বিচার করুন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একসময় ছিল প্রাচ্যের অক্সফোর্ড, আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একসময় ঐতিহ্য ছিল। কিন্তু ’৭৫-এ জাতির পিতাকে হত্যার পর আমরা কী দেখেছি? একটা শ্রেণি নেমে গেলো অস্ত্র হাতে। গুলি-বোমা-অস্ত্রের ঝনঝনানি ছাড়া আর কিছুই শোনা যেতো না। সেশনজট তো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল। আমরা আসার পর ধীরে ধীরে সে অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়েছি।’

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।