যে কারণে গান ছেড়ে দিয়েছিলেন শাহনাজ রহমতুল্লাহ

‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’। শাহনাজ রহমতুল্লাহকে যেতে দেয়া হলো তবে সোনার গাঁয় নয় তিনি গেলেন বিধাতার সান্নিধ্যে।

না ফেরার দেশে চলে গেলেন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ। শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।

শাহনাজ চলে গেলেও রয়ে গেছে তার মধুঝরা কণ্ঠের কালজয়ী গানগুলো।

দীর্ঘ ৫০ বছর গান গেয়েছেন শাহনাজ রহমতুল্লাহ। বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০ বাংলা গানের তালিকায় শাহনাজ রহমতুল্লাহর গাওয়া গানই চারটি।

তিনি চলে গেলেও তার ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল’, ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’ কালজয়ী গানগুলো শতাব্দীর অস্তিত্ব পর্যন্ত টিকে থাকবে।

কিন্তু বছর পাঁচেক আগে হঠাৎই গান ছেড়ে দিয়েছিলেন এ কিংবদন্তি শিল্পী। গণমাধ্যমে ছিলেন অনুপস্থিত।

তার অনুপস্থিতিতে শ্রোতা ও ভক্তদের মন বারবারই উচাটন হয়ে উঠেছিল। আর সে জন্যই তার খোঁজ নিতে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে স্বনামধন্য সংবাদমাধ্যমের এক গণমাধ্যমকর্মী গিয়েছিলেন তার বাসায়।

সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন যে, ধর্ম-কর্মে বেশ মনোযোগী হয়েছেন কিংবদন্তি এ শিল্পী। তাই এসবে সময় হয়ে উঠছে না তার।

হঠাৎই গানের ভুবন থেকে নিজেকে কেন সরিয়ে নিলেন গণমাধ্যমকর্মীর এমন প্রশ্নে সেদিন তিনি জানিয়েছিলেন- আমার নামাজ পড়েই সময়টা বেশ কাটছে। ওমরাহ করে আসার পর দিন থেকেই আর গান করতে ইচ্ছা করেনি। তখন আমি নামাজ পড়া শুরু করেছিলাম।

তিনি আরও জানিয়েছিলেন, পবিত্র কাবা, মহানবী (সা.)-এর রওজা শরিফ দেখে আসার পর থেকে পার্থিব বিষয়ে আগ্রহী নন তিনি। বাকিটা জীবন সৃষ্টিকর্তার কৃতজ্ঞতায় প্রার্থনা করেই কাটাতে চান।

এ সময় এখনকার গান কেমন হচ্ছে সে বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান তিনি। টিভি দেখেন না, রেডিও শোনেন না তিনি।

তা হলে সময় কাটে কীভাবে প্রশ্নে তিনি জানিয়েছিলেন, ভোর ৪টায় ঘুম থেকে ওঠে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়েন। ফজর পর্যন্ত জায়নামাজে অপেক্ষা করতে থাকেন। ওয়াক্ত হলে ফজর পড়ে কোরআন শরিফ পড়া শুরু করেন।

একজন হুজুর বাসায় এসে পবিত্র কোরআন শিখিয়ে যান বলে জানিয়েছিলেন তিনি। এভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজসহ আরও কিছু ধর্মীয় কাজ সারেন।

এশার নামাজ শেষে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়েন যেন পরবর্তী দিনে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে জাগতে পারেন।

গানকে মিস করেন না এমন প্রশ্নে তিনি জানিয়েছিলেন, পঞ্চাশ বছরের ওপরে তো গেয়েছি, পৃথিবী দেখেছি, শো করতে দেশ-বিদেশ ঘুরেছি। আমেরিকাতেই ২০ বার গেছি। আর কত গাইব?

সেদিন তিনি জানিয়েছিলেন, এখন হজে যাওয়াই মূল লক্ষ্য। হাঁটুতে ব্যথার কারণে হাঁটতে পারছেন না জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, একটু সুস্থ হলেই আমার স্বামী আমাকে হজে নিয়ে যাবেন। তিনি হজ করেছেন। এখন তিনি তাবলিগ করছেন।

গানের জগত থেকে নিজেকে আড়াল করে নিলেও শ্রোতাদের ভালোবাসাকে জীবনের সেরা প্রাপ্তি বলে উল্লেখ করেছিলেন তিনি। তার কণ্ঠে দেশাত্ববোধের গানগুলো হৃদয়ে বেশ নাড়া দেয় বলে জানিয়েছিলেন শাহনাজ রহমতুল্লাহ।