যে কারণে জন্ম নিয়ন্ত্রণে আগ্রহী নয় রোহিঙ্গা নারীরা

মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষদের জন্ম নিয়ন্ত্রণের আওতায় নিয়ে আসার কাজ করছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর। এজন্য কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অলিগলিতে দুই শতাধিক কর্মী রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের মধ্যে সচেতনা সৃষ্টি ও জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে অবহিত করছে। কিন্তু রোহিঙ্গা নারী-পুরুষরা জন্ম নিয়ন্ত্রণে আগ্রহী নয়।

রোহিঙ্গা নারীরা বলেন, মিয়ানমারে জন্ম নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যবস্থা নেই। বিষয়টি আমরা জানি না। এজন্য কোনও চিকিৎসা সেবাও পাইনি। কিন্তু বাংলাদেশে আসার পর জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি সম্পর্কে জানতে পারি। অনেকে আগ্রহী হলেও স্বামীরা তা মানতে নারাজ। আবার অনেক ক্ষেত্রে স্বামীরা উদ্যোগী হলেও স্ত্রীরা এতে আগ্রহী নয়।

রোহিঙ্গা নারী জরিনা বেগম, মরিয়ম খাতুন বলেন, আল্লাহ যদি কোনও সন্তান দেন, এতে বাধা দেওয়া গুনাহের কাজ। তাই ওষুধ সেবন করার প্রয়োজন নেই। আমাদের মিয়ানমারে এসব কিছু নেই।

জন্ম নিয়ন্ত্রণে অনীহার কারণে রোহিঙ্গা পরিবারে একাধিক শিশুরোহিঙ্গা যুবক আব্দুল শুক্কুর ও ফরিদ আলম বলেন, বাংলাদেশে আসার পর থেকে ডাক্তাররা আমাদেরকে জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে অনেকবার বলেছেন। কিন্তু আমাদের স্ত্রী রাজি হচ্ছে না। আমরা তাদের বোঝাতে চেষ্টা করছি।

জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা নারী পুরুষের জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে ধারণা না থাকায় রাখাইনে জনসংখ্যার হার অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় একটু বেশি। প্রতিটি পরিবারে পাঁচ থেকে ১০টি সন্তান রয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে এই সংখ্যা আরও বেশি। এ কারণে বাংলাদেশের তুলনায় রোহিঙ্গা পরিবারগুলোতে শিশুর সংখ্যা অনেক বেশি। ইতিমধ্যে অনেক রোহিঙ্গা নারী গর্ভবতী অবস্থায় রয়েছে। ফলে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শিশুর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষদের জন্ম নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনতে কাজ করছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর।

জন্ম নিয়ন্ত্রণে অনীহার কারণে রোহিঙ্গা পরিবারে একাধিক শিশুকক্সবাজার পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর সূত্র জানায়, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্ম নিয়ন্ত্রণের আওতায় নিয়ে আসতে সরকার তিনটি পদ্ধতিতে এগোচ্ছে। সেগুলো হলো তিন মাস মেয়াদী ইনজেকশন, জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি ও কনডম। এজন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণসহ অন্যান্য চিকিৎসা সেবা প্রদানে সাতটি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। ২০০ জন কর্মী বিভিন্ন ক্যাম্পে গিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে অবহিত করছে।

রোহিঙ্গা পরিবারে একাধিক শিশুকক্সবাজার পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের উপ-পরিচালক ডা. পিন্টু কান্তি ভট্টাচার্য বলেন, গত ২৫ আগস্টের পর থেকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা গর্ভবর্তী নারীর সংখ্যা ২৫ হাজারের অধিক। এর মধ্যে সাত শতাধিক শিশু জন্ম নিয়েছে এবং সদ্য সন্তান প্রসব করবে এমন নারীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। এ কারণে রোহিঙ্গা নারী পুরুষদের জন্ম নিয়ন্ত্রণের আওতায় নিয়ে আসতে ইনজেকশন, খাবার বড়ি এবং কনডম সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে ক্যাম্পে চালানো হচ্ছে জন্ম নিয়ন্ত্রণ প্রচারণা।