যে পরিকল্পনায় পাহাড় টপকেছে বাংলাদেশ

মুশফিকুর রহিমের জয়সূচক রানটির পরই সাইডবেঞ্চ থেকে দৌড়ে মাঠে ঢুকে পড়লেন বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়েরা। মুশফিককে ঘিরে উদ্‌যাপনের প্রথম পর্বটা সেরে ফেলা হলো উইকেটের পাশেই। ম্যাচ শেষে দুই দলের খেলোয়াড়েরা হাত মিলিয়ে সৌজন্য বিনিময় করলেন বটে, তবে সেটি সার বেঁধে নয়, বিচ্ছিন্নভাবে।

কাল প্রেমাদাসায় বাঁধনহারা উদ্‌যাপনের কারণও ছিল। হন্যে হয়ে একটা জয়ের খোঁজে থাকা বাংলাদেশ অবশেষে যে সেটির দেখা পেয়েছে। সেটিও আবার প্রতিপক্ষের মাঠে, রেকর্ড গড়ে! এর আগে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ১৬৩ রান তাড়া করার রেকর্ড ছিল, দেশের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। যে দলের কখনো ২০০ দূরে থাক, ১৯০-১৮০, এমনকি ১৭০ রান তাড়া করারও রেকর্ড নেই, তারাই কিনা কাল ২১৪ রান টপকে গেল!

দেশের মাঠে টানা সিরিজ হারের ধকল নিয়ে বাংলাদেশ পা রেখেছিল কলম্বোয়। ভারতের কাছে হেরে নিদাহাস ট্রফির শুরুটাও ভালো হয়নি। ঘিরে ধরা বিষম চাপ নিয়ে রানের পাহাড় টপকানোর চ্যালেঞ্জ, কীভাবে সেটি উতরে গেল বাংলাদেশ? ম্যাচের পর তামিম ইকবাল এসেছিলেন সংবাদ সম্মেলনে। বাঁহাতি ওপেনারের চোখে দেখে নিন ম্যাচের নানা বাঁক…

ইনিংস বিরতিতে যে কথা হয়েছিল
‘২১৫ অনেক বড় স্কোর। দলের সবাই বিশ্বাস করেছে, আমরা যদি পাওয়ার প্লে কাজে লাগাতে পারি আর সেটা যদি ইনিংসের মাঝের ওভারগুলোয় টেনে নিয়ে যেতে পারি, যেকোনো কিছুই হতে পারে। আমরা সেটাই আলোচনা করেছি। আমি-লিটন (দাস) পাওয়ার প্লে কাজে লাগিয়েছি। মাঝের ওভারগুলোতে সৌম্য (সরকার), মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ যেভাবে ব্যাটিং করেছে, অসাধারণ! ওপরের ছয় ব্যাটসম্যান অনেক ভালো করেছে বলেই ২০০ রান তাড়া করা সম্ভব হয়েছে।’

২২ গজের পরিকল্পনা
‘আমি-লিটন বলছিলাম, ক্রিকেটিং শট খেলতে থাকি। উইকেট এতটাই ভালো ছিল, বেশি জোরাজুরি করলেই বল ব্যাটে লাগে না। যদি ক্রিকেটিং শট খেলেন, অনেক সুযোগ আসবে। আউট ফিল্ড এত ভালো, ফিল্ডারদের একটু বিট করলেই চার হয়ে যায়। সেদিক থেকে আমরা প্রথম ৬ ওভার কাজে লাগাতে পেরে অনেক খুশি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ইনিংসের মাঝের ওভারগুলো। প্রতি ওভারেই একটা বাউন্ডারি দরকার ছিল। ওভারে ৮-৯-১০ করে দরকার ছিল। ওই সময় মুশফিক অসাধারণ ব্যাটিং করেছে। ১০-১২ বছরের অভিজ্ঞতা সে কাজে লাগিয়েছে।’

বাংলাদেশি ব্র্যান্ডের ক্রিকেট
‘আমাদের হয়তো বড় পাওয়ার হিটার নেই, তবে আমরা বাংলাদেশি ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলতে পারি। আমাদের (মহেন্দ্র সিং) ধোনি নেই যে সাতে নেমে ম্যাচ শেষ করে আসতে পারে। আমাদের ক্রিস গেইল নেই যে প্রথম বল থেকেই ম্যাচ কেড়ে নিতে পারে। তবে আমাদের স্মার্ট ক্রিকেটাররা আছে। আমরা ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অনুসরণ করতে পারি না। তাদের খেলোয়াড়দের ধরন একরকম, আমাদের আরেক রকম। এই জয়টা আমাদের অনেক আত্মবিশ্বাস দেবে। আমাদের কখনো ২০০ রানের ওপরে তাড়া করার রেকর্ড ছিল না। এখন থেকে খেলোয়াড়েরা অন্তত বিশ্বাস করবে, ১৮০ বা ২০০ তাড়া করতে পারি। সব সময়ই চার-ছক্কা মারতে হবে, তা নয়। ইনিংসের মাঝের ওভারগুলো অনেক সিঙ্গেল নেওয়া যায়, বাউন্ডারি আসবেই।’

বেঙ্গালুরুর-ভূত তাড়ানো
‘যে ব্যাটসম্যান বেঙ্গালুরুতে (২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে) ভুল করেছিল, আজ (কাল) সে সেটি করেনি। ভালো খেলুন কিংবা খারাপ, একজন ব্যাটসম্যানের শেখার অনেক কিছু থাকে। এটা ভালো দিক, খারাপ ম্যাচ থেকে শিখে একটা ম্যাচে আমরা অন্তত কাজে লাগিয়েছি। ওই সময় মুশফিককে যেভাবে সমালোচনা করা হয়েছিল, আজ একইভাবে তাকে প্রশংসা করা উচিত।’

যেতে হবে আরও সামনে
‘সাপোর্টিং স্টাফ বলেন, ম্যানেজমেন্ট, আমরা খেলোয়াড়েরা, সবাই চাচ্ছিলাম ভালো করতে। চাচ্ছিলাম একটি ম্যাচ যেন জিতি। সবাই চেষ্টা করছিল, যে করেই হোক একটা ম্যাচ জিততে হবে। গত সিরিজের পর আমরা খুব হতাশ ছিলাম। আমরা মনে করি না যে আমরা এতটা খারাপ দল, যেভাবে খেলছিলাম। এখানেও প্রথম ম্যাচটা ভালো করিনি। দলের জন্য খুব দরকার ছিল জয়টি। এই জয় আমাদের অনেক আত্মবিশ্বাসী করবে।’