আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে স্টিয়ারিং কমিটি

যৌথভাবে নেতৃত্ব দেবেন বি চৌধুরী-ড. কামাল-মির্জা ফখরুল

‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যকে’ এগিয়ে নিতে একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করেছে অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট এবং ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। দুই জোটের শরিক দলগুলোর সাত নেতাকে নিয়ে গঠিত এই কমিটি যৌথভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি প্রণয়নসহ সাংগঠনিক বিষয়াদি দেখভাল করবে।

কমিটির সদস্যরা হলেন- গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্যসচিব আ ব ম মোস্তফা আমিন এবং নাগরিক ঐক্যের ডা. জাহিদুল ইসলাম।

সোমবার সন্ধ্যায় ড. কামাল হোসেনের মতিঝিলের চেম্বারে অনুষ্ঠিত যুক্তফ্রন্ট এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার শীর্ষনেতাদের যৌথসভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠকে যুক্তফ্রন্ট এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ঘোষিত পাঁচ দফা দাবি এবং আরও নয় দফা লক্ষ্য বাস্তবায়নে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যকে’ এগিয়ে নিতে জেলা-উপজেলায় কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়ার জন্য বলা হয়।

এ ছাড়া বিএনপির সঙ্গে কিছু মৌলিক বিষয়ে ঐক্যের উদ্যোক্তাদের বোঝাপড়া চূড়ান্ত করা এবং আগামী দিনের কর্মসূচিতে তাদের কীভাবে যুক্ত করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা হয়। সিদ্ধান্ত হয়, এ ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে আবারো বৈঠকে বসার। এ জন্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

বিশিষ্ট আইনজীবী, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছাড়াও এই বৈঠকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিকক দলের- জেএসডি সভাপতি আসম আবদুর রব, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ডা. জাহিদুর রহমান, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার কেন্দ্রীয় নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহম্মেদ, গণফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা আওম শফিকউল্লাহ, মোস্তাক হোসেন প্রমুখ অংশ নেন।

সূত্র জানায়, ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যে’র ব্যানারেই আপাতত পথ চলবে যুক্তফ্রন্ট এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। সমঝোতার বিষয়টি চূড়ান্ত হলে বিএনপিসহ আরও কিছু বাম-প্রগতিশীল ঘরানার দল সরাসরি যুক্ত হবে এই ঐক্যে। যার সূচনা হয় গত ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া আয়োজিত নাগরিক সমাবেশ থেকে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারবিরোধী দলগুলোর বৃহত্তর ঐক্যের আনুষ্ঠানিক যাত্রা এদিন থেকে শুরু হলেও এর চূড়ান্ত রূপ নেবে বিএনপির সঙ্গে আরও আলাপ-আলোচনার পর।

এ নিয়ে বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া- এই তিন পক্ষের মধ্যে বৈঠকের উদ্যোগ নেয়া হবে। এরপর চূড়ান্ত ঘোষণা আসবে।

জানতে চাইলে ঐক্য গড়ে তোলার মধ্যস্ততাকারী গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সোমবার বলেন, যুক্তফ্রন্ট এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া যৌথভাবে ইতিমধ্যে পাঁচ দফা দাবি এবং নয় দফা লক্ষ্য ঘোষণা করেছে। বিএনপির পক্ষ থেকেও বেশকিছু দাবিদাওয়া তুলে ধরা হয়েছে। বেশিরভাগ ইস্যুতেই তিন পক্ষ একমত। তবুও আরও আলাপ-আলোচনা হবে। তিন পক্ষের মধ্যে সমঝোতার বিষয়টি চূড়ান্ত হলে একটি অভিন্ন দাবিদাওয়া দেশবাসীর সামনে উপস্থাপন করা হবে।

তিনি আরও বলেন, যুক্তফ্রন্ট এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার দাবি মেনে নিয়ে জামায়াতকে বাইরে রেখেই জোট হবে। এক্ষেত্রে জায়াতেরও আপত্তি নেই। বিএনপিরও আপত্তি নেই।

জানা গেছে, যুক্তফ্রন্ট এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার বৈঠকে নেতৃত্ব নিয়েও আলোচনা হয়। এক্ষেত্রে যৌথভাবে দুই জোটের নেতৃত্ব দেবেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা হলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তিনজন মিলে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের নেতৃত্ব দেবেন।

এ সময় ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’ এবং ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’- এই নাম দুটি প্রায় একই রকম হওয়ায় জনমনে বিভ্রান্তি দূর করতে সরকারবিরোধী দলগুলোকে নিয়ে একটি ‘নয়া জোট’ গঠন এবং এই জোটের নতুন নামকরণ নিয়েও আলোচনা হয়। তবে বৈঠকে উপস্থিত দুপক্ষের বেশির ভাগ নেতা বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য নামটিই বহাল রাখার পক্ষে মত দেন।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের- জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন বলেন, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের যাত্রা শুরু হলেও এর কোনো সাংগঠনিক কাঠামো এখনো দাঁড় হয়নি। ঐক্যবদ্ধভাবে পথ চলতে হলে একটি সাংগঠনিক কাঠামো প্রয়োজন। এছাড়াও কর্মসূচি প্রণয়ন, সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করাসহ নানা কাজেই এটি দরকার। বৈঠকে আমরা প্রথমে এ কাজটি করেছি। এছাড়াও কিছু কর্মসূচি ঠিক করেছি।

তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে আরও কিছু বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা বাকি আছে। তাদের সঙ্গে আমরা বসব। আমরা আমাদের কথা বলব। তাদের কথাও শুনব। তিন পক্ষ একমত হলে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করব।’

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার উদ্যোগে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর ‘নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকারের অপরিহার্যতা’ শীর্ষক একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে।

রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের পাশাপাশি বুদ্ধিজীবীদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

এছাড়াও ঢাকার বাইরে রাজশাহী, সিলেট এবং ময়মনসিংহে পৃথক তিনটি জনসভা করার সিদ্ধান্ত আগেই নেয়া আছে। এর সঙ্গে চাঁদপুরকেও যুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার পাশাপাশি যুক্তফ্রন্টের নেতারাও এসব কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকবেন। বিএনপির নেতারা এসব কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকবেন কিনা- তা আলোচনা করে ঠিক করা হবে।