রাখাইনের নির্যাতন আইয়ামে জাহেলিয়াকেও হার মানায় : জর্ডানের রানী

জর্ডানের রানী রানিয়া আল আবদুল্লাহ বলেছেন, নিজ দেশে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যা ঘটেছে তা অমানবিক। নির্যাতনের বর্ণনা মতে এটি আইয়ামে জাহেলিয়াকেও হার মানায়। তাই ন্যায় বিচারের স্বার্থে বিশ্ববাসীর উচিত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানো। জর্ডান নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের পাশে রয়েছে এটি জানাতে আমি এখানে এসেছি।

রাখাইনে সে দেশের সেনাদের চালানো পাশবিকতায় বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে বক্তব্য দিতে গিয়ে জর্ডানের রানী এসব কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, তথ্যমতে কক্সবাজারের এ এলাকায় এখন স্থানীদের চেয়ে আশ্রিতের সংখ্যা দিগুণ। এতে বোঝা যায় নিজেদের নানা দিকে ক্ষতির পরও নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। যা বিশ্ব দরবারে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

তিনি নিপীড়িত মানবতা রক্ষায় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে সবার প্রতি অনুরোধ করে বলেন, আশ্রিতদের অধিকাংশই নারী-শিশু ও বৃদ্ধ। জাতিসংঘের উচিত এদের বিশেষ যত্ন নেয়া। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসনে নিরলস কাজ চালাতে জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

সোমবার বেলা ১২টা ৩৫ মিনিটে জর্ডানের রানী উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছান। এরপর তিনি রোহিঙ্গা বস্তি ও আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক এনজিও পরিচালিত স্কুলগুলো পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে খেলে তাদের আনন্দ দেন।

এরপর তিনি ১২টা ৫৫ মিনিটের দিকে ক্যাম্পে তৈরি মঞ্চে উঠে উপস্থিত সবার উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। নয় মিনিটের বক্তব্য শেষে তিনি মঞ্চ থেকে নেমে সোজা গাড়িতে বসেন। তার গাড়ি বহর ১টা ১৫ মিনিটের দিকে কক্সবাজারের দিকে রওনা হয়।

এর আগে বেলা ১১টা ০৯ মিনিটে তাকে বহনকারী বিমান কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছে। এরপর তার গাড়ি বহর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের উদ্দেশে রওনা দেয়।

তার আগমন উপলক্ষে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সহ আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য। ফলে কক্সবাজার শহর ও কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। একই অবস্থা ছিল মেরিন ড্রাইভ সড়কেও।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানিয়েছেন, জর্ডানের রানীর কক্সবাজার আগমন উপলক্ষে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। পুলিশ, বিজিবির পাশাপাশি সাদা পোশাকেও আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল।

রানী রানিয়া আল আব্দুল্লাহ কুতুপালং ক্যাম্পে পৌঁছে রোহিঙ্গাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি জাতিসংঘের একাধিক সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ত্রাণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন, পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেনসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা এবং রাণীর সফরসঙ্গীরা তার সঙ্গে ছিলেন।

উল্লেখ্য, জর্ডানের রানি রানিয়া আবদুল্লাহ ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির (আইআরসি) একজন বোর্ড সদস্য। একইসঙ্গে তিনি জাতিসংঘের মানবিক সংস্থাগুলোর পরামর্শক।