রাখাইনে নতুন সেনা অভিযান, ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নতুন সেনা অভিযানের জের ধরে কয়েক মাস বিরতির পর সেখানকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ফের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ শুরু করেছে। মাস চারেকের বিরতির পর গত দু-তিন দিনে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে আসছে। গতকাল মঙ্গলবার আমাদের টেকনাফ প্রতিনিধি লেদা ও কুতুপালংয়ের মিয়ানমারের অনিবন্ধিত নাগরিকদের শিবিরের আশপাশে খোঁজ নিয়ে প্রায় ২০০ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের খবর নিশ্চিত করেছেন।

তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের নতুন সেনা সমাবেশের কারণে বিজিবির উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে। সাধারণত এ ধরনের সেনা উপস্থিতি বাড়ার পর মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে। তাই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা তৈরি আছি।’

গত কয়েক দিনে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের খবর নাকচ করে দিয়ে আরিফুল ইসলাম জানান, গত অক্টোবরের পর যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, সে তুলনায় এখনকার পরিস্থিতি ভালো। কখনো কখনো অনুপ্রবেশের চেষ্টা হলে তা পুশব্যাক করা হচ্ছে।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী সীমান্তে সেনা সমাবেশ করার আগে প্রতিবেশী দেশকে জানানোর রীতি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সেটা হয়নি। তাই তাদের কাছে সেনা সমাবেশ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে।

মিয়ানমারের কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদারের অজুহাতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাজারখানেক সদস্য গত শুক্রবার রাথিডং, বুথিডং ও মংডুতে মোতায়েন করা হয়েছে। গত সোমবার সেনাবাহিনী মায়ু নদীর আশপাশের পাহাড়ি এলাকা থেকে লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। উগ্রপন্থী সংগঠন আল ইয়াকিন বা আরাকান রোহিঙ্গা সলভেশন আর্মির (আরসা) বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর কথা বলা হলেও দীর্ঘ মেয়াদে রাখাইনের উত্তরাঞ্চল থেকে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দেওয়ার ছক থেকে সর্বশেষ এই অভিযান শুরু হয়েছে। কারণ আরসাকে দমনের নামে যে অভিযান শুরু হয়েছে, শেষ পর্যন্ত রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে বসবাসকারী সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠী হামলার শিকারে পরিণত হবে বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলোর আশঙ্কা। গত অক্টোবরে রাখাইনের সেনাচৌকিতে হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে আল ইয়াকিন।

ঢাকা ও মিয়ানমারের কূটনৈতিক সূত্রগুলোতে গতকাল যোগাযোগ করে জানা গেছে, রাখাইনের রাথিডং, বুথিডং ও মংডুতে নতুন সেনা অভিযান রোহিঙ্গাদের নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ উসকে দিতে পারে। গত অক্টোবরে সেনাচৌকিতে হামলার জের ধরে প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। রাখাইনের সর্বশেষ সেনা অভিযান রোহিঙ্গা সমস্যা নতুন মাত্রা যোগ করবে। বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন শুরু নিয়ে আলোচনার পথ রোধ করে দেবে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা সমস্যার মূল উৎস অর্থাৎ ওই জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের দাবিকে পিছিয়ে দেবে। সর্বশেষ এই সেনা অভিযানে স্পষ্ট যে রোহিঙ্গাদের যৌক্তিক দাবি প্রতিষ্ঠাকে ভূলুণ্ঠিত করার ব্যাপারে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি), সেনাবাহিনী ও আরাকান ন্যাশনালিস্ট পার্টি (এএনপি) এখন এক বিন্দুতে এসে মিলেছে।

এদিকে টেকনাফের লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের সভাপতি দুদু মিয়া গতকাল সন্ধ্যায় জানান, গত তিন দিনে রাখাইন থেকে অন্তত ৫০ পরিবারের প্রায় দেড় শ রোহিঙ্গা টেকনাফ পৌঁছেছে। এরা শিবির ও আশপাশের গ্রামে আপাতত আশ্রয় নিয়েছে।

উখিয়ার কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের সভাপতি আবু সিদ্দিক জানান, সেখানে গত দুই দিনে আশ্রয় নিয়েছে নতুন আসা প্রায় ৫০ জন রোহিঙ্গা। আবু সিদ্দিকের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের আলাপের সময় তাঁর পাশে উপস্থিত ছিলেন গতকাল দুপুরে উখিয়ায় পৌঁছানো বুথিডংয়ের আবু তৈয়ব।