রাজধানীতে ছাত্রকে অপহরণ ও হত্যায় মাদ্রাসা প্রিন্সিপাল!

রাজধানীর ডেমরায় শিশু মনির হোসেনকে অপহরণ করেন তারই মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ও দুই সহযোগী। এরপর মনিরের বাবার কাছে ফোন করে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। টাকা না পেয়ে মুনিরকে হত্যা করেন তারা। তিনজনকেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার তিনজন হলেন নতুনপাড়ার নুর-ই মদিনা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আব্দুল জলিল হাদী (৪২), আহাম্মদ সফি তোহা (১৬) ও মো. আকরাম (২২)।

বুধবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি ওয়ারী জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, গত ৭ এপ্রিল সকাল ৭টায় মাদ্রাসায় যায় মনির হোসেন ও তার দুই ভাইবোন। বেলা ১১টায় মাদ্রাসা ছুটি হওয়ার পর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রিন্সিপাল ও তার দুই সহযোগী মনিরকে অপহরণ করে মাদ্রাসার পাশে থাকা নির্মাণাধীন মসজিদুল-ই-আয়েশায় নিয়ে যায়। ওই মসজিদের ইমাম আব্দুল জলিল হাদী।

সেখানে নেয়ার পর মসজিদের সিঁড়িতে মনির কান্না শুরু করে। তখন অপহরণকারীদের একজন মুখ চেপে ধরে। এতে মনির আরও জোরে চিৎকার শুরু করে। তখন গামছা দিয়ে মনিরের চোখ-মুখ বেঁধে ফেলা হয়। এক পর্যায়ে মারা গেছে বুঝতে পেরে মনিরকে সিমেন্টের একটি বস্তায় ভরে সিঁড়ির পাশে রেখে দেয়। বস্তায় ঢোকানোর আগে মনিরের হাত পা বেঁধে ফেলা হয়।

মনির মারা গেছে জেনেও পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, মনিরের বাবা সাইদুল হকের কাছে রাতে ফোন করে তোহা তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। টাকাটি মসজিদের লাশ রাখার খাটিয়াতে রাখতে বলেন। মনিরের বাবা এক লাখ টাকা জোগাড় করে মসজিদে নিয়ে আসেন। ছেলে ফিরে পাওয়ার আশায় মসজিদেই অপেক্ষা করেন এবং টাকাটি মসজিদের ইমাম হাদীর কাছে রাখেন। সারারাত অপেক্ষার পরও ছেলেকে ফিরে না পেয়ে পরদিন টাকা নিয়ে তিনি চলে যান।

এরই মধ্যে পরদিন (৮ এপ্রিল) বিকাল পাঁচটায় মসজিদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার সিঁড়ির মাঝখান থেকে বস্তাবন্দি মনিরের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর সন্দেহভাজন হিসেবে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ও তার ছাত্র তোহাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রথমে তারা অস্বীকার করে বলে জানান ডিসি ফরিদ উদ্দিন।

পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, প্রথমে স্বীকার না করলেও গতকাল (৯ এপ্রিল) বিকালে অপহরণ ও হত্যার কথা স্বীকার করেন প্রিন্সিপাল ও তোহা। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মালিটোলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আকরামকে। তিনি গত বছর মসজিদুল-ই-আয়েশায় তারাবির নামাজ পড়িয়েছিলেন। এ বছরও ইমামের পরিচিত হিসেবে তারাবির নামাজ পড়াতে এলাকায় আসেন।

তিনজনকেই ডেমরা থানায় দায়ের করা মামলায় আদালতে পাঠানো হচ্ছে বলে জানান ডিএমপি ওয়ারী জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার ফরিদ উদ্দিন।