রাজধানীতে ডিজে পার্টির অন্তরালে রমরমা দেহব্যবসা

গভীর রাতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাহসী হচ্ছে তরুণ তরুনীরা, ইংরেজী বর্ষবরন অথবা কারো জন্মাদিন, যেকোনো ইভেন্টকে সামনে রেখে রাত জাগা হুল্লোড়ে মিশে যাওয়াটা স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে ঢাকার যুবাদের। শুধু রাত জাগা নয়, একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বদলে যাচ্ছে শহরের মানুষের নেশাও।

শহরের এই নতুন অভ্যাসেরই সুযোগ নিচ্ছে কিছু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। কার্যত, তাদের তত্ত্বাবধানেই এই ধরণের পার্টির আয়োজন করা হচ্ছে শহরের বিভিন্ন পাঁচতারা হোটেলে। খুব অল্প খরচে এই ধরনের পার্টিতে পৌঁছে যাচ্ছে ঢাকার তরুণ-তরণীরা। আর এসব রাতজাগা ইভেন্টের মধ্যে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ডিজে পার্টি।

এক সময় উঠতি বয়সের ছেলেরাই ডিজে পার্টির বড় খদ্দের হলেও এখন সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঢাকার অভিজাত এলাকার তরুণীদের আনাগোনা। গানের তালে তালে অশ্লীল নৃত্য, ইয়াবার ছড়াছড়ি, সাথে অবাধ যৌনতা কি নেই সেখানে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর অভিজাত আবাসিক এলাকার বিভিন্ন বিলাস বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটে প্রায় রাতে ডিজে পার্টি করে থাকেন একশ্রেনীর ব্যবসায়ীরা, আর এসব পার্টিতে টিকিট কিনে যোগ দেন তরুণ থেকে শুরু করে একশ্রেণির মধ্য বয়সী পুরুষ।

রাজধানীর গুলশান-বনানীতে রয়েছে এরকম অর্ধশত ফ্ল্যাট। এসব ফ্ল্যাটের সামনে থাকে অফিস। সাজানা-গোছানো কক্ষ, চেয়ার টেবিল সোফা। দেয়ালে টানানো থাকে নানা শৈল্পিক চিত্র। প্রতিটি কক্ষ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। আশপাশের লোকজন ভাবতেই পারেন না অফিসের নামে কী হচ্ছে ভেতরে। এরকম একটি ভবন নিকেতনের ই ব্লকের আট নম্বর রোডে। সম্প্রতি ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেন গোয়েন্দারা। ৪৯৯৯ টাকা মূল্যে টিকেট কিনে যেতে হতো ওই পার্টিতে।

জানা গেছে, ঢাকায় শতাধিক তরুণী রয়েছে যারা ওই পার্টিতে যোগ দিতেন। অর্থের বিনিময়ে রাতব্যাপী উঠতি তরুণদের সাথে যৌনতায় লিপ্ত হয়ে পরদিন ফিরতেন বাসায়। এছাড়া একটু বেশি টাকা খরচ করলেই সেক্স পার্টনার হিসেবে পাওয়া যাবে বিভিন্ন মিউজিক ভিডিও, শর্ট ফিল্মের নায়িকা দের।

ঢাকার শেষপ্রান্তে রূপনগরের বিরুলিয়া ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় তুরাগ রিক্রিয়েশন নামের একটি রিসোর্ট ভাড়া নিয়ে নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছিল একটি চক্র। প্রতি সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেখানে জড়ো হতো তরুণ-তরুণীরা। রাতব্যাপী গান, নাচ ও মাদকে বুঁদ হয়ে থাকতো তারা। এসব বিষয়ে একটি মামলা হলে তা তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। জেলা উত্তর ডিবির দায়ের করা ওই মামলা তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রায়ই রিসোর্টটি ভাড়া নিতো একটি চক্র। স্যুটিংয়ের নামে ভাড়া নিয়ে তারা চালাতো নানা অপকর্ম।

ভবনের নিচতলায় রাতব্যাপী অনুষ্ঠিত হতো নাচ-গান। ইংরেজি-পপ গান বাজাতেন ডিস্ক জকিরা। নাচের তালে তালে চলতো মাদকের আড্ডা। দ্বিতীয় তলার বিভিন্ন কক্ষ ভাড়া নিয়ে অন্যরকম ফূর্তিতে মেতে উঠতেন বেপরোয়া তরুণ-তরুণীরা। তাদের এই অপকর্মের কথা জানাজানি হওয়ার পর একসময় ডিজে পার্টি বন্ধ করে দেন আয়োজকেরা।

অবাধ যৌনতার পাশাপাশি উঠতি তরুণ তরুণীদের টার্গেট করে চলছে রমরমা মাদক ব্যবসা। মদ, বিয়ার, ইয়াবা, কোকেন , হেরোইন , ফেন্সিডিল সহ প্রায় সকল ধরনের মাদক কিনতে পাওয়া যায় এসব পার্টিতে।

এ ব্যাপারে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ঢাকা মেট্রো, উত্তর) এক সহকারী পরিচালক বলেন, রাজধানীর গুলশান, বনানী, উত্তরা, ধানমন্ডিসহ বেশ কিছু এলাকার বিভিন্ন ফ্ল্যাট বাড়িতে চলছে ডিজে পার্টির নামে মাদক ও দেহ ব্যবসা। এরমধ্যে সর্বাধিক সংখ্যক উত্তরা এলাকায়। এর ডিজে পাটিতে মদ, বিয়ারের পাশাপাশি সেবন করা হয় ইয়াবা। উত্তরার একটি বাড়িতে অভিযানের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, এখান থেকে ইয়াবা ও বিয়ারসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিল খদ্দেরসহ বেশ কয়েকজন তরুণী।

অপর দিকে বনানীর একটি হোটেলে অভিযান চালিয়ে ম্যানেজারসহ ৪ জনকে আটক করা হয়। এখানে ডিজে পাটির নামে চলছিল রমরমা মাদক ও দেহ ব্যবসা। শান্তিনগর এলাকার একটি সঙ্গীত স্কুলে অভিযান চালিয়ে মদ, বিয়ার ও ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয় এক তরুণীসহ তিনজনকে। এখানে বিকালে চলত শিশুদের সঙ্গীত শিক্ষা। আর রাত দশটার পরে বসতো ডিজে পার্টি।

ডিজে পার্টির সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতিটি ডিজে পার্টিতে প্রবেশ ফি দেড় হাজার টাকা থেকে দুই হাজার টাকা। এখানে যারা আসেন তারা সবাই তরুণ-তরুণী। এখানে উঁচু মঞ্চের ওপর কয়েকজন নারী-পুরুষ ডিজে কান ফাটানো শব্দে মিউজিক বাজায়। আর মঞ্চের সামনে যুবক-যুবতীরা একে অপরের বাহুবন্ধনে উন্মাতাল হয়ে নাচে। এসব তরুণীকে নিয়ে নাচতে হলে নির্দিষ্ট অংকের টাকা দিতে হয়। আর চাহিদা মতো টাকা দিলে অনৈতিক কাজ করার অনুমতি মেলে।

এ ব্যাপারে সিটিটিসি’র সাইবার ক্রাইম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন ধানমন্ডি ও টঙ্গী এলাকায় প্রায় রাতেই ডিজে পার্টির নামে বেপরোয়াভাবে চলছে যৌন-বাণিজ্য। তরুণদের বিপদগামী করছে এসব চক্র। তারা ডিজে পার্টির নামে কমবয়সী মেয়েদের দিয়ে যৌনকর্ম করাচ্ছে। বিভিন্ন বাসা-অফিস ভাড়া নিয়ে চক্রটি এসব অপকর্ম করছে বলে জানান তিনি