রাজধানীতে মেট্রোরেল নির্মাণে ‘যানজটের ভোগান্তি’

বেসরকারি চাকরিজীবী রনি। মিরপুরে সাংবাদিক আবাসিক এলাকা থেকে বাংলামোটর অফিসে যান মোটরসাইকেলে। পূরবী ১০ নম্বর-শেওড়াপাড়া-আগারগাঁও- এ পথটুকু পাড়ি দিতে আগে সময় লাগতো আধা ঘণ্টা থেকে পৌনে এক ঘণ্টা। এখন সময় লাগছে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা।

একই অবস্থা মিরপুর ১২ নম্বরের বাসিন্দা আবীরের। গণপরিবহনের সবচেয়ে ভালো বাসটিতে যাতায়াত করেন তিনি। মতিঝিলে অফিসে যাওয়ার উদ্দেশে আগে রওনা দিতেন সকাল ৮টায়। এখন এক ঘণ্টা আগে রওনা দিলেও অফিসে পৌঁছতে আধা ঘণ্টা, কোনো কোনোদিন এক ঘণ্টাও দেরি হয়। এটা এখন নিত্যদিনের চিত্র। কারণ একটাই- এ সড়কজুড়ে চলছে মেট্রোরেলের কাজ।

সরেজমিন দেখা যায়, মিরপুর ১২ নম্বর বাসস্ট্যান্ড থেকে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর হয়ে ফার্মগেট, গুলিস্তান ও যাত্রাবাড়ীমুখী যানবাহনে চলাচলরত যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে। মেট্রোরেলের জন্য এ সড়কের অধিকাংশ স্থানজুড়ে খননকাজ চলছে। এ জন্য দেয়া হয়েছে অস্থায়ী প্রাচীর।

সকাল ১০টার দিকে মিরপুরে গিয়ে দেখা যায়, মূল সড়কের মাঝ বরাবর চলছে মেট্রোরেলের বিশাল কর্মযজ্ঞ। বেশ কয়েকটি স্থানে চলছে পাইলিংয়ের কাজ। কাজের নিরাপত্তায় দুই পাশে প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে গাড়ি চলাচলের রাস্তা হয়ে গেছে সরু। সরু সড়কে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদনে দেখা যায়, সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর অন্যতম মেট্রোরেল প্রকল্পের বেশ কয়েকটি টেস্ট পাইলের কাজ শেষে মূল পাইলের কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে সাইট অফিস নির্মাণ এবং ডিপোর অভ্যন্তরে চেক বোরিং কাজ চলছে। মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে ৭৫ শতাংশ। আশা করা হচ্ছে ২০১৯-এর শেষ দিকে প্রকল্পে ব্যবহৃত যান বাংলাদেশে আসতে শুরু করবে।

বর্তমানে মিরপুরজুড়ে জোরেশোরে চলছে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ। কাজ সময়মতো শেষ করতে শ্রমিক ও নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িতরা দিন-রাতে দুই শিফটে এখন কাজ করছেন।

সরেজমিন প্রকল্প এলাকা ঘুরে আরও দেখা যায়, মিরপুর ১২ নম্বর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে শুরু করে মিরপুর সাড়ে ১১, কালশী মোড়, মিরপুর ১১ নম্বর, মিরপুর ১০ নম্বর এলাকা, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, তালতলা ও আগারগাঁও এলাকা পর্যন্ত দিন-রাত কয়েকশ শ্রমিক কাজ করছেন। এর মধ্যে কালশী মোড় ও আগারগাঁও মোড়ে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ।

বিশেষ করে আগারগাঁও এলাকায় মেট্রোরেলের একটি অবকাঠামো গড়ে ওঠছে। সেখানে মেট্রোরেলের কাজে ব্যবহৃত বড় বড় ক্রেন, পাইলিং যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি রাখা হয়েছে। কাজের সুবিধার্থে আগারগাঁওয়ে নির্মাণ স্থাপনার পাশেই প্রকল্প অফিস তৈরি করা হয়েছে। সড়কের পাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে অবকাঠামো নির্মাণে ব্যবহৃত সিমেন্ট, ইট, বালু ও সুরকি।

ফলে সরু হয়ে পড়া সড়কে স্বাভাবিক গতিতে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া গাড়ি চলাচলের অংশ খানাখন্দে ভরে গেছে। রয়েছে রিকশার চাপও। ফলে ইচ্ছা করলে সহজেই এ সড়কের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো উপায় নেই।

এ সড়কে গাড়ি চালাতে সমস্যায় পড়ছেন চালকরাও। ‘সময় নিয়ন্ত্রণ’ গাড়িচালক রফিক মিয়া জানান, মেট্রোরেলের কাজের কারণে এ সড়কে যানজট দেখা দিয়েছে। গাড়ি চালাতেও বেগ পেতে হচ্ছে। ১০ মিনিটের রাস্তায় সময় লাগছে এক ঘণ্টার বেশি। একই গাড়ির যাত্রী মোতাহার বলেন, জ্যামে বসে থাকতে হচ্ছে। তার ওপর ধুলাবালি। অবস্থা এতোটাই খারাপ যে, ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। চুপচাপ সহ্য করে যেতে হচ্ছে।

যানজটের পাশাপাশি ধুলাময় এ সড়কে দেখা দিয়েছে তীব্র শব্দদূষণও। উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে একপ্রকার অতিষ্ঠ এখানকার মানুষ। তারা দ্রুত এ কাজ সম্পন্নের দাবি জানান।

এ সড়কে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. শাহরিয়ার বলেন, রাস্তা সরু হয়ে যাওয়ায় সাময়িক ভোগান্তি হচ্ছে যাত্রীদের। যানজট হচ্ছে তবে তীব্র নয়। আমরা তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।

মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট আব্দুস সাত্তার বলেন, যানজট হচ্ছে। এ সড়ক দিয়ে যাদের চলাচল তাদের একটু সময় বেশি লাগছে। দীর্ঘ যানজট যাতে না হয় আমরা সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মেট্রোরেলের কাজ শেষ হলে এ সমস্যা আর থাকবে না।