রাজনৈতিক দল হিসাবে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কি?

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (রোববার) তাদের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করছে। দীর্ঘ এই পথ পরিক্রমায় দলটি কতটা বদলেছে? এই দলের ভবিষ্যৎ কি?

বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড রওনক জাহান বলেন, ২০০৯ সাল থেকে টানা ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দল হিসাবে আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

রাজনৈতিক দল হিসাবে আওয়ামী লীগ শক্তি সঞ্চয় করেছিল প্রধানত: ক্ষমতার বাইরে থেকে। স্বাধীনতার পর দল মাত্র কয়েক বছর ক্ষমতায় ছিল। তারপর নব্বই দশকে চার বছর। এরপর ২০০৯ সাল থেকে টানা তিন দফায় ক্ষমতা ভোগ করছে এই দল।

ড. জাহান বলছেন, “আমাদের মত দেশে কোনো দল যখন বেশিদিন ক্ষমতায় থাকে তখন নেতা-কর্মীরা সুযোগ সুবিধা নেয়, ক্ষমতার ব্যবহার যেমন হয়, অপব্যবহারও হয়… এই বিষয়টি কীভাবে সামাল দেওয়া যাবে, দল কীভাবে শক্তিশালী থাকতে পারবে, তা নিয়ে আওয়ামী লীগকে ভাবতে হবে।”

রওনক জাহান মনে করেন, ক্ষমতা আওয়ামী লীগের নীতি-আচরণেও পরিবর্তন এনেছে।।

“এখনও আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে সমাজতন্ত্রের কথা রয়েছে, কিন্তু আওয়ামী লীগের মধ্যে এখন যে সংখ্যায় বড় বড় ব্যবসায়ী, সাবেক আমলা দেখা যায় – তা ১৯৭০ এর দশকে বা ৮০ দশকেও ছিল না। আমরা যাদের রুলিং ক্লাস বলি, এরা কখনই তেমন আওয়ামী লীগের সাথে ছিল না। এ ধরনের লোক এখন আওয়ামী লীগে ঢুকছে।”

ড. জাহান মনে করেন, ক্ষমতায় আওয়ামী লীগের সময় যতটা বাড়ছে, দলের অর্থনৈতিক নীতি বদলাচ্ছে, এবং সেই সাথে দলের মধ্যে ব্যবসায়ী মহলের প্রভাব বাড়ছে।

“আওয়ামী লীগ এখন শুধু উন্নয়নের কথা বলে, বাজার অর্থনীতির কথা বলে, কিন্তু একসময় তারা মানুষের অধিকারের কথা বলতো, দুঃখী মানুষের কথা বলতো।”

রাজনৈতিক দল হিসাবে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কি?

ড. জাহান মনে করছেন, আওয়ামী লীগকে এখন দল ও সরকারের মধ্যে তফাৎ তৈরি করতে হবে।

“টাকা-পয়সা, পেশী শক্তি থেকে দলকে বেরিয়ে আসতে হবে। আওয়ামী লীগ যদি সরকারের বাইরেও দল হিসাবে বেঁচে থাকতে চায়, কর্মীদের আদর্শ বা অন্য ধরনের কর্মকাণ্ড – সেগুলোর মাধ্যমে দলকে টিকিয়ে রাখতে হবে। সুযোগ-সুবিধা নেওয়াই যদি নেতা-কর্মীদের প্রধান লক্ষ্য হয়, তাহলে এই দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।”

ক্ষমতায় থেকে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে যে দুটো নির্বাচন আওয়ামী লীগ করেছে, তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়েছে। এটা কি আওয়ামী লীগের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ?

দলের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য নুহ-উল আলম লেনিন এই নির্বাচনী বিতর্কের জন্য প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে দায়ী করেন।

“২০১৮ সালের নির্বাচন বয়কট করে তারা নির্বাচনী ব্যবস্থাটাই দুর্বল করে দেয়।”

“এছাড়া ২০০৪ সালে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা, নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তাদের যে ভূমিকা – তা গণতন্ত্রের ক্ষেত্রকে সঙ্কুচিত করেছে, তখন অনেক সময় উন্নয়ন এবং জনজীবনকে নিরাপদ করার জন্য রাষ্ট্র এমন কিছু ব্যবস্থা নেয় – যা হয়তো কিছুটা সাংঘর্ষিক।”

ড. রওনক জাহান মনে করেন, টাকাপয়সা এবং পেশীশক্তি থেকে দলকে বের করে আনা আওয়ামী লীগের সামনে এখন মুখ্য চ্যালেঞ্জ।

তবে নুহ-উল আলম লেনিন বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখাই দলের সামনে প্রধান কাজ। শেখ হাসিনা একথা বলেছেন, এবং মানুষের মনে এটা প্রশ্ন আছে যে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে দুর্নীতির বিস্তার ঘটেছে। শেখ হাসিনা গত নির্বাচনের সময় বলেছেন, এ ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ দেখানো হবে। আমি মনে করি এটা একটা চ্যালেঞ্জ – দুর্নীতিমুক্ত এবং সহিষ্ণু সমাজ গড়ে তোলা।”