রাজশাহীর সবচেয়ে ধনী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবারের নির্বাচনের হলফনামায় তার বার্ষিক আয় ৩ কোটি ৪৪ লাখ ৬৫ হাজার ৮০৮ টাকা দেখিয়েছেন। রাজশাহীর অন্যান্য সংসদ সদস্য ও সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীদের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ।

তারপরও স্ত্রী আয়েশা আক্তার জাহান ডালিয়ার বার্ষিক আয় শাহরিয়ার আলমের চেয়ে বেশি। শাহরিয়ার আলম রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে গত দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শাহরিয়ার আলম এই আসনে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী।

সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েও ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন শাহরিয়ার আলম। তার স্ত্রী ডালিয়া রেনেসাঁ গ্রুপের পরিচালক। তার আয়ের সিংহভাগ আসে শেয়ার ও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ এবং ব্যাংক মুনাফা থেকে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তার বার্ষিক আয় ছিল ১ কোটি ১৫ লাখ ১৩ হাজার ১৮০ টাকা। এছাড়া নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ৯৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৪৯ টাকা বার্ষিক আয় দেখান শাহরিয়ার আলম।

এবারের হলফনামায় শাহরিয়ার আলম পেশা হিসেবে ব্যবসাকেই দেখিয়েছেন। তবে ব্যবসা থেকে তার কোনো আয় দেখানো হয়নি। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি নিজেকে ১৩টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ৫টির চেয়ারম্যান এবং একটির স্বত্বাধিকারী হিসেবে দেখিয়েছিলেন। সেবার চাকরি থেকে ৬৮ লাখ ৪৬ হাজার টাকা এবং ব্যবসা থেকে ৮ লাখ ৯০ হাজার ৪২১ টাকা নিজের আয় দেখিয়েছেন।

এবার নিজের ৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আয় দেখানো হয়েছে কৃষিখাত থেকে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও এই খাতে তার আয় ছিল এক লাখ টাকা। সেবার বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট বা দোকান ভাড়া এবং শেয়ার বিনিয়োগ থেকে আয় ছিল না। এবার নিজের বাড়ি ভাড়া থেকে ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং শেয়ার থেকে ২ কোটি ৬৩ লাখ ৯৬ হাজার ১০০ টাকা আয় দেখিয়েছেন।

অন্যদিকে এবারও তার স্ত্রী আয়েশা আক্তার জাহান ডালিয়ার কৃষিখাতে কোনো আয় নেই। তবে বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট বা দোকান ভাড়া থেকে বছরে আয় ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। আর ব্যবসা হিসেবে দেখানো ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালিত স্কুল থেকে আয় হয় ২ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এছাড়া শেয়ার থেকে ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা, এফডিআর থেকে ১২ লাখ ৭০ হাজার এবং ব্যাংক সুদ থেকে ৯৫ হাজার ৭৩৯ টাকা বছরে আয় করেন মন্ত্রীপত্নি। এর বাইরে তার ছেলের শেয়ার থেকে ১২ লাখ ২৫ হাজার ৮০০ টাকা আয় করেন।

প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সম্মানী হিসেবে শাহরিয়ার আলমের পারিতোষিক বাবদ বছরে আয় ২১ লাখ ৪১ হাজার ৫৮০ টাকা। আর বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালক হিসেবে তার স্ত্রী সম্মানি ভাতা পান ৯১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চাকরি থেকে স্ত্রীর ১৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা আয় দেখিয়েছিলেন শাহরিয়ার আলম।

এবার শাহরিয়ার আলম নিজের নামে ৫ কোটি, ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৭০৬, স্ত্রীর নামে ২ কোটি ৬২ লাখ ৯৯ হাজার ১৪৬ টাকা এবং ছেলের ২৯ লাখ ১০ হাজার ৬৬২ টাকা নগদ নিয়ে নির্বাচনে নামছেন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তার কাছে ১ কোটি ৬৬ লাখ ৪০ হাজার ৫৬৫ টাকা এবং স্ত্রীর মাত্র ৫ হাজার টাকা নগদ ছিল।

তবে এবার তাদের কারোর নামেই ব্যাংকে জমানো টাকা দেখানো হয়নি। কিন্তু নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্ত্রীর নামে ব্যাংকে ৪ লাখ ১৫ হাজার ১৮৭ টাকা থাকলেও নিজের নামে মাত্র ৪ হাজার ১৩৪ টাকা দেখান শাহরিয়ার আলম।

এবার শাহরিয়ার আলম নিজের নামে ৫৮ কোটি ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০ টাকা, স্ত্রীর নামে ১ কোটি ৩৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ও ৪ কোটি ৪২ লাখ ৪৯ হাজার ১৫৩ টাকা শেয়ারে বিনিয়োগ দেখিয়েছেন। আর ছেলের নামে শেয়ারে বিনিয়োগ দেখিয়েছেন আরও ৫০ লাখ টাকা। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শাহরিয়ার আলমের নামে শেয়ারে বিনিয়োগ ছিলো না। তবে ওই সময় তার স্ত্রীর নামে ১ লাখ টাকার শেয়ার বিনিয়োগ ছিলো।

এবার তার নিজের নামে ১০ লাখ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৯০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেখিয়েছেন। তবে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিজের নামে ২৩ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ দেখালেও স্ত্রীর নামে দেখাননি।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিজের নামে ৭৫ হাজার টাকা দামের ১৫ ভরি এবং স্ত্রীর নামে ৩ লাখ টাকার ২৭ ভরি স্বর্ণালঙ্কার দেখিয়েছিলেন। এবার পরিমাণ না উল্লেখ করলেও নিজের এবং স্ত্রীর নামে থাকা স্বর্ণালঙ্কারের মূল্য দেখিছেন একই। এছাড়া এবার ছেলের নামে ২৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার দেখালেও মূল্য উল্লেখ করেননি।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শাহরিয়ার আলম ও আয়েশা আক্তার জাহান দম্পতির নামে স্থাবর সম্পত্তি দেখানো হয়নি। কিন্তু এবার নিজের নামে ২ কোটি ১৭ লাখ ৯৬ হাজার ৫০০ টাকার এবং স্ত্রীর নামে আরও ২ কোটি ৫৭ লাখ ১৭ হাজার টাকার অকৃষি জমি দেখিয়েছেন। তবে পরিমাণ উল্লেখ করেননি।

এবার নিজের নামে রাজধানীর গুলশানে একটি অ্যাপার্টমেন্ট এবং রাজশাহীর আড়ানীতে একটি বাড়ি দেখিয়েছেন শাহরিয়ার আলম। যার মূল্য দেখানো হয়েছে এক কোটি ৭৫ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট দেখালেও অবস্থান উল্লেখ করেননি।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তার মালিকানায় ১০ লাখ ৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি হোন্ডা সিআরভি ব্র্যান্ডের মোটরগাড়ি ছিল। আর স্ত্রীর নামে ছিলো ২৭ লাখ টাকা মূল্যের নিশান এক্স ট্রায়াল। এবার কেবল তার নিজের নামেই রয়েছে ৭৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকা মূল্যের মোটরযান। কিন্তু এর ধরণ ও সংখ্যা দেখাননি।

জানা গেছে, বিয়ের সময় আক্তার জাহান ডালিয়া রাজশাহী কলেজে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ১৯৯৫ সালে তিনি স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। বর্তমানে তিনি রেনেসাঁ গ্রুপের পরিচালক। পরে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রি নেন। শাহরিয়ার আলম ডালিয়া দম্পতির তিন ছেলে-মেয়ে।