রাতে ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই

‘ওয়ার্ল্ড গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত ফুটবল বিশ্বকাপ একের পর এক বিস্ময় উপহার দিয়ে এখন শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে। আজও হয়তো নতুন কোন চমক দেখানোর অপেক্ষায় সে। যদি সত্যিই তাই হয় তাহলে নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দেখবো গোটা বিশ্ব। বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে স্বাগত জানাতে তৈরি গোটা বিশ্ব। তৈরি মস্কোর লুজনিকি স্টেডিয়াম।

মাসব্যাপী ৩২ টি দলের প্রতিযোগিতার ফাইনাল মঞ্চে আজ শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া। এই ফাইনাল ম্যাচ দিয়েই সমাপ্তি ঘটবে বিশ্বকাপের একুশতম আসরের। মস্কোর লুজনিকি স্টেডিয়ামে রাশিয়া বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের চুড়ান্ত এই লড়াই শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত নয়টায়।

আসর শুরু হওয়ার আগে হয়তো কেউ চিন্তাই করেননি, যে এই দুই দল লড়বে বিশ্বসেরা হওয়ার ফাইনাল মঞ্চে। কেননা ২০১৮ বিশ্বকাপের ফেবারিটের তকমাটা যে জার্মানি, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা কিংবা স্পেনের গায়ে মাখা ছিল। কে জানতো টুর্নামেন্টের হট ফেবারিটদের বিদায় করে সে জায়গাটা দখল করবে ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়া। তবে ফেবারিটের রং কিছুটা ছিলো ফ্রান্সের গায়েও। তাই দিদিয়ের দেশমের দলকে ফাইনালে দেখে তেমন কেউই অবাক নন। তবে ক্রোয়েশিয়া?

ক্রোয়েশিয়াকে তো বলা চলে রাশিয়া বিশ্বকাপের দেওয়া সবচেয়ে বড় উপহার। অভিজ্ঞ লুকা মডরিচ, ইভান রাকিটিচি কিংবা মারিও মানজুকিচদের মতো খেলোয়াড়দের ফুটবলশৈলীতে মুগ্ধ পুরো ফুটবল দুনিয়া। তারা যে দারুণ খেলা উপহার দিয়ে ফাইনাল মঞ্চে এসেছে তাই ফরাসিদের ঠেকিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলেও চোখ আর মাথায় উঠার কথা না। বরং নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হিসেবে গোটা বিশ্ব তাদের স্বাগত জানাবে।

আজকের ম্যাচের দুই ফাইনালিস্টের রয়েছে আলাদা গুন। যদিও এই শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই লড়াইয়ে এগিয়ে আছে ফরাসিরা। কারণ কিলিয়ান এমবাপে, এ্যান্টনি গ্রিজম্যান, পল পোগবা, রাফায়েল ভারানে কিংবা স্যামুয়েল উমতিতিদের মতো তরুণ প্রতিভাবান ফুটবলারদের গতি আর দুর্দান্ত পারফর্মেন্সের বিচারে তারাই এগিয়ে। আবার তাই বলে ক্রোয়াটদেরও হেলায় উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ দীর্ঘ ২০ বছর অপেক্ষার পর নিজেদের সোনালী সময়ে তারাও এখন বিশ্বসেরা হওয়ার অপেক্ষায়। যার কারণে বলাই যায় আজকের ম্যাচটিতে সম্ভাবনার কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে দুই দলই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শেষ হাসি কে হাসবে তাই দেখার অপেক্ষায় বিশ্বের কোটি কোটি ফুটবল ভক্ত।

নিজেদের স্বাধীনতার পর ১৯৯৮ বিশ্বকাপে প্রথমবার অংশ নেয় ক্রোয়েশিয়া। সেইবারই নিজেদের জাত চিনিয়েছে ক্রোয়াটরা। প্রথমবার অংশ নিয়েই বিশ্বকাপের শেষ চারে জায়গা করে নেয় ক্রোয়েশিয়া। যদিও মাঝের ২০ বছর ছন্দে পাওয়া যায়নি তাদের। তবে ২০ বছর পর আজ নিজেদের সেরা সাফল্যকে ছাড়িয়ে নতুন স্বপ্নের দুয়ারে মদ্রিচরা। আজ ফ্রান্সকে হারাতে পারলেই নতুন রুপকথার জন্মদিবে মাত্র পঁয়তাল্লিশ লাখ জনসংখ্যার দেশ ক্রোয়েশিয়া।

অপরদিকে ক্রোয়াটরা যখন নিজেদের স্বপ্নের কথা ভাবছে তখন ফরাসিদের লক্ষ্য দ্বিতীয় বারের মত বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তোলা। ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মত শিরোপার স্বাধ পায় ফ্রান্স। তারপর ২০০৬ সালে দ্বিতীয় শিরোপা স্বাধ পুরণের সুযোগ পেয়েও তা আর পারেনি ফরাসিরা। তাই এবার আর কোন রকম ভুল করতে চায় না দিদিয়ের দেশমের দল। নিজেদের গতি আর রক্ষণশীল খেলা দিয়ে শিরোপা নিয়েই বাড়ি ফিরতে বদ্ধপরিকল্প গ্রিজম্যানরা।

ফুটবলে সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত দুই দলের দেখা হয়েছে পাঁচবার। কিন্তু পাঁ দেখায় একবারও ফ্রান্সকে হারাতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। ফরাসীদের তিন জয়ের সঙ্গে দুটিতে ড্র। আজ আরো একবার মুখোমুখি দুই দল। তাই বিশ্বকাপের মত এমন বিগ আসরে ফ্রান্সকে হারাতে পারবে কি ক্রোয়াটরা? সবার মনেই হয়তো এই প্রশ্ন। কিন্তু সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে আজ রাতে। সবকিছু মিলিয়ে দারুণ এক উত্তেজণাময় ম্যাচই দেখতে যাচ্ছে মস্কোর লুজনিকি স্টেডিয়াম!

দুই দলের সম্ভাব্য লাইনআপ-

ফ্রান্স: ৪-২-৩-১ লেরিস; পাভার্ড, ভারানি, উমতিতি, হারমেন্ডেজ; কান্তে, পগবা; এমবাপে, গ্রিজম্যান, মাতুইদি; জিরুদ।

ক্রোয়েশিয়া: ৪-২-৩-১ সুবাসিস; ভ্রাসালিকো, লভরেন, ভিদা, স্ট্রিনিস; রাকিতিস, মদরিচ; রেবিস, ক্রামারিস, পেরিসিচ; মানজুকিচ।