রাশিয়ার একটা ছোট্ট ভূমিকম্প নাকি স্পেন-রাজ?

লুঝনিকি স্টেডিয়ামে গত ১৪ জুনের উদ্বোধনী ম্যাচটা স্বাগতিক রাশিয়ার আমজনতাকে প্রবলভাবে বিশ্বকাপমুখী করতে বড় ভূমিকা রেখেছিল। বিশ্বকাপের আগে দুঃসময়ের ঘেরাটোপে বন্দি রাশিয়া সেদিন সৌদি আরবকে ৫-০ গোলে চূর্ণ করে চমকে দিয়েছিল সবাইকে। ভূমিকম্পের বিশ্বকাপের সুরটাই যেন সেদিন বেঁধে দিয়েছিলেন চেরিশেভরা।

মস্কোর নন্দনকানন লুঝনিকিতেই আগামী ১৫ জুলাই মঞ্চায়িত হবে বিশ্বকাপ ফাইনাল। সেই স্বপ্নের মঞ্চে রাশিয়ার উপস্থিতি কারও দূরতম কল্পনায়ও নেই। সমর্থকদের প্রত্যাশা ছাপিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে পা রাখা রাশিয়ার জন্য সত্যিকারের ফাইনাল আজই।

অলৌকিক কিছু না ঘটলে আজ লুঝনিকিতেই শেষ হয়ে যেতে পারে স্বাগতিকদের বিশ্বকাপ। বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় শেষ ষোলোর অগ্নিপরীক্ষায় সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পেনের মুখোমুখি হবে রাশিয়া। নকআউট ম্যাচ হওয়ায় পরীক্ষাটা স্পেনেরও।

গায়ে ফেভারিটের তকমা লাগিয়ে বিশ্বকাপে এলেও এখন পর্যন্ত জ্বলে উঠতে পারেনি স্প্যানিশরা। গ্রুপপর্বে তিন ম্যাচে ছয় গোল করার বিপরীতে হজম করেছে পাঁচ গোল। মরক্কোর বিপক্ষে শেষ ম্যাচে ইনজুরি টাইমের গোলে নিশ্চিত হার এড়িয়ে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করা স্পেনের পারফরম্যান্স ও খেলার ধরন জন্ম দিয়েছে অনেক প্রশ্নের।

আর দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরে গ্রুপপর্ব থেকে জার্মানির বিদায় তো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ফেভারিট-তত্ত্ব কতটা অর্থহীন এই বিশ্বকাপে। তবু আজ পরিষ্কার ফেভারিট স্পেন। শক্তি-সামর্থ্যে লা রোহাদের সঙ্গে কোনো তুলনাই চলে না রাশিয়ার।

সেরা ছন্দে না থাকলেও গত দু’বছরে টানা ২৩ ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড বলছে স্পেনকে হারানো কতটা কঠিন। বড়-ছোটোর ফারাকটা গ্রুপপর্বেই হাড়ে হাড়ে বুঝেছে রাশিয়া। সৌদি আরব ও মিসরকে হেলায় হারালেও শেষ ম্যাচে উরুগুয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি স্বাগতিকরা।

আজ তাই নতুন কোনো ভূমিকম্প ঘটাতে নিজেদের সেরাটা দেয়ার পাশাপাশি ভাগ্যদেবীর আশীর্বাদও খুব দরকার রাশিয়ার। হারার আগে হার না মেনে সেই আশাতেই বুক বেঁধেছেন রুশ ফরোয়ার্ড আরতিয়ম জিউবা, ‘ছোট্ট একটা ভূমিকম্প ঘটাতে চাই আমরা।

ভাগ্য সহায় হলে আমরা আমাদের সমর্থকদের আরও বড় কিছু উপহার দিতে চাই। ৩২ বছর পর বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে উঠেছি আমরা। এটা অনেকটা বক্সিংয়ের খেতাবি লড়াইয়ের মতো। যেখানে এক অভিজ্ঞ যোদ্ধার মুখোমুখি স্বপ্নবাজ এক তরুণ তুর্কি। দেখা যাক কে ভালো। নিজেদের দিনে যেকোনো দলকেই হারানো সম্ভব।

সেরার সঙ্গে লড়লেই শুধু বুঝতে পারবেন আপনি কতটা ভালো। রামোস ও পিকের বিপক্ষে খেলার জন্য আমার আর তর সইছে না। এমন সুযোগ জীবনে একবারই আসে।’ বড় স্বপ্ন দেখলেও নিজেদের বাস্তবতা কিন্তু ভুলে যাননি জিউবা, ‘আমরা জানি স্পেনের বিপক্ষে কী অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। এই ম্যাচে তারাই (স্পেন) পরিষ্কার ফেভারিট। উরুগুয়ে ভালো একটা শিক্ষা দিয়েছে আমাদের।’

রাশিয়ার বড় প্রেরণা আজ হতে পারে লুঝনিকির ভরা গ্যালারি। ৮০ হাজার দর্শক গলা ফাটাবে জিউবাদের সমর্থনে। সেটা মাথায় রেখেই নকআউট যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার থিয়াগো আলকানতারা, ‘রাশিয়ায় এখনও নিজেদের সেরা ফুটবল খেলতে পারিনি আমরা। খেলার ধার বাড়ানোর পাশাপাশি রাশিয়ার বিপক্ষে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে নামতে হবে। শুধু ১১ জন রাশিয়ানের বিপক্ষে খেলব না আমরা, গোটা স্টেডিয়ামের বিপক্ষেও লড়তে হবে।’

স্পেনের মাঝমাঠের আরেক সেনানী মার্কো আসেনসিওর কণ্ঠেও অভিন্ন সুর, ‘রাশিয়ার পেছনে থাকবে গোটা স্টেডিয়াম। এই ম্যাচটিকে আমাদের ফাইনাল হিসেবেই নেয়া উচিত। হয় জেত নয়তো বাড়ি ফিরে যাও।’

রাত ১২টায় নোভগোরদে শেষ ষোলোর আরেক ম্যাচে ডেনমার্কের বিপক্ষে পরিষ্কার ফেভারিট লুকা মডরিচের ক্রোয়েশিয়া। গ্রুপপর্বে টানা তিন জয়ের পাশাপাশি আর্জেন্টিনাকে লণ্ডভণ্ড করে মডরিচরা বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাদের চোখ এবার শিরোপায়।