রাস্তার পাশে বৃদ্ধাকে ফেলে গেল ‘বিত্তশালী স্বজনরা’ (ভিডিও)

রাজধানীর মিরপুরে ৮০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধাকে সড়কের ধারে ফেলে গেছে স্বজনরা। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নানা চেষ্টার পর একটি বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়েছে।

ওই নারী বর্তমানে পাইকপাড়ার ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারে’ আছেন। কেন তাকে রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হয়েছিল তা জানা যায়নি। তবে ওই বৃদ্ধার স্বজনরা আর্থিক দিক থেকে বিত্তশালী বলে জানা গেছে।

ফেসবুকে এই বিষয়টির একটি সচিত্র লেখনি প্রকাশের পর বৃদ্ধাশ্রমে এসে একটি বেসরকারি ব্যাংকের চাকুরে ওই বৃদ্ধাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তিনি নিজেকে ওই বৃদ্ধার দূরসম্পর্কের আত্মীয় পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু তার কাছে ওই নারীকে দেননি চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের কর্মীরা।

গত ৩১ অক্টোবর সকাল আটটা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত মিরপুরের ৬০ ফুট সড়কের পাশে পড়েছিলেন। স্থানীয় দুই নারী তাকে উদ্ধার করে প্রথমে আগারগাঁও প্রবীণ হিতৈষী সংঘে নিয়ে যায়। সেখানে পরিচয়হীন কাউকে রাখা হয় না জানিয়ে দিলে তারা শেরেবাংলানগর থানায় যায়। থানাও জানিয়ে দেয় তাদের কিছু করার নেই। পরে হাসিবুল হাসিম নামে এক ব্যক্তি তাকে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারে’ নিয়ে যায়।

সেই দিনের ঘটনার বর্ণনায় হাসিম ফেসবুকে লিখেন, ‘একজন প্রবীণ মাকে পরিবারের সদস্যরা রাস্তার পাশে ফেলে রেখে গেছে। কখন থেকে সে রাস্তার পাশে পড়ে আছে কেউ জানে না।’

‘সকাল আটটার দিকে রাস্তা দিয়ে যাবার সময় জহুরা নামে এক মহিলা প্রথমে তাকে দেখতে পান। পরে দুপুর তিনটায় বাড়ি ফেরার পথেও তাকে একই জায়গায় পরে থাকতে দেখি। বেশ কিছু মানুষ ওই বৃদ্ধাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। পরে জানা যায় ওই বৃদ্ধার নাম আমেনা খাতুন। বয়স আশির উপরে। প্রায় একঘণ্টা রাস্তার মানুষ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না।’

‘পরে জহুরা নামে ওই নারী পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক মহিলার সাহায্য নিয়ে বৃদ্ধাকে রিকশা তোলেন। প্রথমে আগারগাঁওয়ের প্রবীণ হিতৈষী সংঘে যান। সেখান থেকে জানানো হয় পরিচয়হীন পথ প্রবীণদের রাখার কোন ব্যবস্থা এখানে নেই। তাই নীচে বসে থেকে তারা যায় শেরেবাংলানগর থানায়।’

‘কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার সব শুনে তিনিও কোন সমাধান দিতে পারেননি। বলেন, তারাও কিছু করতে পারবে না। তাদের কিছু করতে হলে কোর্টের অর্ডার লাগবে। এ জন্য বৃদ্ধাকে কোর্টে পাঠাতে হবে।’

পরে পাইকপাড়ার বৃদ্ধাশ্রমে কল দেন হাসিম। জানান, তারা সব শুনে নিয়ে যেতে বলেন এবং ওই বৃদ্ধাকে সেখানে নেওয়া হয়। সেখানে ত্রিশের বেশি বৃদ্ধ বাবা-মা আছেন।

আগারগাঁও প্রবীণ হিতৈষী সংঘের ইমাম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অভিভাবকহীন একজন মহিলা এসেছিল। তবে আমরা তাকে রাখতে পারিনি। কারণ এখানে কেউ থাকতে গেল প্রায় ৭/৮ হাজার টাকা প্রয়োজন হয়। সেটা কে বহন করবে, সেটার একজন নমিনি লাগে। এছাড়া আমাদের নিয়মে আছে পরিচয়হীন এবং স্বাস্থ্যগত অসুস্থ এমন কাউকে রাখা নিষেধ। তবে গাজীপুরে এমন অভিভাবকহীন মায়েদের রাখে, সেখানকার ঠিকানা তাদের দিয়ে দিয়েছিলাম। পরে আর খোঁজ নেওয়া হয়নি।’

চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড কেয়ারের প্রতিষ্ঠাতা মিল্টন সামাদার বলেন, ‘ওই মা আগে থেকে এখন অনেক সুস্থ আছেন। আমি তাকে দেখভাল করি সব সময়। যেদিন তিনি এসেছিলেন তার ভীষণ পায়খানা হচ্ছিল; এখন সেটা হচ্ছে না। জানতে পেরেছি তার পরিবার বেশ অর্থশালী। কিন্তু কেন তাকে রাস্তায় ফেলে রেখে গেছে জানি না।’

মিল্টন বলেন, ‘(শুক্রবার) তামান্না নামে প্রিমিয়ার কর্মরত এক নারী ব্যাংক কর্মকর্তা আমাদের এখানে এসেছেন তাকে (ওই বৃদ্ধা) নিয়ে যেতে। তামান্না কোন সঠিক পরিচয় দিতে পারেননি। শুধু বলছেন আমেনা তার দূর সম্পর্কের আত্মীয়। আমি তাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে দেইনি। বলেছি সঠিক প্রমাণ ও প্রশাসনের সাহায্য ছাড়া আমি তাকে এখান থেকে ছাড়ব না। কিন্তু ওই নারীর (তামান্না) দাবি আমেনা এখানে থাকলে মারা যাবে।’

‘আমি তার কাছে জানতে চেয়েছি যদি এখানে থাকলে মারা যায় তাহলে রাস্তায় পড়ে ছিল কেন? এই নিয়ে ওই নারীর সাথে ভীষণ বাকবিতণ্ডা হয়েছে।’

তবে আমিনা খাতুনের দূরের আত্মীয় পরিচয় দেওয়া তামান্নার সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

মিল্টন জানান, তারা তথ্য পেয়েছেন, ওই নারীর নামে ব্যাংকে ৪০ লাখ টাকা স্থায়ী আমানত করা আছে। এবং তাদের বেশ সম্পদ ও সম্পত্তিও আছে।

বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর হুমকির মুখে পড়ার কথাও জানান চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের স্বত্তাধিকারী। বলেন, ‘মিরপুর ১০ নম্বর থেকে একে এক ব্যক্তি তুই তোকারি করে বলেছেন, আমরা নিয়ে যাব। আমাকে আরও নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আগের নারীর মতোই তিনিও ওই বৃদ্ধার কোন ধরনের আত্মীয় সেটা বলছেন না।’

শেরে বাংলানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জি জি বিশ্বাস বলেন, ‘আমার এমন কোন খবর জানা নেই খোঁজ নিয়ে জানতে হবে। তবে এটা মানবিক বিষয়, আর প্রবীণ হিতৈষী সংঘ থেকেও আমাকে জানাতে পারত। এর আগেও অনেককে এভাবে উদ্ধার করে পুলিশ সেবা দিয়েছে।’

মিরপুরে ষাটফিট রাস্তার ধারে একজন প্রবীণ মা’কে ফেলে রেখে গেছে তার পরিবারের সদস্যরা।কখন থেকে সে রাস্তার কোনায় পড়ে আছে কেউ জানে না। তবে ঐ রাস্তা দিয়ে সকাল ৮টায় বাসা থেকে বের হয়ে জহুরা দেখতে পায় বৃদ্ধাকে।দুপুর ৩ টায় যখন জহুরা বাড়ী ফেরে তখন দেখতে পায় একদল পথের মানুষ বৃদ্ধাকে নিয়ে জড়ো হয়ে আছে, ঘটনা জানতে কাছে যায় সে। জানতে পারে বৃদ্ধার নাম, আমেনা খাতুন, বয়স আশির উপরে তো হবেই।প্রায় ঘন্টাখানিক রাস্তার মানুষ কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারে নি এই বৃদ্ধাকে কি করবে।জহুরা তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক মহিলাকে নিয়ে বৃদ্ধাকে রিকশা করে নিয়ে আসে বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘে।প্রবীণ হিতৈষী সংঘে সাধারনত এ ধরনের পরিচয়হীন পথপ্রবীণদের রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই।তাই নীচে বসে থেকে তারা চলে যায়।আমি যথারীতি আমার কাজ শেষ করে প্রবীণ হাসপাতাল থেকে সাড়ে তিনটায় বের হচ্ছি।গেটের দাঁড়োয়ানের কাছে শুনতে পেলাম ঘটনাটি।ততক্ষনে তারা রিকশায় প্রবীণকে নিয়ে চলে গেছে।কোন পথে গেছে শুনে নিয়ে বাইক দিয়ে খুঁজতে লাগলাম সেই প্রবীণকে। কিছুক্ষন খোঁজার পর পেয়েও গেলাম।জহুরা কোনো উপায় না দেখে রাস্তায় যেখান থেকে বৃদ্ধাকে কুঁড়িয়ে নিয়ে এসেছিলো, সেখানেই রাখতে যাচ্ছিলো। হৃদয়বিদারক ঘটনাটি নিজ কানে শুনলাম, বৃদ্ধার সাথে কথা বললাম।কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ফোন দিলাম কিন্তু কেউই এ ধরনের প্রবীনের দ্বায়িত্ব নিবেনা।আমিও কোনো উপায় খুঁজে বের করতে পারছিলাম না।ভাবলাম থানায় নিয়ে পুলিশের হেপাজতে দিয়ে আসি তারা কোনো সেল্টার হোমে রাখবে হয়তো।থানায় যাওয়ার সময় পেয়ে গেলাম বাইগামের সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা সুমন ভাইকে, তাকে আমাদের সাথে যেতে বলতেই তিনিও না করলেন না। যথারীতি সবাই মিলে বৃদ্ধাকে নিয়ে গেলাম শের-ই-বাংলানগর থানায়।কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার সব শুনে শেষমেষ জানালো তারাও কিছু করতে পারবে না।তাদের কিছু করতে হলে কোর্টের অর্ডার লাগবে, এই বৃদ্ধাকে কোর্টে পাঠাতে হবে, তারা জানালো আপনারা যা ভালো বুঝেন করেন, তারা কিছু করতে পারবেনা।মনটাই খারাপ হয়ে গেলো,এই বৃদ্ধাকে নিয়ে এখন কি করি।চারদিকে যতো সোর্স আছে সবকটি সোর্সে খোঁজ লাগালাম। শেষতক জানতে পারলাম, কল্যানপুরের পাইকপাড়ায় চাইল্ড এন্ড ওল্ড কেয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের প্রবীণদের রাখা যায়।সেই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা মিল্টন ভাইয়ের সাথে ফোনে কথা বললাম।তিনি জানালেন তার প্রতিষ্ঠান এ ধরনের মা-বাবাদেরই দ্বায়িত্ব নিয়ে থাকে।সন্ধ্যা হয়ে গেছে, আমরা সবাই একটি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারলাম, সবাই বৃদ্ধাকে নিয়ে রওনা দিলাম কল্যাণপুরের পাইকপাড়ার উদ্দেশ্যে। সেই প্রতিষ্ঠানের সবাই আমাদের সাদরে গ্রহন করলো, বৃদ্ধাকে যত্ন করে নিয়ে গিয়ে একটি বিছানায় শুইয়ে দিলেন কর্তব্যরতরা।ওখানে গিয়ে চোখে পানি চলে এলো, এরকম আরও একত্রিশ জন মা-বাবা রয়েছেন প্রতিষ্ঠানটিতে।মিল্টন ভাই তাদের সবাইকে মা ও বাবা বলেই ডাকেন।এই পথপ্রবীণের একজন লোকাল গার্জেন লাগবে, তার লোকাল গার্জেনের দ্বায়িত্বটা আমিই নিলাম। একটা আলাদা শ্রদ্ধাবোধ নিয়ে মিল্টন ভাইকে জড়িয়ে ধরলাম,কি অসাধারন কাজ করছেন তিনি।তাকে দেখে নিজেকে অনেক ক্ষুদ্র মানুষ মনে হলো।ওখান থেকে ফিরছি, বাইকে ফিরতে ফিরতে বারবার মনে হলো কে বলে ভালো মানুষ নেই, আমি তো যেখানেই যাই সেখানেই ভালো মানুষে ঠাঁসা আমাদের দেশটা,যে রিকশাওয়ালা বৃদ্ধাকে নিয়ে আজ ঘন্টা চারেক ঘুরলো, তার চোখের কোনেও পানি জমে ছিলো,সেও বৃদ্ধাকে ছেড়ে যেতে চাচ্ছিলো না,সাদা মনের সাদামাটা মানুষ।আমাদের দেশটাকে আমাদেরকেই তো পাল্টাতে হবে।আসুন আমরা প্রবীণদের ভালোবাসি, আসুন আমরা প্রবীণ বন্ধু হই।আমরাই তো বাংলাদেশ।(ভিডিওটি শেয়ার করে বৃদ্ধার ছেলে মেয়েকে খুঁজে পেতে সহায়তা করুন। অামি তাদের পিতা-মাতার ভরণ পোষন অাইনটি পড়ে শোনাতে চাই)

Posted by Hasibul Hasim on Wednesday, October 31, 2018