রোনালদোর হ্যাটট্রিক, ড্র স্পেন-পর্তুগাল ম্যাচ

বিশ্বকাপের প্রথম হাই ভোল্টেজ ম্যাচটিও হলো উত্তেজনার বারুদে ঠাঁসা। ইউরো চ্যাম্পিয়ন পর্তুগালের বিপক্ষে দুই দুই বার পিছিয়ে পড়েও ডিয়েগো কস্তার জোড়া গোলে সমতায় ফেরে স্পেন। অতঃপর নাচোর গোলে ম্যাচের এক পর্যায়ে এগিয়েও যায় স্পেন কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না। কিন্তু পর্তুগাল দলে যে পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলার রয়েছেন। দলের বিপদে আবারো এগিয়ে আসলেন তিনি। ৮৮ মিনিটে দুর্দান্ত ফ্রি কিক থেকে গোল করে বিশ্বকাপের ৫১তম হ্যাটট্রিকটি করলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ৩-৩ গোলের ড্রয়ে শেষ হয় বিশ্বকাপের প্রথম উত্তেজনাকর ম্যাচটি।

ম্যাচের দুই মিনিটে দুর্দান্ত সূচনা পায় বর্তমান ইউরো চ্যাম্পিয়নরা। বা-পাশ থেকে রোনালদো বল নিয়ে ডি বক্সের ভেতরে ঢুকলে স্প্যানিশ ডিফেন্ডার নাচো অবৈধভাবে বাধা দিলে পড়ে যান রোনালদো। সঙ্গে সঙ্গে রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। যদিও টিভি রিপ্লেতে দেখা গিয়েছে রোনালদোর সঙ্গে নাচোর তেমন কোন কন্টাক্টই হয়নি। স্পট কিক থেকে বাম কর্নারে বল পাঠিয়ে পর্তুগালকে ৪ মিনিটেই ১-০ গোলে এগিয়ে দেন এই রিয়াল মাদ্রিদ ফুটবলার।

এই গোলের সুবাদে কিছু মাইলফলকও স্পর্শ করেন তিনি। বিশ্বকাপ ইতিহাসের ৪র্থ ফুটবলার হিসেবে ৪টি বিশ্বকাপে গোল করলেন রোনালদো। পাশাপাশি প্রথম ফুটবলার হিসেবে টানা আটটি মেজর টুর্নামেন্টে পর্তুগালের জার্সি গায়ে গোল করার কৃতিত্ব দেখালেন তিনি।

ম্যাচের ১০ মিনিটেই গোল শোধের সুযোগ পেয়েছিল স্পেন কিন্তু আলবার কাছ থেকে বল পেলেও সেটি গোলবারের উপর দিয়ে মারেন ডেভিড সিলভা। ম্যাচের ২৪ মিনিটেই স্পেনকে সমতায় ফেরান ডিয়েগো কস্তা। ডি বক্সের সামান্য বাইরে বল পেয়ে ভেতরে ঢুকে দুই ডিফেন্ডারকে নাকানি চুবানি খাইয়ে প্যাট্রিসিওকে বোকা বানিয়ে ডান কর্নারে বল পাঠান কস্তা। নিজের বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথম অন টার্গেট শটেই গোল করলেন কস্তা।

২৬ মিনিটে আবারো এগিয়ে যেতে পারতো স্পেন কিন্তু ডি বক্সের বাইরে থেকে ইস্কোর নেওয়া আচমকা শট গোলবারে লেগে গোললাইন থেকেই ফিরে আসলে গোল বঞ্চিত হয় স্পেন। ম্যাচের ৩৪ মিনিটে আলবার সাথে সুন্দর বোঝাপড়ায় ইনিয়েস্তা ডি বক্সের ভেতর দুর্বল শট নিলে গোলবারের সামান্য বাইরে দিয়ে চলে যায়। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার মাত্র এক মিনিট আগে গুয়েদেসের কাছ থেকে বল পেয়ে রোনালদো বা-পায়ে শট নিলে ডে গিয়ার হাত ফসকে জালে গিয়ে জড়ায়। ২-১ গোলে এগিয়ে থেকেই প্রথমার্ধ শেষ করে পর্তুগাল।

পিছিয়ে থেকে বিরতি থেকে ফিরে খেলার ধার বাড়ায় স্পেন। ৫৫ মিনিটে মাঝ মাঠ থেকে ফ্রি কিক পায় স্পেন। ডেভিড সিলভার ফ্রি কিক থেকে ডি বক্সে বাড়ানো বল সার্জিও বুস্কেটসের মাথা ছুঁয়ে গোলমুখে যেতেই শট করে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোল করে স্পেনকে সমতায় ফেরান ডিয়েগো কস্তা। নাচোর করা ফাউলেই পেনাল্টি থেকে গোল করেছিলেন রোনালদো। সেই নাচো অসাধারণ গোলেই ৫৮ মিনিটে এগিয়ে যায় স্পেন। ডি বক্সের সামান্য বাইরে থেকে দুর্দান্ত ভলিতে চোখ ধাঁধানো গোল করে স্পেনকে প্রথমবারের মত ম্যাচে এগিয়ে দেন এই রিয়াল মাদ্রিদ ডিফেন্ডার। এ যেন পাপ মোচন!

৭৫ মিনিটে রিকার্ডো কোয়ারেজমোর ডান পায়ের শট গোলবারের সামান্য উপর দিয়ে চলে যায়। স্পেন যখন জয়ের প্রহর গুনছে তখনই ত্রাতা হয়ে হাজির রোনালদো। ৮৮ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে রোনালদোকে ফাউল করে বসেন পিকে। রেফারি ফ্রি কিকের সিদ্ধান্ত দেন। সেখান থেকেই দর্শনীয় এক ফ্রি কিকে গোল করে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করার পাশাপাশি পর্তুগালকেও সমতায় ফেরান। ৩-৩ গোলে অমীমাংসিত থেকেই শেষ হয় এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের সবচেয়ে উত্তেজনাকর ম্যাচটি।