রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াটি যেমন হতে পারে

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমঝোতা স্মারকে কী রয়েছে, তার বিস্তারিত এখনও জানা যায়নি। তবে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে মিয়ানমারের শ্রম, অভিবাসন ও জনসংখ্যা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব মিন্ত কিয়াংকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ প্রক্রিয়া মেনে ফরম পূরণ করে পাঠালেই তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়া শুরু করবে।

বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো সরকারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলি এই সমঝোতায় স্বাক্ষর করেন। দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত না জানানো হলেও দুই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স আর টেলিগ্রাফের খবরে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি কেমন হবে, তার আভাস দেওয়া হয়েছে।

যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করে ২ মাসের মধ্যে প্রত্যাবর্তন শুরু
বৃহস্পতিবার দুপুরে নেপিডোতে রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টার দফতরে দু’দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতায় বলা হয়েছে, দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়া শুরুর ব্যাপারে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমঝোতা হয়েছে। স্বাক্ষরিত ওই সমঝোতায় তিন সপ্তাহের মধ্যে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও সমঝোতা স্বাক্ষরের বিষয়টি জানানো হয়।

নাম-পরিচিতিমূলক ফরম পূরণ
ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে রোহিঙ্গাদের ফরম পূরণ করতে হবে। সেখানে তাদের রাখাইনে বসবাসের ঠিকানা, জন্মতারিখ ও পরিবারের সদস্যদের নাম থাকতে হবে। একইসঙ্গে স্বেচ্ছায় ফেরার প্রত্যায়নপত্রও দাখিল করতে হবে তাদের।

পরিচয়ের প্রমাণপত্রসহ
শুরু থেকেই মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে বৈধ কাগজপত্রের অপরিহার্যতার কথা শোনা যাচ্ছিল। তবে স্বাক্ষরিত সমঝোতা অনুযায়ী প্রমাণপত্র হিসেবে বাতিল হওয়া কার্ডও ব্যাবহারের সুযোড় দেওয়া হয়েছে। ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার পর দেওয়া ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড প্রমাণপত্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। আবার ভোটাধিকার হারানোর আগের হোয়াইট কার্ড থাকলে সেটাকেও প্রমাণপত্র হিসেবে গণ্য করা হবে। কারও ভেরিফিকেশন কার্ড ফেরত নেওয়া হলে যেই রশিদ এর বিপরীতে তাদের দেওয়া হয়েছিলো সেটা সরবরাহ করতে হবে।

ভিত্তি হবে ১৯৯২-৯৩ চুক্তি
মিয়ানমারের শ্রম, অভিবাসন ও জনসংখ্যা বিষয়ক স্থায়ী সচিব মিন্ত কিয়াং জানিয়েছেন, ১৯৯২-৯৩ সালের চুক্তির ওপর ভিত্তি করে সাম্প্রতিক এই সমঝোতা স্মারকটি তৈরি করা। ওই আইন অনুযায়ী সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়াদের ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিলো।

এর আগে ১৯৭৮ সালে দু’দেশ চুক্তি করেছিল। সেই চুক্তির অধীনে দুই লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা ছয় মাসের মধ্যে ফেরত গিয়েছিল। পরে ১৯৯২ সালে দু’দেশের মধ্যে সমঝোতায় ২০০৫ সাল পর্যন্ত দুই লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরত যায়।

কূটনীতিক ও ত্রাণকর্মীরা চুক্তিটিকে পূর্ণাঙ্গ মনে করছেন না। তারা বলছেন, জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোকে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা উচিত। ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের নিজেদের সম্পদ ও বাড়িঘরের নিশ্চয়তা বিধান করারও তাগিদ দিয়েছেন তারা।