রোহিঙ্গাদের মূল জনস্রোতে মিশে যাওয়া ঠেকাতে ২৮ চেকপোস্ট

মিয়ানমারে জাতিগত সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা যেন দেশের মূল জনস্রোতে মিশে যেতে না পারে সেজন্য তিন পার্বত্য জেলা, চট্টগ্রাম হয়ে ফেনী পর্যন্ত ২৮টি চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে।

বুধবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের চিহ্নিতকরণ সংক্রান্ত বিভাগীয় কমিটির সভায় এ কথা জানানো হয়।

দেশের যেকোনো স্থানে রোহিঙ্গা নাগরিকদের সন্ধান পেলে তাদের উদ্ধার করে সরকারিভাবে নিরাপত্তা দিয়ে কক্সবাজারের নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানান চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান। তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের ভাষা ও চেহারা দেশের একটি অংশের মানুষের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় এরা দ্রুত জনারণে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে পুলিশ।

বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে এই সভায় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সৈয়দা সরোয়ার জাহান, শংকর রঞ্জন সাহা, স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক দীপক চক্রবর্তী, পুলিশের ডিআইজি ড. এস এম মনিরুজ্জামান, পুলিশ কমিশনার মো. ইকবাল বাহার, গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আদিল চৌধুরী, কোস্টগার্ডের কমান্ডার ক্যাপ্টেন শহিদুল ইসলাম, বিজিবির রিজিয়ন কমান্ডার কর্নেল আনিস এবং বন সংরক্ষক ড. জগলুল হোসেন বক্তব্য দেন।

সভা থেকে জানানো হয়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিগত নিধনের পর থেকে বাংলাদেশে চার লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ নারী ও শিশু। কক্সবাজারের টেকনাফ-উখিয়া এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যাংছড়ি ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের পর মোট ২০টি স্থানে তারা অবস্থান করছে। এসব স্থানের পাহাড় ও গাছ কেটে ফেলায় পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকাও করছে প্রশাসন।

সভায় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সৈয়দা সরওয়ার জাহান বলেন, কক্সবাজার, উখিয়া ও বান্দরবানে পাহাড় বা গাছ কেটে বসতি স্থাপন বন্ধ করতে হবে। রোহিঙ্গাদের থাকার জন্য পাহাড় কাটা যাবে না। প্রয়োজনে পাহাড়ের ঢালে তারা সাময়িকভাবে বসবাস করতে পারে। পরে সরকারিভাবে দুই হাজার একর জায়গা নির্ধারণ এবং এসব স্থানে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের পর তাদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

ডিআইজি ড. এস এম মনিরুজ্জামান জানান, রোহিঙ্গারা যেন সারা দেশে ছড়িয়ে যেতে না পারে সে জন্য তিন পার্বত্য জেলাসহ ফেনী পর্যন্ত ২৮টি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। কক্সবাজার টেকনাফে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে পুলিশের ৬৫৮ জনের ফোর্স কাজ করছে। এ ছাড়া শিগগিরই এক ব্যাটালিয়ন এপিবিএন নিয়োগ করা হবে। এরই মধ্যে এক হাজার ৮৪১ জন রোহিঙ্গাকে বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করে কক্সবাজারে ফেরৎ পাঠানে হয়েছে বলেও জানান ডিআইজি। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের নানাভাবে হয়নানি করাসহ নানা অপরাধে ১৭৬ জন কে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার মো. ইকবাল বাহার জানান, কক্সবাজার-চট্টগ্রামের মানুষের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের চেহারা ও কথাবার্তা প্রায় অভিন্ন। এ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা দেশের মানুষের স্রোতে মিশে যাওয়ার শঙ্কা বেশি। এরা এই স্রোতে এসে গেলে মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি হবে। এ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের নির্দিষ্ট স্থানে আবদ্ধ করে রাখা এবং এসব স্থানে কঠোর নজরদারির বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তিনি।

বিভাগীয় কমিশনার জানান, এ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জন্য ভারত ১০৭ মেট্রিকটন, মালেশিয়া ১৪ মেট্রিকটন, মরক্কো ১৪ মেট্রিকটন, ইন্দোনেশিয়া ৭৭ মেট্রিকটন, ইরান ৪১ মেট্রিকটন ত্রাণ পাঠিয়েছে। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্থানে এসব ত্রাণ বিতরণ ছাড়াও দৈনিক এক লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গাকে রান্না করে খাবার দেওয়া হচ্ছে।