রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘে বাংলাদেশের পক্ষে প্রস্তাব পাস

রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে উত্থাপিত রেজ্যুলেশন পাস হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে ভোট দিয়েছে ৩৩ টি দেশ। বিপক্ষে ভোট দিয়েছে চীন, বুরুন্ডি এবং ফিলিপাইন। আর ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে ৯ টি দেশ।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে এ প্রস্তাব পাস হয়।

মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে হত্যা, গণধর্ষণ এবং বাছবিচারহীন নির্যাতনের অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রেজল্যুশন আনতে ১৬ সদস্য দেশের সমর্থন প্রয়োজন ছিল। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের মানবাধিকারবিষয়ক কমিটিতে (থার্ড কমিটি) ভোটাভুটির পর এটি গুরুত্বপূর্ণ।

এদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সারা বিশ্ব মিয়ানমারের নির্যাতনের নিন্দা জানালেও এখনও তাদের পাশে আছে চীন। সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের বিশেষ অধিবেশনে রাখা বক্তব্যে মিয়ানমারের প্রতি অবস্থান অপরিবর্তিত রেখে চীনের প্রতিনিধি বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে সংলাপই একমাত্র সমাধানের পথ।

বাংলাদেশ ও সৌদি আরব এই বিশেষ অধিবেশনের জন্য অনুরোধ করে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে নোটিশ দেয়। সংস্থাটির মোট ৪৭টি সদস্যের মধ্যে ৩৩ সদস্য এতে সমর্থন দিল। এছাড়া সদস্য নয় এমন ৪০টি দেশ এ বিষয়ে বিশেষ অধিবেশন আহ্বানের অনুরোধকে সমর্থন করেছে। তবে এ প্রস্তাবে সমর্থন না করায় সদস্য রাষ্ট্র হয়েও বিশেষ অধিবেশনে কোনও বক্তব্য রাখেনি ভারত।

সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ডিসেম্বর মাসটি ব্যস্ত সময় পার করতে হবে বাংলাদেশকে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্লেনারি সেশন বসছে। সেখানে থার্ড কমিটিতে পাস হওয়া প্রস্তাবটি ফের পাস করাতে হবে, যেখানে ১৯৩ রাষ্ট্রের ভোট হবে। বাংলাদেশ চেষ্টা করছে থার্ড কমিটিতে ১৩৫-১০ ভোটে যেভাবে রেজল্যুশনটি পাস হয়েছে, প্লেনারি সেশনে তার চেয়ে বেশি ভোট আদায়ের। এ নিয়ে কূটনৈতিক তত্পরতাও অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ। একইভাবে নিজেদের পক্ষে ভোট বাড়ানোর চেষ্টায় রয়েছে মিয়ানমার। থার্ড কমিটির পর প্লেনারি সেশনটিও বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

এর আগে আজ মঙ্গলবার মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির প্রধান জেইদ রাদ আল-হুসেইন বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপকহারে নৃশংস আক্রমণ চলেছে। এখনই এ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এসেছে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভা কার্যালয়ে তিনি সংস্থাটির মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, উন্মাদ হয়ে রোহিঙ্গা নির্যাতন চলছে। এই জুলুম-নির্যাতন এখনই বন্ধ করতে হবে। যার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

জেইদ রাদ আল-হুসেইন বলেন, আর কতটুকু পর্যন্ত সহ্য করা যায়, রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি দেওয়াসহ তাদের নিজভূমিতে অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।

চলতি বছরের ২৪ আগস্টের পর থেকে রাখাইন রাজ্যে অব্যাহত অত্যাচারে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা সাত লাখের বেশি বলে জাতিসংঘ জানাচ্ছে। বেসরকারি হিসেবে সংখ্যাটা আরও লাখ খানেক বেশি। এছাড়া আগে থেকেই চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারে থাকেন। এতে মোট রোহিঙ্গা সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়েছে।