রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতকে চীনের টেক্কা

রোহিঙ্গা-কূটনীতির প্রশ্নে বাংলাদেশ, মিয়ানমার তথা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বাড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ এসেছিল ভারতের সামনে। প্রতিবেশী-রাজনীতিতে কোণঠাসা অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছিল।

কিন্তু, ট্রেন ফেল করল সাউথ ব্লক। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে চালকের আসনে বসে পড়ল বেইজিং।
নির্যাতনের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মুসলিম রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত ও চীনের অবস্থান বিষয়ে শুক্রবার এভাবেই মন্তব্য প্রতিবেদন করেছে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা।

সম্প্রতি রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে চীন তিনস্তরের সমাধান সূত্র ঘোষণা করার পরে ভারতীয় কূটনৈতিক শিবিরে এক ধরনের আফসোস বিরাজ করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের লক্ষ্য ভারতকে পিছনে ফেলে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারে প্রভাব বাড়ানো। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলে মানবাধিকারের প্রশ্নে নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করারও চেষ্টা করছে দেশটি।
তবে এখন চীন যে পথে সমস্যা নিরসনের কথা বলছে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আগেই সেই কথা বলেছিলেন। তবে তাকে বাস্তবায়িত করতে উদ্যোগী হয়নি সাউথ ব্লক।

গত সেপ্টেম্বরে মিয়ানমার সফরে গিয়ে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণই করেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বরং সে দেশের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে মিয়নমারকে খুশি করার চেষ্টা করেছিলেন। কারণ, ভারতের বরাবরের আশঙ্কা— মিয়নমারকে তুষ্ট না-রাখতে পারলে দেশটি পুরোপুরি চীনের প্রভাবে চলে যাবে।
মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে চীন এবং ভারতের টানাপড়েন ক্রমবর্ধমান। আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলোর সিংহদ্বার হিসেবে সে দেশের খুবই গুরুত্ব ভারতের কাছে।

কিন্তু, সড়ক, পরিকাঠামো নির্মাণ থেকে শুরু করে নতুন শিল্পোদ্যোগের ক্ষেত্রে চীনও দু’হাত উপুড় করে বিনিয়োগ করছে মিয়নমারে এবং বাংলাদেশেও।
কার্যক্ষেত্রে চীনের রোহিঙ্গা-কিস্তিতে আপাতত মাৎ বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার উভয়েই। চীনের তিনস্তরের প্রস্তাব— ১) রাখাইন প্রদেশে অবিলম্বে সংঘর্ষ বিরতি ঘোষণা, রোহিঙ্গাদের দেশ ছেড়ে যাওয়া বন্ধ করা এবং শরণার্থীদের ফিরিয়ে আনা ২) বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়ানো ৩) রাখাইনের দারিদ্র দূরীকরণে আন্তর্জাতিক সহায়তা জোগাড়। এ ব্যাপারে সিংহ ভাগ দায়িত্ব নিতে রাজি চীন।

যদিও চীনের এই প্রস্তাব নিয়ে সন্দিহান মার্কিন প্রশাসন। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর বিবৃতিতে বলেছে— চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রস্তাব রাখাইনের জটিল পরিস্থিতির তুলনায় খুবই সহজ-সরল।
সামরিক অভিযানের নামে রাখাইনে ‘জাতি নিধন’ চলছে বলে পররাষ্ট্রসচিব রেক্স টিলারসন যে আগেই মন্তব্য করেছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে তাও বলা হয়েছে।

তবে চীনের এই প্রস্তাবে খুশি ঢাকা। প্রায় রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে জর্জরিত বাংলাদেশ, ভারতের কাছেও এমন দরাজ অবস্থান আশা করেছিল।
বাংলাদেশের এক কূটনীতিকের কথায়, ‘মিয়ানমারের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং সেনা প্রশাসন— দু’তরফেই চীনের গ্রহণযোগ্যতা বেশি। তারা এগিয়ে আসায় আমরা আশাবাদী যে রোহিঙ্গা সমস্যা মিটবে।’

অন্যদিকে চীনা প্রস্তাবে মিয়ানমার কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। কিন্তু, চীনের প্রস্তাব মেনে নিলে বেইজিং যে রাখাইন প্রদেশকে নতুন করে গড়ে দেবে তাই-ই নয়, তাদের কাছ থেকে অন্যান্য ক্ষেত্রেও যে বাড়তি উপঢৌকন আদায় করা সম্ভব হবে, মিয়ানমার তা বিলক্ষণ জানে।