রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: দিনক্ষণ নিয়ে অগ্রগতি নেই

দ্বিপক্ষীয় চুক্তির দেড় মাসেও শুরু হচ্ছে না রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। দিনক্ষণ ঠিক করা নিয়ে গড়িমসি করছে মিয়ানমার। এ নিয়ে আলোচনা, আন্তর্জাতিক চাপেও সাড়া নেই নেপইডো প্রশাসনের। অনেকটা নীরব বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও।

উল্টো এ সময়ে বাংলাদেশে আশ্রয়ের জন্য এসেছে আরও ১০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা। এ নিয়ে গত আগস্টের পর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ছয় লাখ ৯০ হাজার। আর সব মিলিয়ে এ সংখ্যা প্রায় ৯ লাখ।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক জানিয়েছেন, গত শনিবার মিয়ানমার থেকে পালিয়ে নতুন করে আরো ১০৭ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। এ নিয়ে গত ২৩ নভেম্বর প্রত্যাবাসন চুক্তি হওয়ার পর বাংলাদেশে এলো ১০ হাজার ১৩৯ জন রোহিঙ্গা।

কক্সবাজারের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের হিসাবে, গত আগস্ট থেকে গত রোববার পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ছয় লাখ ৮৯ হাজার ৫৯৭ জন রোহিঙ্গা। এর আগে বিভিন্ন সময়ে এসেছে আরো দুই লাখ চার হাজার ৬০ জন।

এসব রোহিঙ্গাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ চীনের মধ্যস্থতায় দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিলেও গড়িমসি করছে মিয়ানমার। আবার নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও প্রভাবশালী দেশ শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের বিলম্বিত প্রত্যাবাসনের কথা বলে আসছে। আর এর সুুযোগ নিচ্ছে মিয়ানমার।

চুক্তির সময়সীমা পার হওয়ার পরও প্রত্যাবাসন শুরু না করার জন্য বাংলাদেশকেই দায়ী করছে তারা। অথচ রোহিঙ্গা ফেরাতে মিয়ানমার সরকার সবেমাত্র পুনর্বাসন বিভাগ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছে, যে তথ্য দেশটির প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে গত ৯ ফেব্র“য়ারি ইউনিয়ন মিনিস্টার ড. উইন মিয়াত আয়ের বরাতে প্রকাশিত হয়েছে।

ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উইন ও’ সম্প্রতি দেশটির স্বাধীনতার ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া উদ্বাস্তুদের স্বেচ্ছা, নিরাপদ ও মর্যাদার সঙ্গে নিজ ভ‚মিতে ফিরিয়ে নেবে। তবে কবে এ প্রত্যাবাসন শুরু হবে, তা বলছে না দেশটি। এমন পরিস্থিতিতে ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক রয়েছে। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা সচিব কেউই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে নতুন করে কিছু বলতে চাননি।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবীর বলেন, মিয়ানমারের অবস্থান এখনো বোঝা যাচ্ছে না। তাদের কথা-কাজের মিল নেই। এর মধ্যেই নতুন করে দেশটিতে গণহত্যার আলামত নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হওয়ায় জটিলতা বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে। সমস্যা সমাধানে ‘মিয়ানমারকে প্রথাগত কূটনীতির বাইরে নিয়ে আসার’ ওপর গুরুত্ব দিয়ে সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর পাশাপাশি বন্ধুরাষ্ট্র সৌদি আরব, তুরস্ক বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতা নিতে পারি। এজন্য আমাদের সক্রিয়তা আরো বাড়াতে হবে।’