রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নেয়ার কথা পুরো অস্বীকার করল মিয়ানমার!

বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে সরকার আশ্বাস দিয়েছে বা কাজ শুরু করেছে – আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে আসা এমন সব খবর পুরোপুরি অস্বীকার করেছে দেশটি। মিয়ানমারের মন্ত্রীসহ উচ্চপদস্থ বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা এসব প্রতিবেদনের তথ্য মিথ্যা বলে দাবি করেছেন।

ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ইউ থান্ট কিয়াওয়ের সাক্ষাৎ ও আলোচনার পর থেকে বাংলাদেশ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, এমনকি মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যমেও ফলাও করে প্রচার হচ্ছিল, মিয়ানমার আপাতত বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া দু’হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে দেশে ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে।

২০০৫ সাল থেকে থেমে থাকা রোহিঙ্গা পুনর্বাসন প্রক্রিয়া এর মধ্য দিয়ে গতি পেতে যাচ্ছে বলে তখন আশা প্রকাশ করেছিলেন অনেকে। ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি স্টার তার সম্পাদকীয়তে এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে একে ‘অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছিল।

কিন্তু মিয়ানমার তাদের বক্তব্য অস্বীকার করে বুঝিয়ে দিলো, রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন আলোচনার মধ্যে তৈরি ফাটলটা দিনদিন বড়ই হচ্ছে। তারা বারবারই বলছে, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত নেয়ার কোনো কথাই নাকি হয়নি বাংলাদেশের সঙ্গে!

মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বাংলাদেশ থেকে ২৪১৫ বার্মিজ নাগরিককে পুনর্বাসনের কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। কিন্তু ওই ‘রোহিঙ্গা’ নামটাতে গিয়েই যত আপত্তি তাদের। ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর থেকেই এ ব্যাপারে বারবার গাইগুঁই করছেন কিয়াও। বলছেন, বৈঠকের সময় থেকেই বাংলাদেশি সচিব ও কর্মকর্তাদের ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহারের বিরোধী তিনি।

গত ৪ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলোকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিয়াও বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা’ নামটার ব্যাপারে আমি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে ব্যাখ্যা করে আমাদের সাক্ষাতের সময় বুঝিয়েছি যে, মিয়ানমারের নৃ-গোষ্ঠীর আনুষ্ঠানিক তালিকা এবং আমাদের ঐতিহাসিক দলিল-প্রমাণ অনুসারে, ‘রোহিঙ্গা’ নামের কোনো নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠী আমাদের নাগরিক কখনোই ছিল না।’

ইউ থান্ট কিয়াও সুর মেলাচ্ছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের অন্যতম পরিচালক ইউ জাও হ্‌তায়ের সঙ্গে, যিনি ২ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মুখের ওপর রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া বিষয়ক সংবাদগুলো মিথ্যা দাবি করে বলেছিলেন, যাদেরকে মিয়ানমারে ফেরত নেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে তারা রোহিঙ্গা নয়।

‘আমাদের দু’দেশের মধ্যে এ ধরণের কোনো সমঝোতা হয়েছে, মিয়ানমার এমন ভ্রান্ত তথ্য কখনোই মেনে নেবে না, গণমাধ্যমে তারা যা-ই ঘোষণা করুক না কেন,’ বলেন হ্‌তায়, ‘ওই বৈঠকে মিয়ানমার তো শুধু ২০০৫ সালে পুনর্বাসনের ব্যাপারে আলোচনা হওয়া ২৪১৫ জন মানুষের ব্যাপারে খোঁজখবর করার জন্য একটি যৌথ কমিটি গঠনে সম্মত হয়েছে।’রোহিঙ্গা-মিয়ানমার

এই ২৪১৫ জনকে যে ফিরিয়ে নেয়াই হবে, এটাও নিশ্চিত না বলেও জানান ইউ জাও হ্‌তায়। বরং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটির ব্যবহার বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার সম্পর্ক নষ্ট করে দিতে পারে বলে তিনি অনেকটা হুমকিই দিয়েছেন বলা চলে।

আলোচিত এই ২৪১৫ জনকে ২০০৫ সালে মিয়ানমারের নাগরিক বলে সনাক্ত করেছিল দেশটির কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তখন তারা দেশে ফিরে যেতে রাজি হয়নি। এর ফলে তখন আটকে গিয়েছিল পুনর্বাসন প্রক্রিয়া। এতদিন পর মিয়ানমার সরকার অবশেষে বলছে ওই লোকগুলোকে তারা ফেরত নেবে যদি (!) তারা নতুন পরীক্ষায় নির্ধারিত ৪টি শর্ত পূরণ করতে পারে এবং তারপর যদি (!) তারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে যেতে আগ্রহী হয়।