রোহিঙ্গা সংকটে বিশ্বের সক্রিয় ভূমিকা চায় ঢাকা

রোহিঙ্গা সমস্যা দীর্ঘায়িত হলে বিভিন্ন গোষ্ঠী এটিকে পুঁজি করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এ সংকটকে ঘিরে যাতে কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা তৈরি না হয়, সে সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক ও দায়িত্বশীল হতে হবে।

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা নিয়ে জানতে চাইলে এ মন্তব্য করেন নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সোমবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সরকারের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম অগ্রাধিকার হিসেবে দীর্ঘদিনের এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের বিষয়টি বিবেচনায় থাকবে।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন আর মিয়ানমারের রাখাইনে তাদের ওপর নৃশংসতার বিচার—এ দুটি প্রেক্ষাপটে সরকারের ভবিষ্যৎ কর্মকৌশল জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকার কীভাবে এগোবে সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান খুব সহজে হবে না। এর জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। এই প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের আর্থিক, সামাজিক ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কতটা প্রভাব ফেলেছে, তা নিয়ে একটি সমীক্ষা চালানো হবে।

নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনে করেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাতে এ সমস্যার সবগুলো বিষয়কে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে পরে প্রত্যাবাসনের যে চুক্তি হয়েছে, তাতে ওই পাঁচ দফার পূর্ণাঙ্গ প্রতিফলন নেই।

ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া পাঁচ দফা প্রস্তাবের মধ্যে ছিল অনতিবিলম্বে এবং চিরতরে মিয়ানমারে সহিংসতা ও ‘জাতিগত নিধন’ নিঃশর্তে বন্ধ করা। মিয়ানমারে জাতিসংঘের মহাসচিবের নিজস্ব একটি অনুসন্ধানী দল পাঠানো। জাতি-ধর্মনির্বিশেষে সব সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান করা এবং এ লক্ষ্যে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সুরক্ষাবলয় গড়ে তোলা। রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত সব রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে তাদের নিজ ঘরবাড়িতে প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা। কফি আনান কমিশনের সুপারিশগুলো নিঃশর্ত, পূর্ণ ও দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হতাশা আছে কি না, সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যে দায়দায়িত্ব ছিল, সেটা তারা পালন করেনি। তাই তাঁর হতাশা থাকতে পারে। এ সমস্যা জিইয়ে থাকলে ভারত, থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার কেউ লাভবান হবে না। চীনের স্বার্থও বিঘ্নিত হবে। বিভিন্ন পক্ষ এতে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করবে। কাজেই এ সমস্যাকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি না হয়, সে ব্যাপারে প্রত্যেকের দায়দায়িত্ব আছে।