রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের তিন ধাপ প্রস্তাব

রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানিয়েছে চীন। আজ সোমবার মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে এশিয়া-ইউরোপ মিটিংয়ে (আসেম) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে চীন এ আহ্বান জানায়।

আসেম বৈঠক উদ্বোধন করেন মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চি।

ওয়াং ই বলেন, চীন বিশ্বাস করে সমঝোতার ভিত্তিতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ এ সংকটের সমাধান করবে। তিনি বলেন, ‘প্রথম ধাপে অস্ত্রবিরতি কার্যকর করতে হবে, যাতে মানুষ শান্তিতে থাকে এবং কোনোভাবেই কেউ যেন পালিয়ে যেতে বাধ্য না হয়।’

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সব পক্ষের কঠোর পরিশ্রমে প্রথম ধাপের লক্ষ্য কার্যত অর্জিত হয়েছে এবং আকস্মিক সহিংসতা, বিশেষ করে, যুদ্ধের আগুন যাতে পুনরায় ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’

অস্ত্রবিরতি কার্যকর হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াং বলেন, (দ্বিতীয় ধাপ) মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে একটি কার্যকর সমাধান বের করতে হবে। আর শেষ ধাপ হলো দারিদ্র্য নির্মূল করার ভিত্তিতে দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করতে হবে।

আসেম বৈঠকের পাশাপাশি এক অনুষ্ঠানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মোঘেরিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, সহিংসতা, শরণার্থীদের ঢল বন্ধ ও রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তা প্রবেশ এবং শরণার্থীদের নিরাপদ, টেকসই প্রত্যাবর্তন হবে (বৈঠকের) মূল বিষয়।’ তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে প্রস্তুত।

গত আগস্টে রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযানের পর থেকে ছয় লাখ ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যা, গণধর্ষণ এনেছে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা। সমালোচনার মুখে রাখাইন রাজ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাকে ফিরিয়ে নেয় মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।

গত সপ্তাহে মিয়ানমার সফর করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে তিনি নির্যাতনের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের আহ্বান জানান।

এদিকে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার গত মাসে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে। আগামীতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী পরবর্তী পর্যায়ে আলোচনায় অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

রয়টার্স বলছে, নিরাপদে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন সম্ভব হবে নাকি বিষয়টি উপদেশের পর্যায়েই থাকবে সেই প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। কারণ এখনো হাজার হাজার রোহিঙ্গা রাখাইনের ক্ষুধা ও অস্থিরতা থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য উপকূলে অপেক্ষা করছে।

মিয়ানমারের ইচ্ছা শরণার্থীদের নতুন আদর্শ গ্রামে স্থানান্তর করা, যেখানে তাদের ঘরবাড়ি এখন রয়েছে সেখানে নেওয়া হবে না। যদিও বিভিন্ন সময় এ উদ্যোগের সমালোচনা করেছে জাতিসংঘ।

শান্তি প্রতিষ্ঠা, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি মিয়ানমারকে নাগরিকত্ব ইস্যুরও সমাধান করতে হবে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডি বলেছেন, রোহিঙ্গারা কয়েক দশক ধরে রাষ্ট্রহীন অবস্থায় রয়েছে।