লাশের শোকের চেয়ে লাশ সৎকার করার শোকই বড় ‘অন্ত্যেষ্টি’

ইয়াজিম ইসলাম পলাশ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : একটি মুসলিম প্রধান গ্রাম। সেখানে বাস একটি হিন্দু পরিবারের। সেই পরিবারে রয়েছে মাত্র একজন পুরুষ। হঠাৎ এক রাতে মারা যায় সেই পুরুষটি। একমাত্র পুরুষ হওয়ায় পরিবারটিতে লাশ সৎকার করার মতো ছিল না কেউ। ধর্মীয় নানা বিধি নিষেধের কারণে কোনো মুসলমান পুরুষ লাশটি সৎকার করতে এগিয়ে আসেননি।

লাশ নিয়ে বিপাকে পড়ে যায় পরিবারটি। সমস্যা সনমাধানের জন্য গ্রামের চেয়্যারম্যান একটি মিটিং ডাকেন। কিন্তু এতেও সমস্যার কোনো সুরহা হয় না। কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে মিটিং থেকে উঠে চলে যায় সবাই। তাই লাশের শোকের চেয়ে লাশ সৎকার করার শোকই বড় হয়ে দাঁড়ায় ওই হিন্দু পরিবারটির। ধর্মীয় নিষেধ থাকা সত্তে¡ও রাতের অন্ধারে হিন্দু পরিবারের নারীরাই লাশের সৎকার করেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি নিয়ে “অন্ত্যেষ্টি” নামক অনু-সিনেমাটি নির্মাণ করেন রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বিভাগের প্রভাষক আব্দুল্লাহীল বাকীর তত্ত¡াবধায়নে নির্মিত হয় ১২ মিনিটের এই সিনেমাটি। আর এ অনু-সিনেমাটি ‘শান্তির স্বপক্ষে আমরা’ শীর্ষক চলচ্চিত্র প্রতিযোগীতার দ্বিতীয় স্থান লাভ করেছে।

আমেরিকার স্যান ডিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয় আয়েজিত এই প্রতিযোগিতার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে অংশ নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি।

প্রভাষক আব্দুল্লাহীল বাকী জানান, আমাদের সমাজে যে ধর্মীয় গোঁড়ামী আছে। সেই গোঁড়ামীর কারণে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। মানবিক কারণেও সমস্যাগুলোর সমাধান হয় না। ভারতের মালদায় এক গ্রামে এধরণের এক সমস্যা হয়েছিল। সেই প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে নির্মাণ করা হয়েছে “অন্ত্যেষ্টি”।

চলচ্চিত্রটির পরিচালক তানজিনা তাসনিম বলেন, আমাদের এই প্রগতিশীলতার সমাজে এখনো ধর্মীয় গোঁড়ামী বিরাজমান। প্রগতিশীলতার কথা মুখে বললেও ধর্মীয় ভয়ে মানবতা এখানে পরাজিত হচ্ছে। বলা চলে ধর্মীয় ভয়ের কাছে মানবতা একবারে শূণ্য। মানুষ হিসেবে আমাদের মানবিক দিকটা যে সবার আগে হওয়া উচিত সেই বার্তাটা আমরা “অন্ত্যেষ্টি” সিনেমার মাধ্যমে দেয়ার চেষ্টা করেছি।