‘লড়াকু’ নায়ক রুবেলের জন্মদিন আজ

‘লড়াকু’ খ্যাত নায়ক রুবেলের জন্মদিন আজ। জনপ্রিয় এই নায়কের জন্মদিনে সোনালীনিউজ পরিবারের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। জীবনের সুন্দর এই দিনে গতকাল রাত থেকেই শুভেচ্ছায় ভাসছেন এই কুংফু নায়ক।

নায়ক রুবেলের পারিবারিক নাম মাসুম পারভেজ রুবেল। তিনি কিংবদন্তি অভিনেতা মাসুদ পারভেজ ওরফে সোহেল রানার ছোট ভাই। রুবেল ১৯৬০ সালের ৩ মে বরিশাল জেলায় জন্মগ্রহন করেন।

২২ বছর বয়সে পরপর দুইবার যথাক্রমে ১৯৮২ ও ১৯৮৩ সালে জাতীয় কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণ পদক লাভ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে পড়ার সময় ২৬ বছর বয়সে বড় ভাই সোহেল রানা প্রযোজিত ও শহিদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ‘লড়াকু’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আগমন করেন।

রুবেলের দাম্পত্য সঙ্গী সুলতানা পারভেজ নীলা। সুখের সংসারে তাদের রয়েছে এক পুত্র সন্তান। নাম তার নিলয় পারভেজ।

দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রায় ২০০ ছবিতে অভিনয় করেছেন রুবেল। তার কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিলো। যেমন কোনো জুটি প্রথায় আবদ্ধ না হয়ে একাধিক নায়িকাকে নিয়ে তিনি সফল ছবি উপহার দিয়েছেন। কাঞ্চন-দিতি, কাঞ্চন-চম্পা, মান্না-চম্পা, নাঈম-শাবনাজ জুটি যখন তুমুল জনপ্রিয় তখনও রুবেল নিজের আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন নিজস্ব ধারায় তেমনি সানি-সালমানদের যুগেও তিনি ছিলেন তুমুল জনপ্রিয় নায়ক।

দীর্ঘ দিনের ক্যারিয়ারে রুবেল অভিনয় করেছেন দুই বাংলার প্রায় ৫০ জন নায়িকার সঙ্গে। তারমধ্যে কবিতা ও পপি হচ্ছেন সর্বাধিক ছবির নায়িকা। রুবেলের অন্যান্য নায়িকারা হলেন রানী, জিনাত, শতাব্দী রায় (কলকাতা), সন্ধ্যা, চম্পা, সাথী, মিশেলা, সুচরিতা, পরী, দিতি, একা, মৌসুমি, অরুণা বিশ্বাস, লিমা, নন্দিনী, শিল্পী, তামান্না, সিমলা, কেয়া, সোনিয়া, শাহনাজ, সাহারা, শাহনূর প্রমুখ।

৯০ দশকের একেবারে শেষের দিকে রুবেল নিজে প্রযোজনা ও পরিচালনায় নামেন। তিনি এ পর্যন্ত ১৭টি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন যার সবগুলোই ছিলো বাম্পার হিট। তার প্রযোজিত ও পরিচালিত ছবিগুলো হচ্ছে বিচ্ছু বাহিনী, মায়ের জন্য যুদ্ধ, প্রবেশ নিষেধ, বাঘে বাঘে লড়াই, টর্নেডো কামাল, বিষাক্ত চোখ, রক্ত পিপাসা, সিটি রংবাজ, খুনের পরিণাম, অন্ধকারে চিতা, চারিদিকে অন্ধকার ইত্যাদি।

রুবেল শুধু একজন অভিনেতাই ছিলেন না সেই শুরু থেকেই তিনি অভিনয়ের পাশাপাশি ফাইট ডাইরেক্টর হিসেবেও সফল ছিলেন। তার সবগুলো ছবিতেই ‘দ্যা একশন ও্যারিয়রস’ নামে নিজস্ব ফাইটিং গ্রুপ ছিল। বলতে গেলে সেই সময়ে বাংলাদেশে মার্শাল আর্ট কে জনপ্রিয় করে তুলেন রুবেল। যার ফলে তখন অনেক কিশোর তরুন মার্শাল আর্ট শিখতে উৎসাহী হয়। রুবেল তার বিভিন্ন ছবিতে মার্শাল আর্ট এর ভিন্ন ভিন্ন নতুন কলাকৌশল উপস্থাপন করতেন। যার মধ্য ‘ড্রাংকিং কংফু’ (শত্রু সাবধান), উইপিং কংফু (বাঘের থাবা), ড্যান্সিং কংফু (ভণ্ড), ব্লাইনড কংফু (চারিদিকে শত্রু) সহ দুর্দান্ত সব কলাকৌশল উপস্থাপন করেন।

অনেক ভিলেনকেই রুবেলের সঙ্গে সফল হতে দেখা গেছে। তবে ইলিয়াস কোবরা ছিলেন অনন্য। কারণ এই কোবারও ছিলেন মার্শাল আর্টে পারদর্শি। তার সঙ্গেই বেশি জমে উঠতো রুবেলের অ্যাকশান। আর হুমায়ূন ফরীদি ছিলেন রুবেলের সিনেমার কমন ভিলেন। দারুণ একটি জুটি গড়ে উঠেছিলো রুবেল-ফরীদির। আর তাদের সেই জুটিকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন প্রয়াত নির্মাতা শহিদুল ইসলাম খোকন।

রুবেল অসংখ্যবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারে জন্য মনোনীত হলেও কখনো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেননি, এটা তার ভক্তদের জন্য আফসোসেরই বটে। তবে লাক্স আনন্দ দারা পুরষ্কার পেয়েছেন ৯৮ সালে। বাচসাস পুরষ্কার পেয়েছেন যথাক্রমে যুদ্ধা (২০০০) এবং বিচ্চু বাহিনী (২০০১) চলচ্চিত্রের জন্য। এছাড়া সমগ্র অবদানের জন্য বিশেষ সম্মাননা পান ২০১৫ সালে। যা তিনি গ্রহণ করেননি। শিল্পি সমিতি প্রদত্ত বিশেষ সম্মাননা গ্রহণ করেছিলেন ২০১৭ সালে।

এত বর্ণিল সাফল্যের রঙে রঙিন যার ক্যারিয়ার তাকে পুরস্কারের ফিতায় মাপা অনুচিত। বাংলা সিনেমার সোনালী দিনের ইতিহাসে রুবেল চিরদিন থেকে যাবেন উজ্জ্বল এক নক্ষত্র হয়ে, অভিনয় আর নিজেকে উপস্থাপনের স্বকীয়তায়। রুবেল চিরদিন এদেশের সিনেমার দর্শকের কাছে চমৎকার এক ভালোবাসার নাম হয়ে রইবেন। আরও অনেকদিন বেঁচে থাকুন তিনি আমাদের মাঝে। জাগো নিউজের পক্ষ থেকে রুবেলের জন্মদিনে রইলো শুভেচ্ছা ও অভিবাদন।