শপথ নিলেও কি সুলতান মনসুর এমপি থাকতে পারবেন?

একাদশ সংসদ নির্বাচনে গণফোরাম থেকে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিবেন বলে জানিয়েছেন।

নিয়মানুযায়ী সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিন থেকে পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচিত কেউ শপথ না নিলে তার আসন শূন্য হয়ে যাবে।

সুলতান মনসুর বলছেন যে সময়সীমা আছে বিধি অনুযায়ী সে সময়ের মধ্যেই তিনি শপথ নিবেন।

মিস্টার আহমেদ ছাড়াও বিএনপি ও গণফোরামের আরও সাতজন ৩০শে ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে ড:কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত হলেও তারা কেউ তাদের জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখনো শপথ নেননি।

গণফোরাম জানিয়েছে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের নির্বাচিত দু জনের কেউই সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিবেন না।

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী বলছেন মিস্টার আহমেদ যদি দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেন তাহলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মিস্টার চৌধুরী বলেন, “সুলতান মনসুর দু দিক থেকে সমস্যায় পড়বেন। প্রথমত তিনি গণফোরামের সদস্য ও দ্বিতীয়ত বিএনপির প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন। এখন দল বা জোটের সিদ্ধান্ত অমান্য করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং এর ভিত্তিতে সংসদ সদস্য থাকারও আইনগত ভিত্তি থাকবেনা তার।”

গণফোরামের দুজন নির্বাচিত হলেও এর মধ্যে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে আর মোকাব্বির খান নির্বাচিত হয়েছেন গণফোরামের দলীয় প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে।

এখন দল থেকে সংসদে যোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তারা দুজনেই শপথ নিতে আগ্রহী।

এর মধ্যে মিস্টার খান সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার ভার দলের হাতে দিলেও সুলতান মনসুর তার সিদ্ধান্ত পরিষ্কার করেই জানিয়েছেন।

যদিও গণফোরাম দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জোট হিসেবে শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্তই বহাল রেখেছে। সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলছেন দল বা জোটের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর শপথ নিলে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ গণফোরাম বা বিএনপির নেই।

“তার শপথের সাথে দলের সম্পর্ক নেই। শপথ নিলে দল বহিষ্কার করতে পারবে। আর কিছুই হবেনা”।

মিস্টার আহমেদ বলছেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের ক্ষেত্রে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ কার্যকর হবেনা। ওই অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্য হওয়ার পর কেউ দল থেকে পদত্যাগ করলে বা দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংসদে ভোট দিলে সদস্যপদ হারানোর কথা বলা হয়েছে।

আইন বিশেষজ্ঞ তানজিব উল আলম বলছেন সপ্তম সংসদে বিএনপি বিরোধী দলে থাকাকালে সংসদ বয়কট প্রশ্নে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সংসদ অধিবেশনে যোগ দেয়ার পর বিএনপি তাকে বহিষ্কার করে। সেটি নির্বাচন কমিশন ও সংসদের স্পিকারকে জানানো হয়েছিলো। পরে আদালত বলেছিলো দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ায় তার সদস্যপদ থাকবেনা। এরপর সংসদের সদস্যপদ হারিয়েছিলেন বিএনপির মেজর (অব) আখতারুজ্জামান।

কিন্তু সুলতান মনসুরের বিষয়টি ৭০ অনুচ্ছেদের আওতায় পড়বেননা বলেই মনে করেন তানজিব উল আলম।

“এখানে সুলতান মনসুরের দল গণফোরাম, কিন্তু তিনি নির্বাচন করেছেন বিএনপির প্রতীকে। আবার বিএনপি যেহেতু সংসদে যাচ্ছেনা তাই সেখানেও দলের বিরুদ্ধে ভোট দেয়ার সুযোগ নেই সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদের। সে কারণে দলের বিপক্ষে ভোটদানের কারণে সদস্যপদ হারানোর ঝুঁকিও তার নেই”।

এসব কারণে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিলেও সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদের তার দল বা জোটের কিছু করণীয় থাকবে বলে মনে করেননা তিনি।