শব্দমালার প্রকাশক লেলিনের লাগামহীন প্রতারণা! প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা

বই মেলাকে কেন্দ্র করে নতুন বই প্রকাশের প্রবণতা অনেক আগের। বিশেষ করে নতুন লেখকরা বই প্রকাশের জন্য অমর একুশে গ্রন্থমেলাকেই বেছে নেয়। এক সময় ভালো লেখকদের বই প্রকাশনীর প্রকাশক নিজ খরচেই করতেন। বর্তমানে করেন না তা নয় বরং অনেকাংশে কমে গেছে। এই কমার পেছনে রয়েছে লেখার মান, পরিচিতির অভাব এবং প্রকাশনীর ব্যবসায়ী মনোভাব। নিজ খরচে বই করেও নামধারী প্রকাশনী দ্বারা প্রতারণার শিকার হতে হয়। তেমনি একটি প্রকাশনী থেকে বই করতে টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন বিভিন্ন জেলার বহুসংখ্যক লেখক সাহিত্যিক।

২০১৮ সালের একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে শব্দমালা নামের প্রকাশনীর প্রকাশক মাহমুদুল হাসান লেলিন দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন বহুসংখ্যক লেখক সাহিত্যিক। জোবায়েদ আল মামুন নামের একজন প্রভাষক প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তিনি জানান তার চারটি বই বাবদ ৪০,০০০/টাকা ধার্য করেছিলো শব্দমালা এবং মেলার প্রথমদিন হতেই বইগুলো পাওয়া যাবে বলেছিলো। তিনি বলেন শুরুতেই ২০,০০০/টাকা দেই। একটি শিশুতোষ বই “লাউ গুড়গুড়” এর ২০০ কপি পেয়েছি এবং ১০০ কপি মেলার জন্য রাখে। বাকি তিনটি বই ‘ছড়াওয়ালার ছড়ারঝুড়ি, মাতৃত্বের মহানিদ্রা এবং KIDDY’S RHYMES এখনো ছাপায়নি এবং লাউ গুড়গুড় বইয়ের ১০০ কপির হিসেব আর পাইনি।

মোঃ আনিস আল মাহমুদ নামের একজন নবীন লেখক শব্দমালা প্রকাশনী তে ভালোবাসার কুড়েঁঘর নামে একটি বই প্রকাশ করার জন্য নগদ ১৬ হাজার টাকাসহ পাণ্ডুলিপি জমা দেন। বই মেলার প্রথম দিন থেকে মেলায় আসার কথা থাকলেও ১২ তারিখ বই আসে মেলায়। কিন্তু আমি হতাশ হয়েছি বইয়ের পৃষ্ঠাসংখ্যা কমিয়ে ছাপিয়েছে তাছাড়া বানানের ভুল রয়েছেই। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে কত কপি বই ছাপানো হলো আমি জানিনা আমার টাকায় ছাপানোর পরেও এখনো একটি কপি হাতে পাইনি।

সিলেট জেলার শিক্ষক জাকির মাছুম। শব্দমালা প্রকাশনী তে নগদ ৫ হাজার টাকাসহ ‘আঠারো মাসে বছর’ নামে একটি উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি জমা দেন। মেলার প্রথম থেকে বইটি পাওয়া যাবে শব্দমালার নিজস্ব স্টলে এমনটি কথা ছিলো, কিন্তু ২৪ ফেব্রুয়ারি তাকে বই মেলায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেদিন বই মেলাতে মাত্র তিনটি বই দেখতে পান বলে জানান জাকির। তিনি বলেন, সেদিন প্রকাশক আমাকে মোড়ক উন্মোচন মঞ্চে রেখেই প্রকাশক মাহমুদ চলে যান তারপর আমি আর বই পাইনি এমনকি সেদিন অনেকবার কল করে প্রকাশকের মোবাইলের চুইছ অফ পাই।

হবিগঞ্জের কাজী এম হাসান আলী নামের একজন লেখক বলেন, ৫ ফর্মার কবিতার বইয়ের পাণ্ডুলিপি সাথে নগদ ১৬ হাজার টাকা জমা দেন। গ্রন্থমেলার এক তারিখ বই দেওয়ার কথা অথচ মেলা শেষে আজ প্রায় এক মাস বইয়ের কোন খবর নেই।

হবিগঞ্জ জেলার মুকিমপুর আলিম মাদ্রাসার আরবী প্রভাষক এম এ জলিল ‘পরশমনি’ নামের বইয়ের পাণ্ডুলিপি জমা দিলেও বই পান নাই। তিনিও ১৬ হাজার টাকা দিয়েছেন।

টাংগাইল জেলার সৌদিআরব প্রবাসী এস এম মোখলেছুর রহমান ‘কবিতার ঝুড়ি’ নামের কবিতার পাণ্ডুলিপি সাথে ১৫ হাজার টাকা জমা দেন। কিন্তু এখনো বই পান নাই।

ময়মনসিংহ জেলার নূরে আলম মামুন নামের একজন লেখক দুটি বই ছাপানোর জন্য ৩২ হাজার টাকা দিয়ে দু বই মিলে মোট দুইশত কপি বই পেয়েছেন যদিও ৬০০ কপি পাওয়ার কথা ছিল । তার অভিযোগ সময়মত বই পান নাই এবং প্রকাশক পাণ্ডুলিপির প্রুফ না দেখেই ছাপিয়েছেন যার ফলে বইয়ে অসংখ্য ত্রুটি রয়েছে।

নাটোরের মোঃ শিমুল হোসেন টিউশনেরর টাকা জমিয়ে শব্দমালাতে ” রূপান্বিত বাংলা” নামের পাণ্ডুলিপি সাথে নগদ ১৮ হাজার টাকা জমা দেন। লেখকের অভিযোগ ৫ ফর্মার বই ৪ ফর্মায় করে বইয়ের সুন্দর্য বিনষ্ট করা হয়েছে। এবং মাত্র ১৬৬ কপি বই পেয়েছেন।

মাগুরার লেখক আকিদুল ইসলাম সাদী ‘পল্লীপাতা’ ছড়াগ্রন্থ নামে একটি যৌথ বই করতে পাণ্ডুলিপি জমা দেন নভেম্বরে। সাথে নগদ ১৭০০০ হাজার টাকা। প্রথমে বইটি দেওয়ার কথা ছিলো ডিসেম্বরে। মেলায় উঠানোর কথাও ছিলো। লেখক জানান আজও বইটি পান নাই।

উপরে উল্লেখিত প্রতারণার শিকার লেখকদের দাবী দেশের সকল প্রকাশনী সংস্থা ও বাংলা একাডেমী তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে শব্দমালার বিরুদ্ধে সঠিক ব্যবস্থা নিবে এবং প্রতারণার শিকার হওয়া কবি সাহিত্যকদের পাশে দাঁড়াবে।