শাজাহান খানের স্থাবর সম্পদ ৯৩ গুণ বেড়েছে

এক দশক আগে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের নিজের নামে ঢাকায় কোনো ফ্ল্যাট কিংবা জমি ছিল না। অথচ এখন লালমাটিয়া, বাড্ডা, মেরাদিয়া ও পূর্বাচলে নিজের এবং স্ত্রীর নামে জমি ও ফ্ল্যাট রয়েছে। গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই মন্ত্রীর স্থাবর সম্পদ ৯৩ গুণ এবং তাঁর স্ত্রীর বেড়েছে ১২ গুণের বেশি। নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শাজাহান খানের দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী শাজাহান খানের স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৩ কোটি ৯৪ লাখ ১২ হাজার ৯৩৩ টাকা। তাঁর স্ত্রীর সম্পত্তির পরিমাণ ২ কোটি ৮৬ লাখ ৯৩ হাজার ৪০৪ টাকা। আর যৌথ মালিকানায় শাজাহান খান ২ কোটি ৭৫ লাখ ২১ হাজার ৫৩২ কোটি টাকার সম্পত্তির কথা উল্লেখ করেছেন। সব মিলিয়ে শাজাহানের স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৬ কোটি ৬৯ লাখ ৩৪ হাজার ৪৬৫ টাকা। এক দশকে শাজাহান খান এবং তাঁর স্ত্রীর স্থাবর সম্পত্তি বাড়ার হার যথাক্রমে ৯৩ ও ১২ গুণের বেশি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান মূলত একজন প্রভাবশালী শ্রমিকনেতা। প্রায় এক যুগ আগে বাংলাদেশের পরিবহনশ্রমিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠনটির বড় পদে আসীন হন তিনি। ২০০৯ সালে মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়ার পর তাঁর ওই পদে থাকার অধিকার নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এমনকি সড়ক দুর্ঘটনার জন্য চালকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে সব সময় তাঁদের রক্ষার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন শাজাহান খান। নিরাপদ সড়কের দাবিতে এ বছরের আগস্টে স্কুলছাত্রদের আন্দোলনের সময়ও যথারীতি পরিবহনশ্রমিকদের পক্ষ নেন তিনি।

২০০৮ ও ২০১৪ সালের মতো এবারের নির্বাচনের হলফনামাতেও শাজাহান খান পেশার কথা বলতে গিয়ে রাজনীতি ও ব্যবসার কথা উল্লেখ করেছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শাজাহান খানের হলফনামায় দেখা যায়, ব্যবসার পাশাপাশি মন্ত্রী ও সাংসদ হিসেবে পাওয়া ভাতা হচ্ছে তাঁর আয়ের মূল উৎস। এর মধ্যে ব্যবসা থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ৩ কোটি ৩৬ লাখ ২ হাজার ২৫০ টাকা। আর মন্ত্রী ও সাংসদের পারিতোষিক ও ভাতা হিসেবে তিনি বছরে আয় করেন ২৪ লাখ ৬৭ হাজার ৫৮০ টাকা।

২০০৮ সালে শাজাহান খানের স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ১৬ হাজার ৯৫৩ টাকা। তাঁর স্ত্রীর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ২৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, শাজাহান খান এবং তাঁর স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৫৯ লাখ ১৮ হাজার ৩৪৮ টাকা ও ৩৬ লাখ ৮৭ হাজার ৪৭০ টাকা। আর একাদশ সংসদ নির্বাচনে শাজাহানের হলফনামায় তাঁদের অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ যথাক্রমে ৩ কোটি ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৭২৪ টাকা ও ৪৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। অর্থাৎ গত ১০ বছরে শাজাহান খানের অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে পাঁচ গুণ।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় শাজাহান খান তাঁর স্ত্রীর নামে ঢাকার আনন্দনগর ও পূর্বাচলে জমি থাকার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। এবারের হলফনামায় শাজাহান খান নিজের নামে লালমাটিয়ায় ফ্ল্যাট ও জমির কথা উল্লেখ করেছেন। নৌপরিবহনমন্ত্রী তাঁর স্ত্রীর নামে পূর্বাচলের পাশাপাশি বাড্ডায় জমি এবং মেরাদিয়ায় ফ্ল্যাট থাকার কথা জানিয়েছেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় দেওয়া হলফনামায় ব্যক্তি ও সংস্থা মিলিয়ে শাজাহান খান ৪৫ লাখ ২৯ হাজার ৯৫৩ টাকা দেনার কথা উল্লেখ করেছিলেন। এবারের হলফনামায় কোনো ঋণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেননি তিনি।