বিশ্বকবির শান্তিনিকেতনে এক টুকরো বাংলাদেশ

আর মাত্র কয়েকদিন বাকি উদ্বোধনের। সাজছে শান্তিনিকেতনে নির্মিত ‘বাংলাদেশ ভবন’। চলছে ধোয়ামোছা, সবুজায়ন আর আসবাবপত্র বসানোর কাজ। ১৮ মাসে শেষ হয়েছে এর নির্মাণকাজ।

এত আয়োজনের কারণ, ২৫ মে বিশ্বকবির হাতে গড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শান্তিনিকেতনের (বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়) মাটিতে নির্মিত ওই ভবনটির দ্বারোদ্ঘটানে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীরা যাচ্ছেন সেখানে।

বাংলাদেশ সরকারের ৩০ কোটি টাকা অর্থায়নে আর ভারত সরকারের দেওয়া জমিতে নির্মিত ভবনটি শান্তিনিকেতনে পড়তে যাওয়া পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলাদেশের তথ্যকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হবে।

দুই দেশের কূটনৈতিক মহল মনে করে, মূলত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ আর ইচ্ছের কারণেই শান্তিনিকেতনের মাটিতে লাল-সবুজের বাংলাদেশের একটি দ্রষ্টব্যস্থান তৈরি হলো।

২৫ মে শেখ হাসিনা বিশ্বভারতীর সমাবর্তনেও বিশেষ অতিথির চেয়ার অলঙ্কৃত করবেন। প্রধান অতিথি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিশ্বভারতীর উপাচার্য সবুজ কলি সেনও। সেদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শুরু হওয়া ওই সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী দুপুর ১২টা নাগাদ পৌঁছবেন শান্তিনিকেতনের বাজি পোড়ানোর মাঠে নির্মিত বাংলাদেশ ভবনে। সেখানেই হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। তারই মহাযজ্ঞে ব্যস্ত এখন বিশ্বভারতী, কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাস এবং অবশ্যই ভবনের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন লিমিটেড বা এনবিসিসি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিশ্বভারতীর উপাচার্য সবুজ কলি সেন জানিয়েছেন, গোটা শান্তিনিকেতন (বিশ্বভারতী) জুড়ে যেন একটা উৎসবের আমেজ লক্ষ করা যাচ্ছে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এ ধরনের দুটি অনুষ্ঠান বিশ্বভারতীর ইতিহাসে বিরল। সে কারণেই এখন সাজ সাজ অবস্থা। চলছে নিরাপত্তা নিশ্চিতেরও আয়োজন।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ভবনের নির্মাণ পর্ব শেষ। এখন সেখানে টুকটাক কিছু কাজ চলছে। ভবনটির অভ্যন্তরে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে একটি শহীদ মিনার তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির আগেই সেটি তৈরি হয়ে যাবে- এ কথাও জানালেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য। ভবন সম্পর্কে এনবিসিসির প্রজেক্ট এক্সিকিউটিভ (সিভিল) চন্দন সেন জানালেন, দুই বিঘা জমির উপর নির্মিত ভবনটির আয়তন ৪ হাজার ১০০ বর্গমিটার। এর ভেতরে দুটি সেমিনার হল (২৬৪ বর্গমিটার), একটি লাইব্রেরি (১১৫ বর্গমিটার) এবং দুটি স্টাডি সেন্টার রয়েছে। মোট ৪৫৩ আসনের বিশ্বমানের একটি অডিটোরিয়ামও সেখানে তৈরি করা হয়েছে। যার আয়তন ৬০০ বর্গমিটার। শব্দ নিরোধক, অত্যাধুনিক আলোর ব্যবস্থা ছাড়াও স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য সেখানে বসানো হয়েছে অসংখ্য সিসি ক্যামেরা। কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় রাখা হয়েছে একটি জাদুঘরও। ভবনটি নির্মাণে প্রতিদিন গড়ে ২০০ শ্রমিক কাজ করেছেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তায় বাংলাদেশ থেকে এসএসএফের একটি দল আজ-কালের মধ্যেই শান্তিনিকেতনে এসে পৌঁছাবে। ‘বাংলাদেশ ভবন’-এর নিরাপত্তার ভার নেওয়ার পাশাপাশি ওই দল শান্তিনিকেতন ও আসানসোলে কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও খতিয়ে দেখবে। কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাসের দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। বিশ্বভারতী ও বাংলাদেশ উপদূতাবাস সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ভবনের অডিটোরিয়ামে একটি সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিশ্বভারতীর বাংলাদেশি ও ভারতীয় শিক্ষার্থীরা অংশ নেবেন।

বাংলাদেশের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ভবনের প্রবেশদ্বারের সামনে থাকা লিফটটি সরিয়ে ফেলার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তবে সেটি এখনো সেখানে রয়েছে। ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুটি ভাস্কর্য স্থাপনের অনুরোধও করেছিল বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু বিশ্বভারতীতে ভাস্কর্য তৈরির কোনো বিধান নেই। এর বিকল্প হিসেবে ভবনের ভেতরে বঙ্গবন্ধু ও বিশ্বকবির দুটো ম্যুরাল বসানো হবে।

সম্প্রতি ভবনের সার্বিক অগ্রগতি ঘুরে দেখেছেন কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাসের চার কর্মকর্তা। এই দলে ছিলেন হেড অব চ্যান্সারি বিএম জামাল হোসেন, কাউন্সিলর মনছুর আহমেদ বিপ্লব, প্রথম সচিব (প্রেস) মোফাকখারুল ইকবাল এবং প্রথম সচিব (ক্রীড়া ও শিক্ষা) শেখ ইমাম।