শিকল পায়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে হায়াতুজ্জামান!

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) স্নাতক সম্মান ১ম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষার ১ম দিনের ‘এ’ ইউনিটের চতুর্থ শিফটের পরীক্ষা ছিল বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেট দিয়ে প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে তল্লাশি করে লাইন ধরে প্রবেশ করানো হচ্ছে। প্রচণ্ড ভিড়ে শিক্ষার্থীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ, আনসার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। হঠাৎ দুই পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় এক পরীক্ষার্থী সবার নজর কাড়ে।

তার নাম হায়াতুজ্জামান। পায়ে শিকল বাঁধা দেখে শুরু হয় প্রশাসনের জিজ্ঞাসাবাদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আবু কালাম মো. ফরিদ-উল ইসলামের হস্তক্ষেপে সহকারী প্রক্টর ড. শফিক আশরাফ তাকে পরীক্ষার হল পর্যন্ত পৌঁছে দেন।

গেটের বাইরে থেকে হায়াতুজ্জামানের বাবা আবদুর রহমান অনুমতি নিয়ে ভেতরে এলে তার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।

তিনি জানান, তাদের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার কালিগঞ্জ গ্রামে। হায়াতুজ্জামান তাদের একমাত্র ছেলে। তার একমাত্র মেয়ে কুড়িগ্রামের একটি কলেজ থেকে স্নাতকে পড়াশোনা করছে।

আবদুর রহমান জানান, তার ছেলে খুব মেধাবী। পঞ্চম শ্রেণিতে মেধাতালিকায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল। প্রায় ছয় মাস আগে থেকে হঠাৎ অদ্ভুত অদ্ভুত আচরণ করত সে। পড়ে ডাক্তারকে দেখালে অতিরিক্ত টেনশন ও ঘুম কম হওয়ার ফলে মস্তিষ্কের সমস্যার কথা জানায়। সে যাতে হারিয়ে না যায় তাই তার পায়ে শিকল দিয়েছি।

তিনি বলেন, আমার ছেলের স্বপ্ন ছিল ম্যাজিস্ট্রেট হবে। এখনও পড়াশোনার প্রতি তার আগ্রহ অনেক বেশি। আমার বিশ্বাস, সে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে তার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করবে।

গেট থেকে পরীক্ষার হল যাওয়া পর্যন্ত হাঁটতে হাঁটতে হায়াতুজ্জামানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, আমার স্বপ্ন একদিন অনেক বড় হব আমি। দেশের সেবা করব।

পায়ে শিকল বাঁধার বিষয়ে তিনি জানান, আমার মাথায় সমস্যা দেখা দেয়ায় পরিবার থেকে পায়ে শিকল বেঁধে দেয়। এ সময় বারবার এই প্রতিবেদকের কাছে দোয়া চাচ্ছিলেন হায়াতুজ্জামান।

পরীক্ষা শেষে আবদুর রহমান ছেলের পরীক্ষা অনেক ভালো হয়েছে জানিয়ে বলেন, আমি তার স্বপ্ন পূরণের জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত। আশা করি, সে একদিন আমার মুখ উজ্জ্বল করবে।