শিক্ষকের অশ্লীল কথায় স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা!

কুষ্টিয়া: গত বছর শারীরিক অসুস্থতার কারণে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। তাই বড় আশা ছিল এ বছর অংশ নেবে পরীক্ষায়। সেলক্ষ্যে জোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল ডালিম খাতুন। বুধবার মডেল টেষ্ট পরীক্ষা। কিন্তু স্কুলে গিয়ে প্রবেশপত্র তুলতে গিয়ে যখন জানতে পারে এবারও তার পরীক্ষায় অংশ নেয়া হচ্ছেনা তখন হতাশ হয়ে পড়ে সে।

যদিও বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানায় ডালিম। সেখানেও কোনো সদুত্তর পায়নি বরং উল্টো শিক্ষকদের কাছ থেকে অপমানের শিকার হতে হয় তাকে।

একদিকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারার গ্লানি অন্যদিকে শিক্ষকের অপমানজনক কথা সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে স্কুলছাত্রী ডালিম। পরে এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ ওই শিক্ষার্থীর পরিবার ও স্বজনেরা স্কুল ঘেরাও করে শিক্ষকদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই ডালিমের এই আত্মহননের দায় স্বীকার করতে নারাজ। হৃদয় বিদারক এই ঘটনাটি ঘটেছে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কেএসএম স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখায়।

ডালিমের বড় ভাই রুবেল হোসেন জানান, দুই মাস আগে মডেল টেস্ট পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য ছোট বোন ডালিমকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে যায়। স্কুলের সহকারী শিক্ষক মাসুদ স্যারের কাছে ফরম পূরণ বাবদ টাকা দিই। আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় গরুর দুধ বিক্রির টাকা তুলে দেয়া হয় মাসুদ স্যারের হাতে।

বুধবার (১১ অক্টোবর) মডেল স্টেট শুরু। তাই আগের দিন মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) স্কুলে যায় প্রবেশপত্র নেয়ার জন্য। সেখানে গিয়ে মাসুদ স্যারের কাছে প্রবেশপত্রের জন্য বলা হলে তিনি জানান, তুমি তো পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না। এসময় কারণ জাইতে চাইলে তিনি জানান, মডেল টেস্টের জন্য টাকা জমা দাওনি। স্যারের এ কথা শুনে হতবাক হয়ে যায় ডালিম।

সে জানায়, আপনার হাতেই আমি ও আমার ভাইয়া এসে টাকা জমা দিয়েছি। অথচ আপনি বলছেন টাকা দেইনি। স্যার আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। ডালিমের এমন কথা শুনে রেগে যান শিক্ষক মাসুদ।

তিনি আরো জানান, মাসুদ স্যার ডালিমকে বলে তোমার পরীক্ষা দিয়ে কাজ নেই। তোমার তো চেহারা ভালো, তুমি মডেল টেস্ট না দিয়ে মডেলিং কর। এতে ভালো করবে। শিক্ষকের কাছ থেকে এ ধরণের অশ্লীল কথা শুনে ডালিম ছুটে যায় অধ্যক্ষ মঞ্জুরুল ইসলাম ডাবলুর কাছে। সেখানেও কোনো সদুত্তর না পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে হতাশ হয়ে একপর্যায়ে কাঁদতে কাঁদতে ডালিম বাড়ি ফিরে আসে। এরপর ঘরের দরজা বন্ধ করে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে ডালিম।

ডালিমের বড় ভাই জানান, স্কুল থেকে বের হওয়ার পর ডালিম মামাতো ভাই রোমেলের কাছে শিক্ষকের এমন আচরণের কথা বলে কাঁদতে থাকে। ডালিমের মামাতো ভাই রোমেল জানান, ডালিম মোবাইল ফোনে শিক্ষকের এমন আচরণের কথা জানাতে গিয়ে কাঁদতে থাকে।

ডালিমের মা ফুলি বেগম জানান, মেয়েটা খুব শান্ত। পড়ালেখায় বেশ মনোযোগী। ৫ ছেলে মেয়ের মধ্যে সবার ছোট সে। অভাব-অনটনের সংসারে গরুর দুধ বিক্রি করে পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে টাকা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু মাসুদ স্যার মেয়েকে বাঁচতে দেয়নি। তার কারণেই মেয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি করেন ফুলি বেগম। আমি মাসুদ স্যারসহ জড়িতদের শাস্তি চাই।

স্কুল পরিচালনা পর্ষদ’র সাবেক সদস্য কবরবাড়িয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম জানান, ডালিমের মৃত্যুর জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষই দায়ি। আমরা অভিভাবক হিসেবে এই ডালিমের মৃত্যুর জন্য অধ্যক্ষ ও সহকারী শিক্ষকের শাস্তি দাবি করছি।

অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক মামুনুর রশিদ মাসুদ জানান, ডালিম কখনই মডেল টেস্টের জন্য ফরম পূরণ করতে আসেনি। এমনকি টাকাও জমা দেয়নি। মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) প্রবেশপত্র নিতে আসার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। একই সঙ্গে আপত্তিকর কোনো কথাও বলেননি বলেও দাবি করেন তিনি।

অধ্যক্ষ মঞ্জুরুল ইসলাম ডাবলু বলেন, প্রবেশপত্র নিতে এসেছিল ডালিম। কিন্তু ফরম পূরণ না করায় সে পরীক্ষার সুযোগ হারিয়েছে। এতে আামদের গাফিলতির কোনো সুযোগ নেই।

এ ব্যাপারে জগতি পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ আল আমীন জানান, বিষয়টি শুনেছি। তবে ডালিমের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাইনি।

এদিকে বুধবার (১১ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে ডালিমের স্বজন ও এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে স্কুল ঘেরাও করে অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করে অধ্যক্ষ ও সহকারী শিক্ষক মাসুদের ওপর চড়াও হয়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় পরিস্থিতি শান্ত হয়।

ডালিম খাতুন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কবরবাড়িয়া গ্রামের আকবর আলী ফকিরের মেয়ে। ৫ ছেলে মেয়ের মধ্যে ডালিম সবার ছোট। এদিকে ডালিমের মৃত্যুতে শোকাবহ পরিবার। বাড়িতে বুধবারও চলছে আহাজারি। ভাই বোন আত্মীয়-স্বজনদেরও একই অবস্থা।