শিক্ষক নিয়োগের আবেদনে আয় ৪৪ কোটি টাকা

বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের আবেদন থেকে প্রায় ৪৪ কোটি টাকা আয় করেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। ৪০ হাজার শূন্য পদের বিপরীতে প্রায় ৩১ লাখ আবদেন জমা পড়েছে। এর মধ্যে ২৪ লাখের কিছু বেশি প্রার্থী আবেদন ফি বাবদ অর্থ জমা দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সারাদেশে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ৩৯ হাজার ৫৩৫ পদ শূন্য রয়েছে। ওইসব পদের বিপরীতে প্রাপ্ত আবেদন থেকে এখন জাতীয় মেধা তালিকা ধরে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। গত ১৯ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় অনলাইন আবেদন কার্যক্রম। বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত আবেদন কার্যক্রম চলে। প্রথম থেকে ১৪তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৬ লাখ ৮০ হাজার প্রার্থী আবেদন করেছেন ৩১ লাখ। গড়ে প্রতি জনের সাতটি করে আবেদন জমা হয়েছে।

এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যান এসএম আশফাক হুসেন বলেন, সারাদেশ প্রায় ৪০ হাজার শূন্য আসনে নিয়োগের জন্য প্রায় ৩১ লাখ আবেদন এসেছে। গড়ে প্রতি আসনে ৭টি আবেদন জমা হয়েছে। এর মধ্যে ২৪ লাখের কিছু বেশি প্রার্থী আবেদন ফি’র অর্থ জমা দিয়েছে। বুধবার রাত ১২টায় আবেদন শেষে ৭২ ঘণ্টা সময় দেয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ফি জমা না দিলে আবেদন বাতিল বলে গণ্য হবে। পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে শূন্যপদে নিয়োগের সুপারিশ করার কাজ শেষ হবে। কেননা এরপর অবশিষ্ট শূন্যপদে আরেকদফা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে। এ ছাড়া নতুন নিবন্ধন পরীক্ষা নেয়ার কাজ চলবে।

এনটিআরসিএ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে শূন্য পদে আবেদনকারীদের আবেদন যাচাই-বাছাই কাজ শেষ হবে। যাচাইতে অগ্রাধিকার পাবে বয়স। ২০১৮ সালের ১২ জুনে যাদের বয়স ৩৫ বছর পার হয়েছে তারা নিয়োগের জন্য বিবেচিত হবেন না। এ ছাড়া ২০১৮ সালের এমপিও নীতিমালার শর্ত পূরণ করতে হবে। এ নিয়োগে ইনডেক্সধারী (এমপিওভুক্ত) শিক্ষকদেরও আবেদনের সুযোগ দেয়া হয়েছে।

এনটিআরসিএ প্রমাণ পেয়েছে, এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কেউ কেউ জাল ইনডেক্স নম্বর ব্যবহার করে আবেদন করেছেন। যাচাইতে ওইসব আবেদনও বাতিল করা হবে।

সূত্র আরও জানায়, একটি প্রতিষ্ঠানে একটি পদের বিপরীতে একজনকেই নিয়োগের সুপারিশ করা হবে। ওই সুপারিশের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে এসএমএস করে জানিয়ে দেয়া হবে। নির্বাচিত ব্যক্তিকে একমাসের মধ্যে কাজে যোগদান করতে হবে। এরপর বিষয়টি এনটিআরসিএকে অবহিত করবে প্রতিষ্ঠান। একমাসের মধ্যে যোগদান না করলে মনোনয়ন বাতিল করে নতুন প্রার্থীর সুপারিশ করা হবে। এরপর নির্বাচিতদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটিকে মোবাইল ফোনে এসএমএস করে নির্বাচিতদের তথ্য জানিয়ে দেয়া হবে।

এদিকে শুধু আবেদন নিয়ে বাছাই করে প্রার্থী নির্বাচনের জন্য প্রতি আবেদনের জন্য ১৮০ টাকা করে ফি নেয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রার্থীরা। জসীম উদ্দীন নামে একজন প্রার্থী বলেন, একটি আবেদনে একটি প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের সুযোগ ছিল। এতে একজন প্রার্থীকে একাধিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে হয়েছে। তিনি ১৪টি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেছেন। ফলে প্রতিটির জন্য ১৮০ টাকা করে দিতে হয়েছে। বিসিএস বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে বিষয় পছন্দের মতো ব্যবস্থা করা হলে বেকারদের অনেক টাকা সাশ্রয় হতো। কেননা, দু’বছর পর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়ায় এবং চাকরি পাওয়ার আশায় তার মতো অনেকেই ১৫-২০টি করে আবেদন করেছেন। এতে এনটিআরসিএ’র ‘পোয়বারো’ হয়েছে।

ফের সার্কুলার মার্চে : এদিকে এনটিআরসিএ কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আরও অন্তত ২০ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য আছে। অনেক প্রতিষ্ঠান পদের চাহিদাপত্র দেয়নি। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানে অবসর, পদত্যাগ, মৃত্যুসহ নানা কারণে দৈনিকই শূন্য হয়ে যাচ্ছে। নতুন নিয়োগের পর বদলিজনিত কারণে অনেক পদ খালি হবে। সবমিলিয়ে শিগগিরই শূন্যতা পূরণের উদ্যোগ না নিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটতে পারে। এ কারণে নতুন সার্কুলার আসবে।

এ ব্যাপারে গত ২৮ নভেম্বর আলাপকালে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান বলেছিলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক শূন্যতা দূর করতে দু’টো নিয়োগ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। একটি বিজ্ঞাপন আগামী মাসে (ডিসেম্বর) দিয়ে ফেব্রুয়ারির মধ্যে কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। আরেকটা বিজ্ঞাপন মার্চ নাগাদ দেয়া হবে। উভয় পরীক্ষায় প্রথম থেকে চতুর্দশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া ২০১৯ সালে দু’টি নিবন্ধন পরীক্ষা নেয়ার চিন্তাভাবনা আছে।

উল্লেখ্য, প্রথম থেকে চতুর্দশ নিবন্ধন পরীক্ষায় ৬ লাখ ৮০ হাজার প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকে অন্য চাকরিতে চলে গেছেন।