শিক্ষার্থীদের জঙ্গি বলিনি, দুঃখিত : ঢাবি উপাচার্য

সরকারি চাকরিতে কোটাপ্রথা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জঙ্গি বলেননি দাবি করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আকতারুজ্জামান।

গত রোববার কোটা আন্দোলনের সঙ্গে জঙ্গিবাদকে তুলনা করে মন্তব্য করেন উপাচার্য। এ নিয়ে শিক্ষার্থীসহ তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

সমালোচনার মুখে তিন দিনের মাথায় মঙ্গলবার তিনি নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, আমি কোটা আন্দোলনকারীদের জঙ্গি বলিনি। আমি বলেছি শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম উগ্রপন্থী জঙ্গিদের সঙ্গে মিলে যায়। এর মানে এই নয় যে আমি শিক্ষার্থীদের জঙ্গি বলেছি।

অধ্যাপক আকতারুজ্জামান তার বক্তব্য সংবাদ মাধ্যমে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, পত্রপত্রিকায় যেভাবে বক্তব্য এসেছে তার জন্য আমি দুঃখিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো বহিরাগত ক্যাম্পাসে এসে ক্লাসপরীক্ষা বিঘ্নিত করে এমন কার্যক্রম করা যাবে না।

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে ক্যাম্পাসে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে রোববার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আকতারুজ্জামান।

ওই সময় তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনকারীরা ফেসবুক লাইভে এসে জঙ্গিদের মতো করে ভিডিওবার্তা দিয়ে কর্মসূচি বা কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেন। তাদের এমন মনোভাবের সঙ্গে জঙ্গি কর্মকাণ্ডের মিল আছে। তারা কারা? কোন রাজনৈতিক অশুভ শক্তি, আমরা তা জানি না। সেটা বের করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের সহায়তা করব আমরা।

তিনি বলেন, অনেক সুস্পষ্ট ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয় যে, একটি বড় অপশক্তি ক্রিয়াশীল আছে। উদাহরণ হিসেবে বলব- ফেসবুক লাইভে তাদের ভিডিওবার্তার কথা। আমার কয়েকজন সহকর্মী একটি লাইভ ভিডিও দেখিয়েছেন। সেটি দেখলাম। দেখার পর মনে হল— জঙ্গিগোষ্ঠী তালেবান ও বোকো হারাম যেমন ভিডিওবার্তার মাধ্যমে বিভিন্ন উসকানি ও নাশকতার অপপ্রয়াস নেয়, কোটা আন্দোলনকারীদের ভিডিওতেও ঠিক তেমন একটি প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়েছি।

উপাচার্য আরও বলেন, ভিডিওতে দেখা গেল আন্দোলনকারীরা একটি চেয়ারে বসা। সেখান থেকে বিভিন্ন কর্মপন্থার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। কর্মসূচি পালনের অনুরোধ জানানো হচ্ছে। এ বার্তায় একটি কথা আছে- ‘আমরা মৃত্যুকে ভয় পাবো না।’ এটি খুব উগ্র চরমপন্থী। এ ধরনের মতাদর্শ-ভাবাদর্শ প্রচারের ভিডিও আমি নিজে দেখেছি। এমন ভিডিও দুই-তিন ঘণ্টা পর পর ছাড়া হচ্ছে। জঙ্গি কর্মকাণ্ডের আরেকটি বহিঃপ্রকাশ হল- তারা অশুভ কাজ সম্পাদনের জন্য নারীদের ব্যবহার করে। একইভাবে কোটা সংস্কার আন্দোলনে মেয়েদের হলগুলোতে গভীর রাতে ২০-২৫ ছাত্রীকে দিয়ে উচ্চস্বরে চিৎকারের মাধ্যমে মিছিল করানো হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পরিপন্থী কোনো ধরনের কাজ আমরা বরদাশত করব না।

উপাচার্যের এ ধরনের বক্তব্যের পর ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিকমাধ্যম তরুণ প্রজন্ম তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। অনেকে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যের জন্য উপাচার্যের পদত্যাগও চেয়েছেন।

এ নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই সোমবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, কোটা আন্দোলনকারীদের সব কাজই ‘জঙ্গিবাদের বহিঃপ্রকাশ’ বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি (উপাচার্য) ড. আখতারুজ্জামান যে বক্তব্য দিয়েছেন তার সঙ্গে আওয়ামী লীগ বা আমি পুরোপুরি একমত নই।

তিনি বলেন, আন্দোলনের সময় ভিসির বাড়িতে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে তা পুরোপুরি জঙ্গি স্টাইলে হয়েছে। কিন্তু পুরো আন্দোলন জঙ্গিবাদের বহিঃপ্রকাশ বলে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তার সঙ্গে ঢালাওভাবে আমি একমত নই।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি বেশ কিছু দিন অসুস্থ ছিলাম। তেমন একটা খোঁজখবর রাখতে পারিনি। তবে বলব- কোটা সংস্কারে প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়টি জটিল প্রক্রিয়া, সময় লাগবে। তবে কোটা সংস্কারের বিষয়ে সরকারের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় কমিটি কাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতদিন কমিটি ছিল না। এখন ক্যাবিনেট সেক্রেটারির নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে, ইতিমধ্যে বৈঠকও করেছে। তারা কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবে। দেশেই বাইরে থেকেও অভিজ্ঞতা নেয়া হবে। সুতরাং আন্দোলনকারীদের বলব- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায় আস্থা রাখুন।