শিশুকে ‘ডব্লিউ পজিশনে’ বসতে বারণ করুন

শিশুদের বসার অন্যতম একটি ভঙ্গিমা হচ্ছে ‘ডব্লিউ পজিশন’। এক্ষেত্রে তারা দুই পা পিছনে মেলে এমনভাবে বসে যা দেখতে ইংরেজি বর্ণ ‘ডব্লিউ’ এর মতো লাগে। আপনার শিশু এ পজিশনে বসলে আপনি কি মানা করেন? হয়তো করেন না।

ডাক্তার ও পিতামাতাদের মধ্যে ডব্লিউ পজিশন নিয়ে বিতর্ক নতুন কোনো বিষয় নয়। এ পজিশনে বসা শিশুদের প্রকৃতিগত স্বভাব। বিশেষ করে তারা যখন টিভি দেখে বা খেলনা নিয়ে মেঝেতে বা সমতলে খেলা করে তখন এ পজিশনে বসে থাকে। তারা হাঁটু গেড়ে না বসে, দুই পা পেছনে রেখে সমতলে বসে। এ পদ্ধতিতে বসার পক্ষে-বিপক্ষে অনেক মতামত রয়েছে।

মিরর অনলাইনে সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে লন্ডনের ডাক্তার অ্যাভনি ট্রিভেডি বলেন, ডব্লিউ পজিশনে বসার উদ্বেগজনক ফল পাওয়া গেছে। কিন্তু সমস্যা শুধু এই একটি পজিশনে সীমাবদ্ধ নেই। আরো অনেক পজিশন রয়েছে যা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

ড. ট্রিভেডি একজন অস্টিওপ্যাথ বা পেশি ও হাড় বিশেষজ্ঞ। তিনি মিরর অনলাইনকে বলেন, ডব্লিউ পজিশন ক্রমবর্ধমান জয়েন্টে (যেমন- হাঁটু ও নিতম্ব) চাপ প্রয়োগ করে। তিনি আরো বলেন, এটি বিশেষ করে শিশুদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ এতে তারা ডাবল-জয়েন্টেড (অস্বাভাবিক নমনীয় জয়েন্ট) হয়ে যেতে পারে। এ পদ্ধতিতে বসলে কোমরে চাপ পড়ে ও পায়ে খিল ধরতে পারে যা বেদনাদায়ক হতে পারে।

বিপদ শুধুমাত্র ডব্লিউ পজিশনে বসলেই আসে না। ড. ট্রিভেডি সতর্ক করে বলেন, যেভাবেই বসুন না কেন, দীর্ঘসময় বসা নিষেধযোগ্য। এতে ঘাড়, কাঁধ ও ওপরের পিঠে অত্যধিক চাপ পড়তে পারে।

হ্যাসেনফেল্ড চিলড্রেনস হসপিটালের অর্থোপেডিক সার্জন ড. পাবলো ক্যাস্টেনেডা শিশুদের ডব্লিউ পজিশনে বসার কারণ ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, উরু হেলা বা কাত হওয়ার কারণে ডব্লিউ পজিশনের সৃষ্টি হয় যেখানে উরুর ওপরের হাড় সম্মুখদিকে হেলে বা কাত হয়ে যায় যা হাঁটুর সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত।’ এটি শিশুদের জন্য প্রকৃতিপ্রদত্ত এবং বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা তা কাটিয়ে ওঠে।

ড. ক্যাস্টেনেডা বলেন, কিছুক্ষেত্রে উরুর অত্যধিক হেলে যাওয়া বা কাত হয়ে যাওয়া হিপ ডিসপ্লেজিয়ার উপসর্গ হতে পারে যা আর্থ্রাইটিস বা সন্ধিপ্রদাহ হওয়ার প্রধান কারণ। যদি শিশুর ডব্লিউ পজিশন দেখতে সামঞ্জস্যহীন বা বেমানান লাগে, যেমন- শিশুর একপাশের শরীর আরেকপাশে পড়লে ধারণা করতে হবে এটি অন্তর্নিহিত কোনো সমস্যার লক্ষণ।

আপনার বাচ্চারা যদি ডব্লিউ পজিশনে বসে তাহলে এ অভ্যাস দূর করার চেষ্টা করুন। তাদেরকে বসার জন্য তাক বা আসন দিন যাতে তারা ক্ষতিকর বসার ভঙ্গি ত্যাগ করে। ট্রিভেডি পরামর্শ দেন যে, শিশুদেরকে দুই পা ফাঁক করা যায় এমন আসন বা বেঁটে আসন কিংবা তাদের দুই হাঁটুর ওপর ভর দিয়ে বসাতে। তিনি শিশুদের মা-বাবার উদ্দেশ্যে বলেন যে, তারা যেন বাচ্চাদের খেলা, স্কুলের পাঠ তৈরি বা অনুশীলনের সময় বসাতে ভারসাম্য বজায় রাখার ব্যাপারে খেয়াল রাখেন। যদি আপনার বাচ্চা ক্ষতিকর অভ্যাসের দিকে ধাবিত হয় তাহলে ডাক্তারকে দেখান।