শুধুমাত্র মানুষের স্বপ্ন খেয়েই বেঁচে থাকে এই জীব, জানাচ্ছে চিনা কিংবদন্তি

দেখতে ভয়ানক হলেও এরা নাকি তেমন ভয়ের কিছু নয়। বরং এদের কল্যাণে একটা ঘোরতর ভয়ের ব্যাপারই সমূলে বিনাশ পায়। ‘বাকু’ নামের এই আজব ও কল্পিত প্রাণীটিকে ঘিরে এই বিশ্বাস চিন, জাপান-সহ পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের।

যে কোনও জাপানি, চিনা বা তিব্বতি বুদ্ধমন্দিরের থামে বা দেওয়ালে শোভা পায় এদের ছবি বা মূর্তি। বাকু-কে দেখেতে যারপরনাই কিম্ভুত। এমনকী সুকুমার রায়ের ‘আবোল তাবোল’-এর ‘কিম্ভূত’-এর সঙ্গে এর ব্যাপক মিলও রয়েছে। কে জানে, রায়মশাই বাকুর ছাঁদ থেকেই আইডিয়া পেয়েছিলেন কি না! বাকুর দেহ ভালুকের, নাক বা শুঁড় হাতির, থাবা বাঘের, লেজ ষাঁড়ের।

এর উৎপত্তি চিন দেশে হলেও ১৪-১৫ সতকের জাপানি সংস্কৃতিতে বাকু বেজায় জনপ্রিয়তা পায়। বাকু-কে ‘প্রাণী’ হিসেবে যদিও মানতে রাজি নয় চিনা বা জাপানি ঐতিহ্য, তবু বিশ্বাস অনুসারে এরা দেহধারী জীব। কিংবদন্তি মতে, ঈশ্বর সব প্রাণী তৈরি করার পরে যে দেহাংশগুলো এক্সট্রা ছিল, সেগুলো জুড়েই তৈরি করেন বাকু।

চিন দেশের লোককথা জানায়, বাকুকে শিকার করে যদি কেউ তার চামড়া দিয়ে কম্বল বানায়, সেই কম্বলের আজব সব গুণাবলি থাকবে। সেই কম্বল গায়ে দিযে ঘুমোলে ভূত-প্রেতের হাত থেকে পার্মানেন্টলি ছাড় পাওয়া যায়। কিন্তু বাকুর গুণ এখানেই শেষ নয়। তার আসল বৈশিষ্ট্য হল— সে ‘স্বপ্নভুক’।

বাকু-র প্রাধান আহারই হল মানুষের দেখা স্বপ্ন। জাপানের কিংবদন্তি অনুসারে, কোনও ব্যক্তি যদি দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে ওঠেন, তাঁর বাকুকে ডাকা প্রযোজন। তেমন আন্তরিক ভাবে ডাকলে বাকু এসে তার দেখা দুঃস্বপ্নটি কচমচিয়ে খেয়ে যায়। আর তার পরে সেই ব্যক্তি বাকি রাতটা নিশ্চিন্তে, নির্বিঘ্নে ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোতে পারেন। আজও বাচ্চারা স্বপ্ন দেখে জেগে উঠলে চিন-জাপান-কোরিয়ার মায়েরা বাকু-কে ডাকেন।

স্বপ্নভুক বাকুর সমস্যা একটাই, সে দুঃস্বপ্ন খাওয়ার সময়ে সেই ব্যক্তির আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলেকেও সাবড়ে দেয়। সেক্ষেত্রে সেই ব্যক্তির জীবনটা কেমন ম্যাদামারা হয়ে যায়।

অনেকেই মনে করেন, বিখ্যাত অ্যানিমেশন সিরিজ ‘পোকেমন’-এর ড্রাউজি বা মুন্না চরিত্রগুলির অনুপ্রেরণা হল বাকু।