শুভ জন্মদিন এটিএম!

ঈদের ছুটি পড়ে গেল তিন থেকে চারদিনের। ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাবে। চেক দিয়ে টাকা তুলে নিতে হবে দ্রুত। শৈশবে হয়তো বাবা ও মাকে এ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তে দেখতেন। কিন্তু আপনার জমানায় কী হচ্ছে? ব্যাংক বন্ধ তাতে কী? পকেটে আছে এটিএম কার্ড। আর পাড়ার মোড়েই আছে এটিএম! ছুটি হোক, আর রাত তিনটা বাজুক, টাকা হাতে চলে আসে চোখের নিমেষে।

ওই অটোমেটেড টেলার মেশিন বা এটিএমের ৫০তম জন্মদিন ছিল গতকাল মঙ্গলবার। আজ থেকে ৫০ বছর আগে ১৯৬৭ সালের ২৭ জুন লন্ডনে যাত্রা শুরু হয় ওই টাকা তোলার যন্ত্রের। ইংল্যান্ডের বার্কলেজ ব্যাংক প্রথম ব্যবহার করেছিল এটিএম। নর্থ লন্ডনের এনফিল্ডে বার্কলেজের একটি শাখায় প্রথম স্থাপন করা হয় এটিএম। কমেডি অভিনেতা রেগ ভার্নে ওই এটিএমের উদ্বোধন করেন। তখন একবারে ১০ পাউন্ড তুলতে পারত মানুষ। একে ক্যাশ মেশিনও বলা হয়।

কার মাথায় এল এটিএম

এটিএম মেশিনের উদ্ভাবন বললেই আসে স্কটিশ বিজ্ঞানী শেফার্ড ব্যারনের নাম। ব্যারন ভাবতেন চকলেট যদি যন্ত্রের মাধ্যমে বের করে আনা যায় তবে টাকা কেন নয়? সেই থেকে ভাবনা শুরু। ১৯৬৭ সালে যাত্রা শুরু হওয়া বার্কলেজের এটিএমে ঠিক কার্ড ব্যবহার করেননি ব্যারন। কার্বনের একটি কাগজ ব্যবহার করা হয়। ওই কাগজে লেখা নম্বরই পড়ে নিত যন্ত্রটি।

গোপন নম্বর কী হবে তা নিয়েও মজার গল্প আছে। শেফার্ড ব্যারন পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে লাগলেন কত ডিজিট দেওয়া যায়। তাঁর পছন্দ ছিল ছয় ডিজিটের কোনো নম্বর। তিনি ব্যাপারটা নিজের স্ত্রীকে দিয়ে পরীক্ষা করলেন। তাঁর স্ত্রী ক্যারোলিন চারটি ডিজিট পর্যন্ত মনে রাখতে পারলেন। এরপর চার ডিজিটের গোপন নম্বরই ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে কিন্তু পিন (পার্সোনাল আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) চার ডিজিটেই ব্যবহৃত হয়।

ব্যারন সম্পর্কে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে। তাঁর জন্ম হয়েছিল ১৯২৫ সালে ভারতের শিলংয়ে! ২০১০ সালে তিনি মারা যান।

শেফার্ড ব্যারনকে একা কৃতিত্ব দেওয়াটা ঠিক হবে না। বিবিসির করা এক প্রতিবেদনে অন্তত তাই বলা হয়েছে। ব্যারনের আগেও এটিএম করার বিষয়টি মাথায় ঘুরছিল জেমস গুডফেলোর। তিনিও স্কটিশ বিজ্ঞানী।

ব্যারনের এটিএম স্থাপনের এক মাসের মাথায় গুডফেলোর উদ্ভাবন করা এটিএম স্থাপন করা হয়। ওয়েস্টমিনস্টার ব্যাংকের একটি শাখায় ওই এটিএম স্থাপন করা হয়। ওই ব্যাংকটি বর্তমানে ন্যাটওয়েস্ট ব্যাংক নামে পরিচিত।

এটিএম প্রযুক্তি আধুনিক করার ক্ষেত্রে গুডফেলোর কৃতিত্ব অনেক। বর্তমানে যে প্রযুক্তি চালু তার অনেক কিছুই গুডফেলোর। বিশেষ করে প্লাস্টিক কার্ডের ব্যবহার ও পিন নম্বরসহ চিহ্নিত করার বিষয়টির তিনিই আধুনিক ধারণা দিয়েছেন।

ব্রিটিশ সরকার দুই বিজ্ঞানীকেই কৃতিত্ব দিয়েছেন। ২০০৫ সালে শেফার্ড ব্যারন ব্রিটিশ সরকারের স্বীকৃতি লাভ করেন। তাঁকে বলা হয় ‘অটোমেটিক ক্যাশ ডিসপেনসারের উদ্ভাবক’।

২০০৬ সালে গুডফেলো একই স্বীকৃতি লাভ করেন। তাঁকে বলা হয়, ‘পারসোনাল আইডেন্টিফিকেশন নম্বরের স্বত্বাধিকারী।’

বিপদে বন্ধুর পরিচয়

১৯৭৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্রের সিটি ব্যাংক একটি ঝুঁকি নেয়। নিউইয়র্কের নিজেদের এটিএমে ১০০ মিলিয়ন ডলার রেখে দিল। এর কিছু দিন পরই প্রচণ্ড তুষারপাত শুরু হয়। বরফে ঢেকে যায় পুরো নিউইয়র্ক। বন্ধ হয়ে যায় ব্যাংক। এ সময় এটিএমই অন্যতম ভরসা হয় মানুষের। এর পরই বেড়ে যেতে থাকে এটিএম ব্যবহারকারীর সংখ্যা।

দ্য হিস্ট্রি চ্যানেল জানায়, এরপর সিটি ব্যাংক শুরু করে বিখ্যাত প্রচারাভিযান। সিটি ব্যাংক স্লোগান ব্যবহার করল, ‘দ্য সিটি নেভার স্লিপস’ (সিটি কখনো ঘুমায় না)।

সারা বিশ্বে এখন ত্রিশ লাখের মতো এটিএম আছে। বিবিসি জানিয়েছে, পশ্চিম ইউরোপে এটিএম সবচেয়ে বেশি পর্তুগালে। প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য এক হাজার ৫১৬টি এটিএম আছে। ব্রিটেনে ৯৪ শতাংশ মানুষ এটিএম ব্যবহার করে।

বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি এক লাখ মানুষের জন্য প্রায় সাতটি এটিএম আছে। একই সংখ্যক মানুষের জন্য ভারতে আছে প্রায় ২০টি, পাকিস্তানে আছে নয়টি, শ্রীলংকায় আছে ১৭টি এটিএম।

বার্কলেজ এটিএমের যাত্রা শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে গর্ববোধ করছে ব্যাংকটি। ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাহেল আহমেদ বলেন, ‘ ক্যাশ মেশিনের ইতিহাসে বার্কলেজ যে ভূমিকা রেখেছে তার জন্য আমরা গর্বিত।’

এটিএমের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কটা কেমন? আইরিশ পত্রিকা ‘দ্য আইরিশ টাইমসে’র দেওয়া এক শিরোনামে বোঝা যাবে বিষয়টা। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘এটিএমের বয়স এখন ৫০, শুভ জন্মদিন বন্ধু।’