শেখ হাসিনাকে ওবায়দুল কাদেরের অভিনন্দনপত্র

টানা তৃতীয়বারের মতো বিজয়ী হওয়ায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে অভিনন্দনপত্র দিয়েছে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

শনিবার (১৯ জানুয়ারি) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিজয় সমাবেশে শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে প্রথমে অভিনন্দনপত্রটি পাঠ করেন তিনি।

অভিনন্দনপত্রে বলা হয়, ‘আজ আমাদের গর্বের দিন। যে ঐতিহাসিক উদ্যোনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদাত্ত আহ্বানে মুক্তির শপথ নিয়েছিল বাংলার মুক্তিকামী মানুষ- সেই প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানাই আমাদের প্রাণপ্রিয় জননেত্রী শেখ হাসিনা আপনাকে। মৃত্যুর মিছিলে দাঁড়িয়ে আপনি কতবার গেয়েছেন জীবনের জয়গান। ধ্বংসস্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে আপনি বার বার উড়িয়েছেন সৃষ্টির পতাকা। উত্তাল সাগরে প্রগাঢ় অন্ধকারে বাঙালির বাতিঘর জননেত্রী শেখ হাসিনা আপনাকে অভিবাদন। সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশকে আপনি সেই উচ্চতায় নিয়ে গেছেন যা আজ বিশ্বের বিস্ময়। সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নে আপনি নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন, আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সমৃদ্ধ দেশ নির্মাণের ব্রত নিয়ে- সতর্ক প্রহরীর মতো আপনি জেগে থাকেন বলে বাংলাদেশ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নবাহু আপনি এই দেশমাতৃকাকে তার আপন সত্তায় ফিরিয়ে এনেছেন। আপনি বলেছিলেন, এই মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে- আপনি এও বলেছিলেন, এই মাটিতে বিচার হবে বঙ্গবন্ধুর ঘৃণিত খুনিদের। কথা দিয়ে কথা রাখার রাজনৈতিক সংস্কৃতি আপনি ফিরিয়ে এনেছেন। আপনার আলোকসঞ্চারী দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সৎ সাহসী নেতৃত্বের বিভায় উদ্ভাসিত আজ বাংলাদেশ। জনগণ তাদের রায়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণ দিয়েছেন তারা স্বাধীনতাবিরোধী-সাম্প্রদায়িকতামুক্ত বাংলাদেশের পক্ষে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অবিনাশী-চিরভাস্বর।

আপনার প্রজ্ঞাবান নেতৃত্বের গুণে কেবল জল-স্থল নয় অন্তরিক্ষেও আজ আমাদের গৌরবময় বিচরণ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাঙালি বলে পরিচয় দিতে আজ আমরা অহংকার বোধ করি। মৃত্যুর মুখে পতিত দশ লাখের অধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে আপনি আজ ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ উপাধিতে ভূষিত। যতদূর প্রসারিত বঙ্গোপসাগর তার চেয়েও বড় স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশকে আরও একটি নতুন শতাব্দীর উপযোগী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আপনার গৃহীত ডেল্টা প্ল্যান নতুন প্রজন্মকে আত্মবিশ্বাসী করেছে। আজ আপনি শুধুমাত্র একজন রাজনৈতিক নেতা নন, আপনার উচ্চতা আজ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বিশ্ব নেতৃত্বের কাতারে। বিশ্ব শান্তির জন্য জাতিসংঘে প্রস্তাবিত আপনার শান্তি-মডেল আগামী প্রজন্মের জন্যেও এই সত্যকে তুলে ধরে- ‘তোমার জন্য এনেছি আমার আজন্ম সূযোদয়’।

আপনার সুযোগ্য নেতৃত্বে আমরা আমাদের হারিয়ে যাওয়া উজ্জ্বল দিন ফিরে পেয়েছি। হাজার বছরের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির ঐতিহ্য বহনকারী একটি জাতি যখন স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ- সেই মাহেন্দ্র ক্ষণে বঙ্গবন্ধু এনে দিয়েছিলেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, একটি উজ্জ্বল পতাকা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল সেই গৌরবের কাল- একটি জাতি আঁতুড়ঘরে পথ হারিয়ে ফেলেছিল।

আপনি সেই দেশ, সেই জাতিকে স্পর্ধিত সাহস, আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিয়েছেন। বিশ্বের বুকে আমরা আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছি। বাঙালির এই নবযাত্রায়, সীমার মাঝে অসীমের আবাহনে আপনার কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে প্রায় ১৭ কোটি প্রাণ সমস্বরে এই সত্য বাণী উচ্চারণ করবো- ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’।

আপনারই হাত ধরে আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং আমাদের গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করবো।

প্রিয় নেত্রী,

আপনার জয়, বাঙালির জয়।

আপনার কল্যাণ হোক, মঙ্গল হোক। দীর্ঘ হোক আপনার কর্মময় জীবন।

আওয়ামী লীগের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার হাতে অভিনন্দনপত্র তুলে দেন ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

উল্লেখ্য, ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৫৭টি আসনে জয় পায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করেছে দলটি। শেখ হাসিনা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। ভোটের ১৯ দিন পর আজ বিজয় উৎসব উদযাপন করছে আওয়ামী লীগ।