শেখ হাসিনার সেই গাড়িটি এখন ভিভিআইপি প্রটোকলে

২১ আগস্ট, ২০০৪। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন হয় আওয়ামী লীগ। এরপর বুলেট প্রুফ সেই মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়িটি বঙ্গভবনের পরিবহন পুলে দিয়ে দেওয়া হয়। আর এখন বঙ্গভবন ও গণভবনের ভিভিআইপি প্রটোকলে ব্যবহৃত হচ্ছে গাড়িটি। শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত গাড়িচালক আলী হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ নূর হোসেনের ভাই তিনি।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকাল সাড়ে চারটার দিকে ধানমন্ডির সুধাসদন থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশের উদ্দেশে বের হন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার বাহন ছিল আকাশি রঙের মার্সিডিজ বেঞ্জ। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে যুক্তরাজ্য প্রবাসী রাজনৈতিক শুভাকাঙ্ক্ষীরা বুলেট প্রুফ মার্সিডিজ বেঞ্জ ওই গাড়িটি উপহার দিয়েছিলেন তাকে। ঘটনার দিন এই গাড়িটিও তার জীবন রক্ষায় ভূমিকা রাখে।সমাবেশ শেষ হওয়ার আগে ৫টা ২২ মিনিটে তিন দিক থেকে একযোগে গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গিরা।

আলী হোসেন বলেন, ‘ওই দিন আওয়ামী লীগ সভাপতির গাড়িটি চালাচ্ছিলেন মতিন নামে একজন সরকারি চালক। সে সময় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন শেখ হাসিনা। আমরাও গাড়িটি চালাতাম। তবে রোটেশন অনুযায়ী গাড়িটি সেদিন চালাচ্ছিলেন চালক মতিন।’

মতিনের উদ্ধৃতি দিয়ে আলী হোসেন বলেন, ‘গ্রেনেড হামলার পর মানবঢাল তৈরি করে শেখ হাসিনাকে রক্ষার চেষ্টা করেন দলীয় নেতাকর্মীরা। হামলার এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ সভাপতিকে তার গাড়িতে তোলা হয়। নেত্রী সুধাসদনে যেতে চাচ্ছিলেন না। সেখানে (বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে) সর্বশেষ কী অবস্থা হয়, তা তিনি সরেজমিনে দেখতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু তাকে একরকম জোর করেই গাড়িতে তোলা হয়। গাড়িটির চাকা গুলি লেগে পাংচার হয়ে গিয়েছিল। গ্লাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রচণ্ড স্নায়ুচাপ নিয়েই চালক মতিন সেদিন আওয়ামী লীগ সভাপতিকে নিয়ে সুধাসদনে পৌঁছেছিলেন।’

সেদিনের স্মৃতি স্মরণ করে আলী হোসেন বলেন, ‘সেদিন নেত্রীর বহরের একটি লাল রঙের নিশান জিপ চালানোর দায়িত্ব ছিল আমার। বিকট শব্দে জিপটির সব গ্লাস ভেঙে যায়, জখম হয় আমার পা। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এলোমেলো ছুটোছুটি করছিলেন। গ্রেনেডের স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়েছিলেন অনেকে। এমন ভয়াবহ দৃশ্য আগে-পরে আর কখনও দেখিনি আমি। আমার কাছে মনে হচ্ছিল কেয়ামত নেমে এসেছে।’

আলী হোসেন বলেন, আমি আমার দায়িত্বে থাকা ভাঙা গাড়ি নিয়েই প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ অন্য আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আইভী রহমান মারা যান।’

আওয়ামী লীগ সভাপতির সেই গাড়ির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মামলার আলামত হিসেবে সিআইডি গাড়িটি সুধাসদনেই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছে। এক পর্যায়ে বিদেশ থেকে লোক এনে গাড়িটি মেরামতও করা হয়। পরে বঙ্গভবনের পরিবহন পুলে সেটি দিয়ে দেওয়া হয়। গাড়িটি এখন বঙ্গভবন ও গণভবনের ভিভিআইপি প্রটোকলে ব্যবহৃত হচ্ছে।’