শেখ হাসিনায় আস্থা বাড়ছে

‘গণতন্ত্র রক্ষার নির্বাচন’, ‘বালুর ট্রাক ঠেকিয়ে নির্বাচন’, ‘ভোটারহীন নির্বাচন’, ‘জ্বালাও-পোড়াওয়ের নির্বাচন’এমন সব তকমাই জুটেছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের ললাটে। আস্থা-অনাস্থার এ নির্বাচনকে ঘিরে শত অনিশ্চিয়তাও তৈরি হয়। বিরোধী জোটের হরতাল-অবরোধে ধ্বংসলীলায় রেকর্ড গড়ে।

আজ সবই যেন ইতিহাস। সমস্ত চ্যালেঞ্জ আর শঙ্কা পায়ে মাড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার। সফলতার ঝাণ্ডা হাতে নিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাড়িয়ে চলছেন দেশের মর্যাদা।

৫ জানুয়ারির পরপরই আরেকটি নির্বাচনের দাবি ছিল। নির্বাচনের কথা উঠেছিল সরকার দলীয় শিবির থেকেও। সে কথাও আজ ইতিহাস। আগাম নির্বাচনের আর তাগিদ নেই। জনগণও প্রায় ভুলে গেছেন সে দিনের কথা। সহিংসতার কথা ভুলে মানুষ আজ উন্নয়নের কথা শুনছেন। শুনছেন, এগিয়ে যাওয়ার গল্প। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই মেলে ধরছেন শত উন্নয়নের গল্প।

গহীন পদ্মার বুক চিরে দৃশ্যমান হয়েছে স্বপ্নের পদ্মাসেতু। রাজধানীতে মেট্রোরেলের স্বপ্ন এখন বাস্তবায়নের পথে। খাদ্য নিরাপত্তায় প্রশংসা মিলছে বিশ্ব সংস্থার। জঙ্গি-সন্ত্রাস নির্মূলে জিরো টলারেন্স। কৌশলী পররাষ্ট্রনীতিতে বিরোধী শিবিরকেও বাগে আনতে সক্ষম হচ্ছে সরকার। দশ লাখ রোহিঙ্গার আশ্রয় এখন বাংলাদেশে। সরকারের নানা সফলতা আর এগিয়ে যাওয়ার কথা মিলছে জনমুখেও।

সরকারের চার বছর পূর্ণ হয়েছে আজ (১২ জানুয়ারি)। বিতর্কিত এক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ২০১৪ সালের এ দিনে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। দুই মেয়াদে টানা ক্ষমতায় থেকে রেকর্ডও গড়লেন শেখ হাসিনা।

বিরোধী শিবিরকে অবরুদ্ধ করে রাজনীতির মাঠে এখন শুধুই আওয়ামী লীগ। সরকারের মারমুখী অবস্থানে বিরোধীজট পরাস্ত হয়ে অনেকটাই ঘরমুখো। সময় গড়াচ্ছে আর অধিক আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছে সরকার। ফলে সরকারি দল আওয়ামী লীগ আর কাউকেই প্রতিপক্ষ ভাবছে না।

সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতে এমনটি ছিল না। হালে পানি ছিল বটে, তবে পর্যাপ্ত নয়। শঙ্কা ছিল, ছিল উদ্বেগও। কি হতে যাচ্ছে? কলহের রাজনীতিতে দেশ কি ফের তিমিরে-এমন সব প্রশ্নে ঘুরপাক খাচ্ছিল রাজনীতি। শুরু ২০১৩ সালে। সর্বত্রই অনিশ্চিয়তা। রাজনীতির মারমুখী অবস্থানে জনজীবন যেন ওষ্ঠাগত।

একদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির জোটগতভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন, অন্যদিকে স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামী এবং তার ছাত্র সংগঠন শিবিরের পক্ষ থেকে মানবিরোধী অপরাধে বন্দী নেতাদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন।

রাজনীতিতে চলতি শতকের বড় সংযোজন হেফাজতে ইসলাম আর গণজাগরণ। সব মিলে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগ পর্যন্ত অস্থির সময় পার করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। অমন অস্থির ঘোরেই বিএনপিকে আটকে রেখে ফের মসনদে বসে মহাজোট সরকার। ওই নির্বাচন নিয়ে আগে-পরে দেশ-বিদেশে তখন তুমুল বিতর্ক। তবে নির্বাচন বিতর্ক থোরাই করেনি সরকার। পাশের দেশ ভারতকে সঙ্গে পেয়ে মহাজোট সরকার তোলার মাটি শক্ত করতে থাকে।

ক্ষমতায় এসে হালে পানি নিয়ে সরকার উবে দেয় আগাম নির্বাচনের দাবি। চাঁপা দেয় নিজেদের দেয়া প্রতিজ্ঞাও। নিয়ম রক্ষার নির্বাচনই হয়ে ওঠে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার নির্বাচন। জাতীয় ওই নির্বাচনের পরপরই উপজেলা নির্বাচন দিয়ে সরকার স্থানীয় শক্তিকেও বাগে আনতে থাকে। এরপরেও সরকার পতনের আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু সরকারের দমনপীড়নের কাছে ধোপে টেকেনি সে আন্দোলন।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, যেন এক অদম্য গতিতে। শঙ্কা, আতঙ্ক কাটিয়ে ফিমেয়াদের সরকার আজ অনেক আত্মবিশ্বাসী। যেন সমস্যাকে উপভোগ করার নীতি অবলম্বন করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতৃত্বকেও চ্যালেঞ্জ করছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা উন্নয়ন এবং গণতন্ত্র উভয়ে বিশ্বাসী। স্বাধীনতার পর এত উন্নয়ন আর কোনো সরকারের আমেলে হয়নি। আমাদের আত্মবিশ্বাস আমাদের উন্নয়ন।

দলের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, উন্নয়ন, রাজনীতি আর গণতন্ত্রের প্রশ্নে আওয়ামী লীগের দায় আছে। এ দায়ের কারণেই আওয়ামী লীগ আজ জনআস্থা তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছে। উন্নয়ন প্রশ্নেও আমরা যেমন আর কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করি না, তেমনি রাজনীতির মাঠেও না।