শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক উদ্বোধন

উদ্বোধন করা হলো যশোরে অবস্থিত শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক। সিলিকনভ্যালির আদলে গড়া পার্কটিতে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের সব সুযোগ-সুবিধা।

এই পার্কে পাঁচ সহস্রাধিক আইটি প্রফেশনালের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে খুলে গেল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের তরুণদের সম্ভাবনার দরজা।

রোববার দুপুরে গণভবন থেকে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক ডরমিটরিতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পার্কের শুভ উদ্বোধনী ঘোষণা করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর পাশে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি সাবমেরিন ক্যাবল, ব্রডব্যান্ড সংযোগ ও প্রযুক্তির বিকাশে ঘোর বিরোধী ছিল। বিএনপি ক্ষমতা দখল ও ভোগ-বিলাসে ব্যস্ত ছিল। ১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে জনগণকে প্রযুক্তির সেবায় এগিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। নতুন প্রজন্মকে প্রযুক্তি জ্ঞাননির্ভির করে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়। আমি নিজে কম্পিউটার শিখেছি ছেলে জয়ের কাছ থেকে। তার কাছ থেকে প্রযুক্তি বিষয়ে অনেক কিছু শিখেছি। পরামর্শ নিয়েছি।

২০০৯ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছি। এখন আর কেউ ডিজিটাল নিয়ে ব্যঙ্গ করতে পারে না। ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে সরকার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। শুধু যশোর নয়, ওই অঞ্চলের ১৩ জেলার তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থানের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হলো। এতে মেধা ও জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতির চাকা সচল হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করছিলেন, তখন তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। আমি পিতা, মাতা, ভাই হারিয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশ হারিয়েছে তার সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ। যে আশা-আকাঙ্ক্ষা স্বাধীনতার ৪৬ বছরের মধ্যে ২৯ বছর হেলায় হারিয়েছি।

হত্যা-ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যারা ক্ষমতা দখল করেছিল তারা স্বাধীনতা বিরোধীদের ক্ষমতায় বসিয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অনেক সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়েছিল। বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে তারা দেশে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতির সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে তাদের কোনো অবদান ছিল না। তারা অবদান রাখতে পারে নাই। রাখতে চায় নাই। তারা চেয়েছিল বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে। কিন্তু জনগণ সেই সুযোগ দেয়নি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে। দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারী দল ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন হয়। কারণ যারা সৃষ্টি করে, তারা কখনও তার সৃষ্টিকে ধ্বংস করতে পারে না। কিন্তু যারা সৃষ্টির বিরুদ্ধে থাকে, তারা ধ্বংস করতে পারে। বাংলাদেশ প্রথমে ২১ ও পরে ৮ বছর ধ্বংসের কব্জায় পড়ে গিয়েছিল।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গাজীপুরের কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। বিশাল জায়গাও নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তন হয়। বিএনপি ক্ষমতায় আসে। তারা আর উদ্যোগ নেয়নি। তারা যে নির্ধারিত জায়গায় দখল করে হাউজিং করেনি, এজন্য শুকরিয়া।

যশোরে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন যশোর-২ আসনের এমপি মনিরুল ইসলাম, যশোর-৩ আসনের এমপি কাজী নাবিল আহমেদ, যশোর-৪ আসনের এমপি রণজিৎ কুমার রায়, যশোর-৫ আসনের এমপি স্বপন ভট্টাচার্য্য, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর আনোয়ার হোসেন, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, যশোর পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের প্রকল্প পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যশোরে একটি বিশ্বমানের আইটি পার্ক স্থাপনের ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যশোরের বেজপাড়া শংকরপুর এলাকায় এ আইটি পার্কের নির্মণকাজ শুরু হয়।