শেষচিঠি | মহিউদ্দিন মাসুদ রানা

প্রিয় জান্নাতুন…
আজ হতে শত সহস্র বছর আগের কথা তোমার মনে আছে?মনে পড়ে?
জানো আমিও ভুলিনি কিছু….।
ভাল ভাল হাজার খানেক স্মৃতি আছে তোমার-আমার। হ্যাঁ আমাদেরই।
আচ্ছা সেদিনের কথা মনে আছে?তুমি ভাবছো কোনদিন….

আরে বলছি আমি….
তখনো বেলা পড়েনি,দুপুর ১২টা কি ১২.১৫ দিকে হবে।
তোমার সাথে সামান্য কথা কাটাকাটিতে রাগ করে নেমে গিয়েছিলাম মিনি কলেজের চার তলা হতে। আস্ত সাইকেলটাকে গলা চেপে ধরার মতো করে ধরে ধ্যারাং ধ্যাং শব্দ করে অমনি বাড়ি চলে গিয়েছিলাম। আর তুমি বিকেল ৩টা অবধি বসে বসে কেঁদেছিলে। খুব কাছের বন্ধুটির ফোন পেয়ে দৌঁড়ে ছুটে যাই তোমার কাছে। কি কান্নাই না কেঁদেছিলে আমাকে বুকে জড়িয়ে। আর আমি পাগলি বলে চিমটি কাটি আর তোমার জল টলমলানো চোঁখে আমি হাসি ফুটাই। এ’যেন গ্লানি মুছে যাওয়ার হাসি,এ’যেন চিরতরে আপন করে পাবার হাসি, আর কখনো কষ্ট দিবেনাতো তোমার এই কথাতে আমি একবার জীবিত মরে গেলাম নিজের কাছেই। শুধু এই ভেবেই কিভাবে কষ্ট দিলাম তোমায়!

আমি সেদিন দেখেছি আমার প্রতি তোমার ভালবাসা।
কেঁদেছিলাম তোমার অনুপস্থিতে আমিও,হ্যাঁ সেদিন রাত্রিবেলা। শুধু তোমাকে কাঁদিয়েছি বলে।

এর পর থেকে আর কখনো রাগ করে যাইনি।
ভালবাসা এতো বেশি গভীর হয়ে উঠে।
অহংকারে বলে নিলাম আমাদের মতো প্রেম পৃথিবীতে আর থাকতে পারেনা।

জিতে গেলো অহংকার, হেরে গেলো ভালবাসা।

আকাশ ভেঙ্গে কাচের টুকরার মতো হৃদয়ে বিঁধেছিল সেদিন, সেই টুকরো হৃদয় থেকে কুঁড়িয়ে নেওয়ার কেউ ছিলনা। কোনদিন জানো?
যেদিন তুমি আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলে অজানা কোনো কারনে।

বিলুপ্ত ভালবাসার শপথ করে বলছি,আমি আজো জানিনি ক কি ছিল প্রত্যাখ্যানের অজানা কারন।

দেখো কতো পচা আমি?
শুধু নিজেই বকবক করে যাচ্ছি,তুমি জানো এটা আমার পুরনো স্বভাব। হাসছো? এই শুনো….হাসবা না একদম।
আমি যে আবার প্রেমে পড়তে চাই না।
শেষে যদি তুমি আমার প্রিয় ভুল হয়ে বসো।

একটু বেশি আবেগি হয়ে যাচ্ছি। আসলে আমি বেশিই পচা।
এই বললে নাতো কেমন আছো তুমি?
বলবেইবা কেমনে,জিজ্ঞেস ই’তো করলাম না।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন কেমন কাটেগো কাসেম? কাসেম নাম শুনে বিব্রত হলে বুঝি?তোমাকে ডাকতাম এই নামে,কাসেম নামে। তোমার মনে আছে? মনে পড়ে?

আচ্ছা এখন জীবনে যে এসেছে বা জীবনে যাকে এনেছো সে কেমন ভালবাসে তোমায়? আমার চেয়ে বেশি না হলে কিন্তু খুব রাগ করবো।
আচ্ছা তুমি ঘেমে যাওয়ার পরে কি ফু দিয়ে কপালে ঠান্ডা আভা সৃষ্টি করে সে। নাকি তোমাকে ঘামতেই দেয় না?

নুডলস কি এখনো বেশি পছন্দের?নাকি ফাস্টফুড খেতে খেতে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বা অন্য কিছু প্রিয় হয়ে বসেছে।
মাছ বেশি পছন্দের ছিল তোমার,আর এখন? নাকি মাছ খাওয়া ছেড়েই দিছো?

সেদিন দেখলাম মাথার উপড় কি জানি অর্কিড ফুল মনে হয় ওই যে যেটা তুমি স্কাফের উপড় পড়েছিলে।১লা বৈশাখ ছিল সেদিন….
আমি কিভাবে দেখেছি ভাবছো,আরে দেখেছি দেখেছি।
আচ্ছা সেটা কি ফুল ছিল?
তোমার প্রিয় ফুলতো ছিল বেলী।
তবেকি ফুলের পছন্দ পালটে গেলো?
পালটে যাওয়াটা স্বাভাবিক।যেখানে তোমার তুমিটা পালটে
গেলো,সেখানে পছন্দ বৈকি।

আচ্ছা….
মাইগ্রেনের ব্যথা এখন উঠে?
আমার এখনো মনে পড়ে…
ব্যথা উঠলে বলতাম ফোন অফ করে দশ হাত দূরে রাখো।আর ঘুমাও।
তুমি বলতে, না চ্যাট করবো, নাহয় ফোন দাও।
কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে যাই।আমি ঠিক তাই করতাম।

আচ্ছা এখনো কি মাইগ্রেনের ব্যথা উঠলে তোমার এখনের প্রিয় মানুষটি বকাসকা করে ঘুমানোর জন্যে? তার সাথেও কি ফোনে কথা বলতে বলতে ঘুমাও?নাকি ব্যস্ততার রোষানলে পড়ে গেলে?
এভাবে প্রেম হয়,হ্যাঁ এভাবেই প্রেম হয়!

উফফ দেখো রাগ করে বসতেছি তোমার সাথে।
তোমার সাথে রাগ করার সে অধিকার আর আছে বলো?

তুমিতো একটা অধিকার দিয়েছো,তা শুধু ঘৃণা করার,কিন্তু ব্যস্ততার চাপে সেই ঘৃণাটাও করতে পারছিনা,
তুমিতো জানো কাউকে ঘৃণা করার জন্যেও নিজেকে সময় দিতে হয়। সেই ঘৃণিত মানুষের মিথ্যে আশ্বাস ভাবতে হয়,দেখানো স্বপ্নের অন্ধত্ব বুঝতে হয়, সে সময় কই আমার বলো?

এই।চুপ কেন?
আমি কেমন আছি জানতে চাইবে না?
আচ্ছা নিজ থেকে বলি,ভাল নেই আমি।
তুমি হয়তো ভাল আছো তোমার পৃথিবীতে।

আচ্ছা থাক….
আর কথা বাড়িয়ে কি হবে? কি হবে স্মৃতির স্মৃতিচারণে?
তুমিতো আমার বৃত্তের মাঝে রয়েও অন্য কারো আকাশ।
যে আকাশে স্বপ্ন বুনে অন্য কোনো প্রেমিক,যে আকাশে স্বপ্ন দেখাও অন্য কোনো প্রেমিকে!
আচ্ছা সে আকাশের রং কি হলুদ?
ঘুমিয়ে গেলে? আমি সেই লিখেই গেলাম। এবার তবে থামি, আর লিখছিনা।

চিঠির ইতি আঁকার আগে শেষ একটি কথা বলবো,
আমি তোমায় হাসতে শিখিয়েছি।
আর তুমি আমায় কাঁদতে শিখিয়েছ।
আমি কৃতজ্ঞ।
ভাল থেকো, ভাল রেখো।
আমি কৃতজ্ঞ।

ইতি…
ডান চোঁখের জল মুছে ফিরে আসা সেদিনের সেই প্রেমিক।