শেষ ওভারে মোস্তাফিজের অবিশ্বাস্য বোলিং, জয় বাংলাদেশের

এমন অবিশ্বাস্য ম্যাচও জিতে কেউ! পুরো ম্যাচের পরতে পরতে উত্তেজনায় ঠাসা। শেষ ওভারে মোস্তাফিজুর রহমান কী বোলিংটাই না উপহার দিলেন! শেষ ওভারে মাত্র ৮ রান প্রয়োজন আফগানদের। সেখানে তিনি রান দিলেন কেবল ৪টি। নিলেন একটি উইকেট। শেষ পর্যন্ত মাত্র ৩ রানের অবিশ্বাস্য এবং শ্বাসরুদ্ধকর এক জয়ে এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলার আশা টিকে রইলো বাংলাদেশের।

পেন্ডুলামের মত দুলছিল ম্যাচটা। বলের সঙ্গে রানের ব্যবধান ধীরে ধীরে কমিয়ে আনছিল আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানরা। প্রথমে মোহাম্মদ শাহজাদ, পরে আসগর আফগান এবং হাশমতউল্লাহ শহিদি। সর্বশেষ আফগান ব্যাটিংয়ের হাল ধরেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবি। বাংলাদেশের বোলারদের একের পর এক চেষ্টা ব্যর্থ করে দিচ্ছিলেন তারা। মাশরাফি বিন মর্তুজা মাঝে দু’বার সাফল্যের দেখা পেলেও অন্যরা হচ্ছিলেন ব্যর্থ।

৪৯তম ওভারে এসে দারুণ আরেকটি ব্রেক থ্রু উপহার দিলেন সাকিব আল হাসান। ফিরিয়ে দেন বাংলাদেশের জয় ধীরে ধীরে কেড়ে নিতে থাকা ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ নবিকে। ওভাররে দ্বিতীয় বলে সাকিবকেও বিশাল এক ছক্কা হাঁকিয়ে বসেন নবি।

ম্যাচটা একেবারে হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছিলেন এই ছক্কা মেরে। কারণ তখন ১০ বলে যে প্রয়োজন মাত্র ১২ রান! এমন মুহূর্তে সাকিবকে আরেকটি ছক্কা মারতে গিয়ে লং অফে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ধরা পড়েন নবি। ২৮ বলে ২ বাউন্ডারি আর ২ ছক্কায় ৩৮ রান করে ফেলেছিলেন তিনি।

তবুও শেষ ওভারে প্রয়োজন আফগানদের জয়ের জন্য প্রয়োজন হয় ৮ রান। বোলার মোস্তাফিজ। ব্যাটসম্যান রশিদ খান। প্রথম ম্যাচে যিনি মারকুটে ব্যাটিং করে বাংলাদেশের হাতের মুঠো থেকে খেলাটা বের করে নিয়েছিলেন। এবার মোস্তাফিজের প্রথম বল থেকে তিনি নিলেন দুই রান। ৫ বলে প্রয়োজন ৬ রান।

দ্বিতীয় বলেই মোস্তাফিজ শর্ট বলটিতে খুব সহজে বোকা বনে গেলেন রশিদ। বুক বরাবর বলটাতে মারতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে তুলে দিলেন ক্যাচ। নিজের বলে নিজেই সেই ক্যাচটি ধরলেন মোস্তাফিজ।

ব্যাটসম্যান হিসেবে এ সময় মাঠে নামেন গুলবাদিন নাইব। ৪ বলে প্রয়োজন ৬ রান। তৃতীয় বলটি পুল করতে গিয়ে পায়ে লাগিয়ে একটি রান নেন সিনওয়ারি। শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচের আবেদন করলেও আম্পায়ার তাতে সাড়া দেননি। চতুর্থ বলে দারুণ এক অব কাটারে কোনো রানই দিলেন না মোস্তাফিজ। পঞ্চম বলে একটি লেগ বাই রান নিলেন গুলবাদিন নাইব।

শেষ বলে প্রয়োজন ৪ রান। ব্যাটসম্যান সামিউল্লাহ সেনওয়ারি। শর্ট বল করে এই বলে মোস্তাফিজ আর রানই দিলেন না। শিনওয়ারি ব্যাটেই বল লাগাতে পারলেন না। বরং, তার হাত থেকে ব্যাটই ছুটে চলে গেলো। ৩ রানের অবিশ্বাস্য এক জয় পেয়ে যায় বাংলাদেশ।
২৫০ রানের চ্যালেঞ্জ। বোলাররা ভালো করতে না পারলে এই চ্যালেঞ্জটা ধরে রাখাও খুব কঠিন। যদিও এই উইকেটে ২৫০ রান জয়ের জন্য ভালোই যথেষ্ট। তবুও শুরুতে পরপর দুই উইকেট পড়ার পরও আফগান ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদ এবং হাশমতউল্লাহ শহিদি ৬৩ রানের দারুণ এক জুটি গড়েন।

সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো মোহাম্মদ শাহজাদ হাফ সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশের হাত থেকে ম্যাচটা ধীরে ধীরে বের করে আনতে শুরু করে দিয়েছিলেন। মাশরাফি নিজে, নাজমুল ইসলাম অপু, মোস্তাফিজ, মেহেদী হাসান মিরাজ কিংবা সাকিব আল হাসান- কেউই পারছিলেন না শাহজাদকে একটু ফাঁদে ফেলতে।

শেষ পর্যন্ত মাশরাফি দ্বারস্ত হলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। অব ব্রেক বোলার হলেও তিনি নিয়মিত নন। মাঝে-মধ্যে প্রয়োজন হলে অকেশনাল বোলার হিসেবে তাকে ব্যবহার করেন অধিনায়ক। এবারও মাশরাফি আস্থা রাখলেন তার ওপর। সেই আস্থার প্রতিদান তিনি দিলেন প্রথম ওভারেই, ভয়ঙ্কর শাহজাদকে ফিরিয়ে দিয়ে।

২৫তম ওভারের ৪র্থ বলটি তিনি কিছুটা সুইং করিয়েছিলেন। শাহজাদ ব্যাকফুটে গিয়ে জায়গা তৈরি করে চেষ্টা করেন খেলার। কিন্তু মিস করলেন তিনি। বল গিয়ে আঘাত করলো সোজা উইকেটে। ৫৩ রান করে আউট হয়ে গেলেন মোহাম্মদ শাহজাদ। দলীয় রান তখন ৮৯।

এর আগে দুর্দান্ত এক ফিল্ডিং করে রহমত শাহকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। নাজমুল ইসলাম অপুর বলে খেলেছিলেন মোহাম্মদ শাহজাদ। নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে ছিলেন রহমত শাহ। রান নেয়ার জন্য দৌড় দেন তারা। সাকিব ঝাঁপিয়ে পড়ে এক হাত দিয়ে বল ফেরান। উল্টে অন্য হাত দিয়ে বলটি থ্রো করেন। সরাসরি হিটে রানআউট হয়ে গেলেন রহমত।

তার আগে ইনিংসের পঞ্চম ওভারে বল করতে এসেই প্রথম বলে উইকেটের দেখা পান মোস্তাফিজুর রহমান। তার বলে ইহসানউল্লাহ ক্যাচ তুলে দেন নাজমুল ইসলাম অপুর হাতে। ১১ বলে ৮ রান করে ফিরে যান তিনি।

তৃতীয় উইকেট জুটিতে মোহাম্মদ শাহজাদ এবং হাশমতউল্লাহ শহিদির জুটি ভাঙার পর আসগর আফগানকে নিয়ে আরও একটি বড় জুটি গড়েন শহিদি। যে জুটির ওপর ভর করে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের ওপর চেপে বসে আফগানরা।

৮৮ রানের জুটি গড়ে যখন এই দুই ব্যাটসম্যানও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল, তখন ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন মাশরাফি। তার বলেই শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন ৩৯ রানে থাকা আসগার আফগান। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সেই ক্যাচ ধরে বাংলাদেশকে খেলায় ধরে রাখেন।

অন্য প্রান্তে হাশমতউল্লাহ শহিদি কিন্তু সত্যিকারার্থেই বাংলাদেশের জন্য বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ৭১ রান করে তিনি ধীরে ধীরে বাংলাদেশের হাত থেকে ম্যাচটা বের করে নিয়ে আসছিলেন। এমন সময় আবারও ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন মাশরাফি। এবার তার বলে বোল্ড হয়ে গেলেন শহিদি।

শেষ মুহূর্তে মোহাম্মদ নবি ম্যাচটা কেড়ে নিতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তাকে ৪৯তম ওভারে ফিরিয়ে দিলেন সাকিব। শেষ ওভারে মোস্তাফিজের অবিশ্বাস্য বোলিংয়ে দারুণ জয় নিয়ে মাঠ ছাড়লো বাংলাদেশ। মাশরাফি আর মোস্তাফিজ নিলেন ২টি করে উইকেট। ১টি করে নিলেন সাকিব আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। একটি হলো রানআউট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ২৪৯/৭, ৫০ ওভার (মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৭৪, ইমরুল কায়েস ৭২, লিটন দাস ৪১, মুশফিকুর রহীম ৩৩, মাশরাফি ১০, শান্ত ৬, মিরাজ ৫, মিঠুন ১, সাকিব ০; আফতাব আলম ৩/৫৪, মুজিব-উর রহমান ১/৩৫, রশিদ খান ১/৪৬)।

আফগানিস্তান : ২৪৬/৭, ৫০ ওভার (হাশমতউল্লাহ শহদি ৭১, মোহাম্মদ শাহজাদ ৫৩, আসগর আফগান ৩৯, মোহাম্মদ নবি ৩৮, সামিউল্লাহ সেনওয়ারি ২৩, ইহসানউল্লাহ ৮, রশিদ খান ৫; মোস্তাফিজ ২/৪৪, মাশরাফি ২/৬২, মাহমুদউল্লাহ ১/১৭, সাকিব ১/৫৫)।

ফল : বাংলাদেশ ৩ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।